লাইফস্টাইল ডেস্ক: আপনি বাসে চড়বেন। কিন্তু ভাড়া দিতে হবে না! ট্রেনে ঘুরবেন একেবারে ফ্রি! এই তথ্য শুনেই চোখ কপালে উঠল? কিন্তু এটি এখন বাস্তব। তেল বা গ্যাসের দাম বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় একেবারে বিনামূল্যে চড়া যাবে বাসে বা সরকারনির্ধারিত পরিবহনে।
কোথাও এই সুবিধা শুধু স্থানীয়দের জন্য আবার কোথাও পর্যটকরাও বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবহারের সুযোগ পায়। স্বপ্নের মতো শোনালেও লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও এস্তোনিয়ায় এটি এখন বাস্তব। শহরের মানুষকে গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে এটি সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে কমেছে পরিবেশ দূষণ, অন্যদিকে যানজট।
বিনামূল্যে যেসব দেশ ও শহরে গণপরিবহন ব্যবহার করা যায়, সেগুলোর মধ্যে আছে-
লুক্সেমবার্গ: বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে লুক্সেমবার্গ দেশজুড়ে সব ধরনের গণপরিবহন একেবারে ফ্রি করে দেয় সবার জন্য। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর করে দেশটি। সেখানে শুধু নাগরিকরাই নন; পর্যটকসহ সবাই বাস, ট্রেন ও ট্রামে বিনা মূল্যে চলাচল করতে পারেন। দেশটির মূল লক্ষ্য ছিল, যানজট ও পরিবেশদূষণ কমানো এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা।
শ্যামবলি, কানাডা: কানাডার মন্ট্রিয়লের দক্ষিণ অংশের শহর শ্যামবলি। শহরটিতে ২০১২ সালে ফ্রি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু করা হয়। শ্যামবলি ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি শহর এই উদ্যোগে অংশ নেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বাসে চলাচল করতে পারে সেসব শহরে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল, রাস্তার যানজট এবং কার্বন নিঃসরণ কমানো। এতে অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবহার শুরু করে। ফলে শহরগুলোতে কার্বন নিঃসরণ ও যানজট কমে যায় ব্যাপক ভাবে।
তালিন, এস্তোনিয়া: এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিন ২০১৩ সালে শহরের নিবন্ধিত নাগরিকদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করে। তবে পর্যটক বা অন্য শহরের লোকেরা এই সুবিধা পায় না। এতে অনেকে তালিনে রেজিস্ট্রেশনের পর বসবাস শুরু করে। ফলে শহরের আয় বেড়ে যায়। সরকার জানিয়েছে, এই উদ্যোগ থেকে তারা বছরে অতিরিক্ত প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ইউরো আয় করে।
আভেস্তা, সুইডেন: সুইডেনের ছোট শহর আভেস্তা প্রায় এক দশক ধরে বাসিন্দাদের জন্য গণপরিবহন একেবারে ফ্রি করে দিয়েছে। নাগরিক, পর্যটক কিংবা অন্য শহরের অধিবাসী সবাই এ সুবিধা পায়। আভেস্তা শহর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য ছিল, পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। এই পদক্ষেপের ফলে বাসে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় ২০০ শতাংশ।
ডিউসবারি, যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজের ডিউসবারি শহরে ২০০৯ সাল থেকে চালু হয়েছে ‘ফ্রি টাউন বাস’ নামের ফ্রি বাস সার্ভিস। এটি শহরের প্রধান বাজার, হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে চলাচল করে। সাধারণত এটি স্থানীয় নাগরিকদের জন্য হলেও পর্যটকেরাও চাইলে এই বাস সার্ভিস ব্যবহার করতে পারে।
পার্থ, অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাস ও ট্রেনের ভাড়া সম্পূর্ণ ফ্রি। যাত্রার শুরু ও শেষ যদি নির্ধারিত ফ্রি ট্রানজিট জোনের মধ্যে হয়, তাহলে যাত্রীদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না।
ক্লেমসন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা রাজ্যের ক্লেমসন শহরে ১৯৯৬ সাল থেকে চালু আছে ফ্রি বাস সার্ভিস। এ বাসগুলো ক্লেমসন ইউনিভার্সিটি, আশপাশের শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের সেবা দেয়। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে এই সেবা পরিচালনা করে। এটি শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষের চলাফেরায় বড় ভূমিকা রাখছে।
সামোকোভ, বুলগেরিয়া: সামোকোভ শহরে প্রথমে ২০০৬ সালে প্রবীণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস চালু করা হয়। পরে ২০০৮ সালে এটি শহরের সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শহর কর্তৃপক্ষ নিজেই পুরো খরচ বহন করে।
মারিয়েহ্যাম, ফিনল্যান্ড: মারিয়েহ্যাম হলো ফিনল্যান্ডের আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আলান্ডের রাজধানী। সেখানে স্থানীয় সরকার ও পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে ফ্রি বাস সার্ভিস পরিচালনা করে। শুধু স্থানীয়রাই নয়, পর্যটকেরাও এই সেবা নিতে পারে। ২০০০ সাল থেকে এই ব্যবস্থা চালু আছে শহরটিতে।
ওই উদ্যোগের কারণে শহরগুলোয় কমেছে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা; যা শহরের পরিবেশ ও নাগরিকদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে। সূত্র: গার্ডিয়ান, টাইমস নাও ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ