ঢাকা ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’

বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা জামায়াত আমিরের

  • আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চেয়েছেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার (২৭ মে) একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আমির বলেন, ‘দল হিসেবে দাবি করি না, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। প্রতিটি কর্মী বা দলের কারণে যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ ‘আমাদের কোনো আচরণে, কোনো পারফরম্যান্সে কষ্ট পেয়ে থাকলেও ক্ষমা করে দেবেন।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর দলটির আমির এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন।

কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল নেতা ঘরে ঘরে জন্মায় না, প্রতিদিন জন্মায় না। এটা আল্লাহর দান। একটা দেশ এবং দলকে নেতৃত্বশূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগেও সেই সাজা বহাল ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গ ধরে জামায়াত আমির বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে। সেই সত্যটাই আল্লাহ আজকে আমাদেরকে দেখালেন।

শফিকুর রহমান বলেন, এই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারি যে ল আছে, তা ফলো করা হয়নি, আবার ডোমেস্টিক কাস্টমারি যে ল আছে, সেটাও ফলো করা হয়নি। আমাদের দেশের এভিডেন্স যে ল আছে, সেটা মোটেই ফলো করা হয়নি। সেদিন সংবিধান কোনো বিষয়ই ছিল না, আইন কোনো বিষয়ই ছিল না। যাদের ইশরায় এই কোর্ট পরিচালনা করতেন, তাদের ইচ্ছাই ছিল রায়। সেটা বৈধ হোক অথবা অবৈধ হোক। এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের এই মামলার একটা মামলা ব্রিটেনে পরিচালিত হয়েছে। ব্রিটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে, এই মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন ছিলো জাস্ট জেনোসাইড অব দ্যা জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। এটা ওই সময়ে বাংলাদেশের কোর্ট বলেনি। আলহামদুলিল্লাহ আজকে বাংলাদেশের কোর্ট তাই বলেছেন, তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা সমস্ত নেতৃবৃন্দ, যাদেরকে খুন করা হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে তাদেরকে আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

এ সময় মুক্তিযদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আজম, সাবেক নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ, সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আবদুল খালেক মণ্ডল, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান এবং শূরা সদস্য মীর কাশেম আলীকে ‘গভীর শ্রদ্ধার সাথে’ স্মরণ করেন দলের বর্তমান আমির। তিনি বলেন, আপনাদেরকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না, আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করব ইনশাল্লাহ।

শফিকুর রহমান বলেন, জেলে সবাই ছিলেন, আমিও ছিলাম। সেখানে সেজদায় গিয়ে অনেকগুলো দোয়া করতাম। একটা ছিল, আল্লাহ তোমার গোলাম এটিএম আজহারুল ইসলামকে তুমি বাঁচিয়ে রেখেছ। শেষমেষ তাকে দিয়ে সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করে দিও। আল্লাহু আকবর। আল্লাহতালা এই সত্যই আজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখন দোয়া করি, তুমি তোমার গোলামের হায়াত বৃদ্ধি করে দাও, তাকে সুস্থতার পূর্ণ নিয়ামত দান কর। এই ময়দানে ফিরে এসে তিনি যেন জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তার জন্য তাকে কবুল কর।

বিগত সরকারের সময়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারের ওপর ‘অবর্ণীয় অত্যাচার-নিপীড়ন’ চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধ নিইনি, আপনারা দেখেছেন, কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাইব। এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে একটি দলের নেতৃত্বকে হত্যা করা।

বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা: শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না, দল হিসেবেও আমরা কেউ দাবি করি না ভুলের ঊর্ধ্বে। এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মী-সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে কোনো শর্ত নাই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বলব, আমাদের আবেদনগুলো, কথাগুলো, ক্ষোভ নয়, অভিমান নয়, আমাদের আবেদনগুলো দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেবেন। আল্লাহ এই জাতির সহায় হোন।

সুযোগ এলে আমরা প্রতিশোধের অবসান ঘটাব: শফিকুর রহমান বলেন, জাতির অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমরা কথা দিচ্ছি, মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরে আসে, আমরা ইনশাল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাবো, বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ইনশাল্লাহ ঘটাবো এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা সবটুকু উজাড় করে দেবো। তিনি বলেন, পাশাপাশি আমরা চাইব, আমাদের সমাজ দুর্নীতি মুক্ত হোক, দুঃশাসন মুক্ত হোক, অপরাধ মুক্ত হোক, বৈষম্য মুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক, সেই সমাজ গঠনে আপনাদের সাহচার্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন দোয়া চাই।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, আবদুল হালিম, এহসান মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম, মতিউর রহমান আখন্দ, মোবারক হোসাইন, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সেলিমের ছেলে তাসনীম আজহার সুমনসহ কর্ম পরিষদের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: গুরুত্ব পাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো ও বিনিয়োগ

যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’

বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা জামায়াত আমিরের

আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চেয়েছেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার (২৭ মে) একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আমির বলেন, ‘দল হিসেবে দাবি করি না, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। প্রতিটি কর্মী বা দলের কারণে যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ ‘আমাদের কোনো আচরণে, কোনো পারফরম্যান্সে কষ্ট পেয়ে থাকলেও ক্ষমা করে দেবেন।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর দলটির আমির এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন।

কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা। তিনি বলেন, দায়িত্বশীল নেতা ঘরে ঘরে জন্মায় না, প্রতিদিন জন্মায় না। এটা আল্লাহর দান। একটা দেশ এবং দলকে নেতৃত্বশূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তি শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগেও সেই সাজা বহাল ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গ ধরে জামায়াত আমির বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে। সেই সত্যটাই আল্লাহ আজকে আমাদেরকে দেখালেন।

শফিকুর রহমান বলেন, এই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারি যে ল আছে, তা ফলো করা হয়নি, আবার ডোমেস্টিক কাস্টমারি যে ল আছে, সেটাও ফলো করা হয়নি। আমাদের দেশের এভিডেন্স যে ল আছে, সেটা মোটেই ফলো করা হয়নি। সেদিন সংবিধান কোনো বিষয়ই ছিল না, আইন কোনো বিষয়ই ছিল না। যাদের ইশরায় এই কোর্ট পরিচালনা করতেন, তাদের ইচ্ছাই ছিল রায়। সেটা বৈধ হোক অথবা অবৈধ হোক। এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের এই মামলার একটা মামলা ব্রিটেনে পরিচালিত হয়েছে। ব্রিটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে, এই মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন ছিলো জাস্ট জেনোসাইড অব দ্যা জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। এটা ওই সময়ে বাংলাদেশের কোর্ট বলেনি। আলহামদুলিল্লাহ আজকে বাংলাদেশের কোর্ট তাই বলেছেন, তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা সমস্ত নেতৃবৃন্দ, যাদেরকে খুন করা হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে তাদেরকে আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

এ সময় মুক্তিযদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আজম, সাবেক নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ, সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আবদুল খালেক মণ্ডল, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান এবং শূরা সদস্য মীর কাশেম আলীকে ‘গভীর শ্রদ্ধার সাথে’ স্মরণ করেন দলের বর্তমান আমির। তিনি বলেন, আপনাদেরকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না, আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করব ইনশাল্লাহ।

শফিকুর রহমান বলেন, জেলে সবাই ছিলেন, আমিও ছিলাম। সেখানে সেজদায় গিয়ে অনেকগুলো দোয়া করতাম। একটা ছিল, আল্লাহ তোমার গোলাম এটিএম আজহারুল ইসলামকে তুমি বাঁচিয়ে রেখেছ। শেষমেষ তাকে দিয়ে সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করে দিও। আল্লাহু আকবর। আল্লাহতালা এই সত্যই আজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখন দোয়া করি, তুমি তোমার গোলামের হায়াত বৃদ্ধি করে দাও, তাকে সুস্থতার পূর্ণ নিয়ামত দান কর। এই ময়দানে ফিরে এসে তিনি যেন জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তার জন্য তাকে কবুল কর।

বিগত সরকারের সময়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারের ওপর ‘অবর্ণীয় অত্যাচার-নিপীড়ন’ চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধ নিইনি, আপনারা দেখেছেন, কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাইব। এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে একটি দলের নেতৃত্বকে হত্যা করা।

বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা: শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না, দল হিসেবেও আমরা কেউ দাবি করি না ভুলের ঊর্ধ্বে। এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মী-সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে কোনো শর্ত নাই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বলব, আমাদের আবেদনগুলো, কথাগুলো, ক্ষোভ নয়, অভিমান নয়, আমাদের আবেদনগুলো দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেবেন। আল্লাহ এই জাতির সহায় হোন।

সুযোগ এলে আমরা প্রতিশোধের অবসান ঘটাব: শফিকুর রহমান বলেন, জাতির অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমরা কথা দিচ্ছি, মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরে আসে, আমরা ইনশাল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাবো, বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ইনশাল্লাহ ঘটাবো এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা সবটুকু উজাড় করে দেবো। তিনি বলেন, পাশাপাশি আমরা চাইব, আমাদের সমাজ দুর্নীতি মুক্ত হোক, দুঃশাসন মুক্ত হোক, অপরাধ মুক্ত হোক, বৈষম্য মুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক, সেই সমাজ গঠনে আপনাদের সাহচার্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন দোয়া চাই।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, আবদুল হালিম, এহসান মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম, মতিউর রহমান আখন্দ, মোবারক হোসাইন, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সেলিমের ছেলে তাসনীম আজহার সুমনসহ কর্ম পরিষদের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।