প্রযুক্তি ডেস্ক : জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। অথচ, সৌর এবং বায়ু বিদ্যুত সংরক্ষণ যথেষ্ট কার্যকর এবং টেকসই না হওয়ায় সেগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আশার কথা শোনাচ্ছে জিংক ব্যাটারির নতুন এক প্রযুক্তি। নতুন এই প্রযুক্তির কথা বলছেন ফ্রানহফার আইজেডএম-এর একদল জার্মান গবেষক, যা বিদ্যুৎ সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন করবে হাইড্রোজেনও। এই জিংক-হাইড্রোজেন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গবেষণা সংস্থাটি যুক্ত হয়েছে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। দামে সস্তা, পুরোপুরি নবায়নযোগ্য এবং ইস্পাত, জিংক এবং পটাশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইডের মতো সহজলভ্য উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে লিথিয়াম আয়নের পরিবর্তে জিংকের ব্যাটারি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গবেষক দলটি। তারা তড়িৎ বিশ্লেষক হিসাবে ক্ষারীয় পানি ব্যবহার করার পরেই নতুন প্রযুক্তির জন্ম হয়। “চার্জ দেওয়ার সময় পানির অক্সিজেন জারিত হয়ে জিংক অক্সাইডকে বিজারিত করে। এর উল্টোটা ঘটে চার্জ ফুরানোর সময়। তখন পানি থেকে হাইড্রোজেন বেরোয়।”- ব্যাটারিটির রাসায়নিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন ফ্রাউনহফার আইজেডএমের ড. রবার্ট হান। “এটি সাধারণ ব্যাটারি এবং হাইড্রোজেন উৎসের এক অনন্য মেলবন্ধন।”
ব্যাটারিটির দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা যাচাই করতে পরীক্ষাগারে একটিকে পরীক্ষা করে দেখেছে দলটি যা প্রমাণ করেছে তাদের প্রযুক্তিটি ঠিকঠাক মতো কাজ করে। এ বছরের শেষ নাগাদ ১২ ভোল্ট ও ৫০ অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার ক্ষমতার আটটি ব্যাটারিকে একত্রে সংযুক্ত করে পরীক্ষা করে দেখার কথা বলেছে দলটি। তাদের হিসাব অনুযায়ী “প্রাথমিক পরীক্ষায় বিদ্যুৎ সংরক্ষণে সক্ষমতা ছিলো ৫০ শতাংশ, এবং হাইড্রোজেন উৎপাদনের বেলায় তার হার ৮০ শতাংশ-সঙ্গে প্রত্যাশিত মেয়াদ ছিল ১০ বছর। বাণিজ্যিক পর্যায়ে বৈদ্যুতিকভাবে রিচার্জযোগ্য হাইড্রোজেন সংরক্ষণের সিস্টেম বানানোই তাদের লক্ষ্য, যাকে দুইভাবে ব্যবহার করা যাবে। যেখানে ধাতব জিংক হিসাবে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা হবে এবং তা থেকে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ শক্তি ও হাইড্রোজেন রূপান্তর করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে তারা বলছেন জিংক ব্যাটারির সল্প দামের কারণে বাণিজ্যিকভাবে নিরাপদ বিদ্যুতের সংরক্ষণে আকর্ষণীয় বিকল্প হবে প্রযুক্তিটি। ২০২৫ সাল নাগাদ এই জিংক-হাইড্রোজেন প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, যার লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত হাইড্রোজেনের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ উৎপাদিত হয় পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এ হাইড্রোজেনের জন্য নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করে এই প্রযুক্তিটি কেমিক্যাল ও ইস্পাতের মতো শিল্পের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতেই শুধু নয় সেই সঙ্গে আবাসিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ এবং তাপ সরবরাহে ব্যবহৃত হবে বলে মন্তব্য করেছে দ্যা নেক্সট ওয়েব ডটকম।