নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনি নোটিস দেওয়ার পরও গ্রাহক বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ কেটে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।
বৈঠকে ‘রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকো’র আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি পেইড মিটার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনকালে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রধানমন্ত্রী সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের লাইন কেটে দিতে বলেন।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রধানের এ নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই বছরেরও বেশি সময় পর তিনি সশরীরে একনেক বৈঠকে অংশ নিলেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দুই বছরের বেশি সময় ধরে গণভবন থেকে তিনি ভাচুর্য়াল মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নেসকো’র আওতাধীন এলাকায় ম্মার্ট প্রি পেইড মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্প উঠেছিল। এসময় প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের আধুনিকায়ন বিষয়ে কথা বলেন। এসময় কথা উঠছিল বিদ্যুতের বিল বাকি থাকা নিয়ে। “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্ট্রং নির্দেশনা দিয়েছেন যে আপনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। নোটিশ দেন, যদি পাওনা না দেয় কেটে দেন।”
মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আর কত, হাজার হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে।” বিদ্যুৎ বিভাগের ২০২১ সালের জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী, দেশে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা রয়েছে ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে বেসরকারি খাতে ছয় হাজার ৯৬২ কোটি ৭৪ লাখ। আর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ৭৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য উপস্থাপন করে। এরপর ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর একই কমিটির কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বিল পরিশোধ না করায় গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মোট ২১ হাজার ৮৩৮টি মামলা চলছে। ৫৯৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ টাকা বকেয়া আদায়ে এই মামলাগুলো করা হয়েছে। বুধবারের একনেক বৈঠকে বিল বকেয়া থাকলে সরকারি বেসরকারি সব ধরনের সংযোগের ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী লাইন কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
জনগণের আশীর্বাদেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি : সংবাদ সম্মেলন শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়ে গেলো। সেতু বাস্তবায়নে নানা স্ট্রাগল ও চাপের বিষয়ে একনেক সভায় খোলামেলা আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, জনগণ পাশে ছিল। তাদের আশীর্বাদ ছিল বলেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশের ভেতরের-বাইরের অনেক প্রতিকূলতা ছিল বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বিষয় আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কাজটা করতে পেরেছি। এটা নিয়ে তিনি আনন্দে আপ্লুত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অনেক বড় বড় অর্জন আছে। তবে পদ্মা সেতু একটি অন্যতম বড় অর্জন। প্রতিটি স্থলবন্দর আরও উন্নত করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক স্থাপনা ও সিস্টেম বসাতে হবে। গ্রামীণ সড়ক বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন সড়ক বানানো প্রয়োজন। তবে বিদ্যমান সড়ক আগে সংস্কার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের ৯০ শতাংশ উন্নয়ন নিজস্ব অর্থায়নে করছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ৯০ শতাংশ উন্নয়ন নিজস্ব অর্থায়নে করছি। পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সততা ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছি। নিজস্ব অর্থে করেছি সেই সেতু। ২৫ জুন উদ্বোধন করবো ইনশাআল্লাহ।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী জানান, দুর্নীতির ধোয়া তুলে পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। যার কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ড. ইউনূস এটা করেছেন শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। ৭১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বেআইনিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকেছেন। এ নিয়ে মামলা করে হেরে যান। বিশ্বব্যাংক তার কথায় ফান্ড বন্ধ করে দেয়। পরে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করি। কানাডা কোর্ট রায়ে বলেছে, সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা।
বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের অবস্থা ছিল দুঃখজনক। কারণ তখন ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে। উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করতো। ফলে দেশের উন্নয়ন না করে তাদের উন্নয়ন করেছে। তিনি আরও বলেন, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেশনজট ছিল। সে অবস্থা থেকে তুলে এনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করছি। আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাজেটের বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। আমরা সেই ইশতেহার ভুলে যাইনি। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, আর কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে সেগুলো বিবেচনা করি। তারপর বাজেট করা হয়। এবারও তাই করছি। এদিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ওই সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের শহীদ এবং প্রয়াত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ডিসেম্বরের মধ্যে আ.লীগের জাতীয় সম্মেলন: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের শহীদ ও প্রয়াত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আমরা সেটা ভুলে যাই না। প্রতিবার বাজেট ঘোষণার সময় সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি।’
বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে লাইন কাটার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ