নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে লাগাতার ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। চারদিনের আংশিক লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল সোমবার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় সংখ্যাটা অনেক কম।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে পিকআপ ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে বাড়ির পথে ছুটছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
করোনার সংক্রমণ রোধে সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে সারা দেশে রিকশা ছাড়া যাত্রী পরিবহনে আর কোনো বাহন চলবে না। কিন্তু সরকারঘোষিত এমন সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অনেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার আমিনবাজার এলাকায় উত্তরাঞ্চলমুখী অনেক মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ছাড়াও মোটরসাইকেল করেও অনেককে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। তবে এই সংখ্যাটা গত দুই দিনের তুলনায় অনেক কম। পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধা দিতে দেখা গেলেও মানুষ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাড়ি যাচ্ছেন। আমিনবাজার এলাকায় ব্যাগ হাতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন শামসুল আলম। ঢাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন তিনি। লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় উপায় না পেয়ে গ্রামের বাড়ির গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। ঘণ্টাখানেক সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। দুএকটা পিকআপ পেলেও দাম বেশি চাওয়ায় সেগুলোতে যাননি তিনি।
শামসুল বলেন, ‘লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় বাড়ি যাইতাছি। এখানে থাকলে কামাই না হলেও খরচ ঠিকই আছে। বাড়িতও ট্যাকা দিতে পারমু না। তাই কষ্ট করি হলেও বাড়িত যাচ্ছি। বাড়িত যায়া (গিয়ে) কামলা দিলেও কামাই করা যাবে। দেহি ঈদের পর সব ঠিক হইলে আবার আসুম। থাকা-খাওয়ায় ঝামেলা হইতাছে। হুদাই ঢাকা থাইকা কি করমু।’
রাহেনুল নামে সেখানে থাকা আরেকজন বলেন, সরকার কয়েকদিন লকডাউনের কথা বললেও এই সময় আরও বাড়তে পারে। ঈদের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাও হতে পারে এমন ধারণা থেকে তিনিও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। রাহেনুল জানান, গতকালও বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। গাড়ি না পেয়ে যেতে পারিনি। আজ আবারও বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছি। ভেঙে ভেঙে হলেও বাড়ি যেতে চান তিনি। শামসুল আলমের মতো আরও অনেককে ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে লকডাউনের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথেও ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে পদ্মা পার হচ্ছেন তারা। তবে গত কয়েকদিনের চেয়ে সোমবার সকাল থেকে যাত্রীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম থাকলেও গাড়ির আধিক্য রয়েছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘাটজুড়ে পারাপারের অপেক্ষায় দেখা গেছে শতশত ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ির সারি। বিআইডাব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, শিমুলিয়া-বাংলবাজার নৌরুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে ৫০০ এর বেশি গাড়ি। অন্যদিকের ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সুমন দেব জানান, শিমুলিয়া ঘাটে ঢোকার সময় ও পল্টনে দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। যাতে গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে ফেরিতে উঠতে পারে। এ ছাড়া শিমুলিয়া ঘাটে ঢোকার আগে যাত্রী ভিড় সামলাতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নিমতলা চেকপোষ্ট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে যাত্রী ও গাড়ি।
এদিকে, পহেলা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় যাত্রী চাপ বেড়েছে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও। এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট এলাকাতেও বাড়িফেরা মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জিল্লুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সরকার সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। পাটুরিয়া ও আরিচাঘাট এলাকায় যাত্রী বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ