ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বিনিয়োগ বাড়ালেও মহাকাশে রকেট পাঠানোয় পিছিয়ে ইউরোপ

  • আপডেট সময় : ০৫:০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

বিনিয়োগ বাড়ালেও মহাকাশে রকেট পাঠানোয় পিছিয়ে ইউরোপ

প্রত্যাশা ডেস্ক: ফরাসি গায়ানাতে আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ইউরোপিয়ান স্পেস সেন্টার। এই অর্থ সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড আরো শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যকরণে ব্যয় হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এমন উদ্যোগ।

দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানাতে ইউরোপের একমাত্র স্পেসপোর্ট অবস্থিত। ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণাধীন এই অঞ্চল থেকে প্রতি বছর অল্প কিছু রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে চলেছে। কেন্দ্রটির কর্মকাণ্ডে গতি আনতে আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এখানে ২০২৬ সাল নাগাদ একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে।

ফরাসি গায়ানায় মহাকাশ কেন্দ্রের পরিচালক ফিলিপ লিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আগামী বছর ৯টি এবং দীর্ঘমেয়াদে বছরে ১৫টি বা তারও বেশি উড্ডয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমরা নতুন একটি সাইট নির্মাণ করছি যেখানে মাইক্রো-লঞ্চার থাকবে। এসব বেসরকারি রকেটের ক্ষমতা কম। তবে প্রতিবছর সেগুলো বড় সংখ্যায় মহাকাশে পাঠানো সম্ভব।

লিয়ে মনে করেন, এই সম্প্রসারণ প্রয়োজনীয়। সেটা শুধু এজন্য নয় যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করায় মস্কোর সঙ্গে মহাকাশ সহায়তা স্থবির হয়ে আছে। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মতো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় সবকিছু উপগ্রহের মাধ্যমে করা হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ু সমীক্ষাসহ নানা কিছু করা হচ্ছে। ফলে মহাকাশ এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে। আমাদের সেখানে নিজস্ব প্রবেশ পথ দরকার। একটি মহাকাশ বন্দর সেই লক্ষ্য পূরণ করে।

বছরে উড্ডয়নের সংখ্যা বাড়লে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপ্রোপালশনের আরো রকেট মোটর সরবরাহ করতে হবে। কর্মী সংখ্যা তাই ৩৯ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউরোপ্রোপালশনের ডেপুটি প্রোডাকশন ম্যানেজার ক্যালোজেরো সাভোকা বলেন, আমরা দুটি প্রোডাকশন লাইনে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবো এবং আমাদের কর্মীদের আরো প্রশিক্ষণ দেবো। টার্নওভার ধরে রাখা আমাদের লক্ষ্য। আমরা মোটর প্রতি খরচ কমাবো যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরোপের রকেট প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকে।

মহাকাশ কেন্দ্রে ব্যবসা বাড়লে স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে। ফরাসি গায়ানার জিডিপির ১৫ শতাংশের উৎস মহাকাশ বন্দরটি। ভবিষ্যতে এক হাজার ৮০০ কর্মী মহাকাশকেন্দ্রে কাজ করবেন। বর্তমানে সংখ্যাটি দেড় হাজার।

তবে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নতুন নির্মাণ কাজের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু করতে হবে। নভোস্পেসের প্রধান নির্বাহী প্যাকুম রিভিউম বলেন, স্পেসএক্স বছরে অন্তত ১০০ রকেট উৎক্ষেপণ করে। আর সেখানে ইউরোপ বছরে দশটি রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। এটা তুলনা করার মতোও নয়। এবং অধিকাংশ মাইক্রো-লঞ্চার এখনও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সেগুলো প্রস্তুত নয়।

তাছাড়া মহাকাশকেন্দ্রের আধুনিকায়ন শুধু অর্থনৈতিক কারণেই প্রয়োজন নয়। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মিশেল ডেবরেইন বলেন, বর্তমানে অনেক প্রতিযোগী রয়েছে। যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব নীতি, রাশিয়া আর এখান থেকে উৎক্ষেপণ করছে না। ফলে আমাদের নিজস্ব মহাকাশবন্দর এবং কৌশল প্রয়োজন। তারা ছোঁয়ার এই বেড়ে চলা বৈশ্বিক প্রবণতায় ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যাবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিনিয়োগ বাড়ালেও মহাকাশে রকেট পাঠানোয় পিছিয়ে ইউরোপ

আপডেট সময় : ০৫:০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ফরাসি গায়ানাতে আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ইউরোপিয়ান স্পেস সেন্টার। এই অর্থ সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড আরো শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যকরণে ব্যয় হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এমন উদ্যোগ।

দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানাতে ইউরোপের একমাত্র স্পেসপোর্ট অবস্থিত। ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণাধীন এই অঞ্চল থেকে প্রতি বছর অল্প কিছু রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে চলেছে। কেন্দ্রটির কর্মকাণ্ডে গতি আনতে আড়াইশ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এখানে ২০২৬ সাল নাগাদ একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে।

ফরাসি গায়ানায় মহাকাশ কেন্দ্রের পরিচালক ফিলিপ লিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আগামী বছর ৯টি এবং দীর্ঘমেয়াদে বছরে ১৫টি বা তারও বেশি উড্ডয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমরা নতুন একটি সাইট নির্মাণ করছি যেখানে মাইক্রো-লঞ্চার থাকবে। এসব বেসরকারি রকেটের ক্ষমতা কম। তবে প্রতিবছর সেগুলো বড় সংখ্যায় মহাকাশে পাঠানো সম্ভব।

লিয়ে মনে করেন, এই সম্প্রসারণ প্রয়োজনীয়। সেটা শুধু এজন্য নয় যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করায় মস্কোর সঙ্গে মহাকাশ সহায়তা স্থবির হয়ে আছে। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মতো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় সবকিছু উপগ্রহের মাধ্যমে করা হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জলবায়ু সমীক্ষাসহ নানা কিছু করা হচ্ছে। ফলে মহাকাশ এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে। আমাদের সেখানে নিজস্ব প্রবেশ পথ দরকার। একটি মহাকাশ বন্দর সেই লক্ষ্য পূরণ করে।

বছরে উড্ডয়নের সংখ্যা বাড়লে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপ্রোপালশনের আরো রকেট মোটর সরবরাহ করতে হবে। কর্মী সংখ্যা তাই ৩৯ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইউরোপ্রোপালশনের ডেপুটি প্রোডাকশন ম্যানেজার ক্যালোজেরো সাভোকা বলেন, আমরা দুটি প্রোডাকশন লাইনে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবো এবং আমাদের কর্মীদের আরো প্রশিক্ষণ দেবো। টার্নওভার ধরে রাখা আমাদের লক্ষ্য। আমরা মোটর প্রতি খরচ কমাবো যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরোপের রকেট প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকে।

মহাকাশ কেন্দ্রে ব্যবসা বাড়লে স্থানীয় অর্থনীতিও উপকৃত হবে। ফরাসি গায়ানার জিডিপির ১৫ শতাংশের উৎস মহাকাশ বন্দরটি। ভবিষ্যতে এক হাজার ৮০০ কর্মী মহাকাশকেন্দ্রে কাজ করবেন। বর্তমানে সংখ্যাটি দেড় হাজার।

তবে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নতুন নির্মাণ কাজের পাশাপাশি আরো অনেক কিছু করতে হবে। নভোস্পেসের প্রধান নির্বাহী প্যাকুম রিভিউম বলেন, স্পেসএক্স বছরে অন্তত ১০০ রকেট উৎক্ষেপণ করে। আর সেখানে ইউরোপ বছরে দশটি রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। এটা তুলনা করার মতোও নয়। এবং অধিকাংশ মাইক্রো-লঞ্চার এখনও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সেগুলো প্রস্তুত নয়।

তাছাড়া মহাকাশকেন্দ্রের আধুনিকায়ন শুধু অর্থনৈতিক কারণেই প্রয়োজন নয়। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মিশেল ডেবরেইন বলেন, বর্তমানে অনেক প্রতিযোগী রয়েছে। যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব নীতি, রাশিয়া আর এখান থেকে উৎক্ষেপণ করছে না। ফলে আমাদের নিজস্ব মহাকাশবন্দর এবং কৌশল প্রয়োজন। তারা ছোঁয়ার এই বেড়ে চলা বৈশ্বিক প্রবণতায় ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার বদলে প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যাবে।