বিশেষ সংবাদদাতা : ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যাতে অর্থনৈতিক সংকটে না পড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন। জঙ্গি ইস্যুতে সতর্ক থাকাসহ সভায় ১১টি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভা ও সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা দুটিতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য জানান। তিনি জানান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয়, আমদানি ইস্যুতে ব্যয় সংকোচন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি ঠিকভাবে করা, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, তথ্য-প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আয়, রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ, জঙ্গি ইস্যুতে সতর্ক থাকা, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ, ভূমির ই-রেজিট্রেশন ইস্যু এবং সুশাসনের উপর জোর দেয়ার উপর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে, আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে দেশ না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্কবার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে, সেভাবে মানুষকে সঙ্গে নিজে কাজ করতে হবে।
উন্নত দেশগুলোর রিজার্ভের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের কারণে দু-একটি দেশ হয়তো খুব লাভবান, কিন্তু বেশিরভাগ দেশ একেবারে…যারা উন্নত দেশ তারাও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এখন ব্যয় সীমিত করা দরকার, সাশ্রয়ী হওয়া দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রিজার্ভ যেটা হচ্ছে আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের পাঁচ-ছয় মাসের হিসাব আছে। তারপরও এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে। সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের নিজেদেরও সাশ্রয়ী হওয়া এই কারণে দরকার, আবার আমি বলছি যে, আমরা ভবিষ্যতে যাতে সমস্যায় না পড়ি। কাজেই এখন থেকে আমাদের সেই ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে দরকার। এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিচার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সব পরিকল্পনা বা প্রকল্প বাছাই করতে হবে। বেছে নিয়ে এবং কোনগুলো দ্রুত শেষ করা যায়, আমরা সেগুলো আগে শেষ করে নতুনটি যাতে ধরতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাদক-জঙ্গিবাদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটি ঘটনা ঘটেছিল হলি আর্টিজানে। আমরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটি নিয়ন্ত্রণ করি। তারপর থেকে আর বাংলাদেশে এই রকম কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়নি। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের ওপর অনেকেরই নানা রকম প্রভাব আছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এসব বিষয়ে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক-জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের যুবসমাজ যেন দূরে থাকে, সেইদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া একান্তভাবে দরকার।
ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি জানানোর নির্দেশ
ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার আলোচনার প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ব্যাংক খাত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইনডাইরেক্ট আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনকে। চারদিকে এতো কথাবার্তা উঠছে, আসল সিনারিওটা কী সেটা শিগগির দেখে অবহিত করবেন আমাদের।’ ইসলামী ব্যাংক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ওভারঅল, আরও কয়েকটা ব্যাংকের কথা তো…ওটা শোনার পর আমি ইন্টারনেটে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা ব্যাংকের ব্যাপারে ইউটিউবে বিভিন্ন রকম…বাইরে থেকে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তবুও এটাকে অবহেলা করা হয়নি। বলা হয়েছে, এগুলোকে দেখে সিনারিওটা আমাদের জানাও।’ এছাড়া সভায় জঙ্গি ইস্যুতে সচিবদের সতর্ক থাকারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গিরা যেন শেল্টার নিতে না পারে
জঙ্গিরা যেন কোনোভাবেই কারো কোনো শেল্টার (আশ্রয়) বা সহায়তা কিংবা কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে না পারে- সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোববার (২৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ করে জঙ্গির বিষয়ে একটু বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন পুলিশ কিছু জঙ্গিকে (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ডিটেক্ট করেছে এবং তার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি কিছু পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তাদের ট্র্যাক করে ধরা এবং জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া, তারা যেন কোনোভাবেই কারো কোনো শেল্টার বা সহায়তা বা কোনো আর্থিক বেনিফিট নিতে না পারে- সেদিকে সবাইকে একটু দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’
জঙ্গি ছিনতাইয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভায় গত বুধবার আলোচনা করে অনেক ইনিশিয়েটিভ নেওয়া হয়েছে। এখনও ধরা না পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেগুলো তো আর ওপেনলি আলাপ করা যাবে না। বুধবার আমরা সব সংস্থাসহ বসেছিলাম, কীভাবে কী করা যায়। অনেক ইনফরমেশন তারা অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
বিপদে পড়িনি, সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
বিপদে পড়িনি
জনপ্রিয় সংবাদ