ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভোগান্তি সবদিকে

  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিঘিœত হচ্ছে হাসপাতালের সেবা কার্যত্রক্রম। ভোগান্তিতে পড়েছে মোবাইল-ইন্টারনেট মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকেরা। মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। কলড্রপ বেড়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। একই সাথে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে সিএিনজি স্টেশনগুলোতেও।
নানা সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর দিয়ে অতি জরুরি সেবাগুলো চালিয়ে নেওয়া হলেও ওয়ার্ডগুলোতে বাতি জ্বলছে না, চলছে না পাখা। ফলে গরম রোগীদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলছিল। সন্ধ্যায় ঢাকার মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের দুর্ভোগ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের জেনারেটর দিয়ে জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ, আইসিইউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছে। তবে ওয়ার্ডে কোনো বাতি জ্বলছিল না, পাখাগুলোও নিশ্চল। ওয়ার্ডে মোবাইলের বাতি কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন রোগীদের স্বজনরা। হাতপাখা, কাগজ দিয়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোগীদের। ২০/২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১২টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে তিনটি চলতে দেখা গেছে। বাতি সবগুলোও ছিল বন্ধ। এই ওয়ার্ডে ভর্তি সাড়ে সাত বছর বয়সী ইমাম মাহাদী হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন। তাকে একটি মোটা কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলেন তার মা মরিয়ম। মরিয়ম বলেন, দুপুরে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমের কারণে ইমাম মাহাদী বিছানায় থাকতে চাচ্ছে না। এজন্য ফ্লোরে শুইয়ে বাতাস করছেন তিনি। “ছেলে অসুস্থ্, এরমধ্যে কারেন্ট নাই। এমন গরম যে সে সিটের উপরে থাকতে চায় না। এজন্য নিচে নামায়া বাতাস দিতাছি।” ওই ওয়ার্ডের ভর্তি নুরুল ইসলাম নামে একজন রোগী অভিযোগ করেন, তিনটি মাত্র ফ্যান চলায় যেসব বেডের উপর ফ্যান রয়েছে, তারা মোটামুটি স্বস্তিতে আছেন। বাকিদের কষ্ট হচ্ছে। “আমি অ্যাজমার রোগী। ঠা-া বা অনেক গরম দুইটা হইলেই আমার শ্বাসকষ্ট বাইড়া যায়। শ্বাসকষ্টে ঠিকমতো দম নিতে পারতেছি না। পোলারে পাডাইছি একটা চার্জার ফ্যান কিন্না আনতে।”
কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বিকাল থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য লোকজন বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমায়। সন্ধ্যায় মহাখালীর ক্রিসেন্ট পেট্রোল পাম্পে খালি কনটেইনার ও ড্রাম নিয়ে লোকজনকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ডিজেলের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। ওই পেট্রোল পাম্পে বনানীর ১৫ নম্বর রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনের কর্মী মো. জুয়েল কনটেইনার হাতে তেল নিতে আসেন। তিনি বলেন, “জেনারেটরের জন্য সাধারণত ১০০ লিটার ডিজেল রিজার্ভে থাকে, দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা টানা জেনারেটর চলার কারণে তেল শেষ দিকে চলে আসে। আরও কয়েক ঘণ্টা যদি কারন্ট না থাকে, তাহলে জেনারেটর বন্ধ হয়ে লিফটসহ পুরো ভবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এ জন্য তেল নিতে আসলাম।”
গুলশান-১ এর ৭ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির মাজেদা কমপ্লেক্সের কর্মী মো. ইউসুফ জানান, তাদের ১৫ তলা ভবনে ২১টি ফ্ল্যাট আছে। দুপুরের পর থেকেই জেনারেটর দিয়ে জরুরিভাবে বিদ্যুৎ চালু রাখা হয়েছে। “১০০ লিটার তেল রিজার্ভ ছিল, সন্ধ্যায় তা ২০ লিটারে নেমেছে। আর কিছুক্ষণ পর জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে তেল নিতে এসে দেখি লম্বা লাইন। মনে হচ্ছে এই লাইনে থেকে তেল নেওয়া সহজ হবে না।”
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলজুড়ে বিদ্যুৎ নেই। এরই মধ্যে দেশের এক হাজার বিটিএস (মোবাইল টাওয়ার) এর সেবা বিঘিœত হয়েছে। আরও কয়েক হাজার বিটিএস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ বিকল্প উপায়ে বিটিএসগুলো দুই-তিন ঘণ্টা চালু রাখা যায়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না এলে মোবাইলে ও ইন্টারনেট সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সমকালকে বলেন, বিটিএসগুলোর ব্যাকআপ নির্দিষ্ট সময় থাকে। বিদ্যুৎ আসতে দেরি হলে নেটওয়ার্ক সেবায় বিঘœ ঘটবে। ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় নেটের ব্যবহার কমে গেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক সিএনজি পাম্প বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্যাস ভরতে আসা গাড়িচালকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় রাজধানীর বহুতল ভবনের বাসিন্দারাও দুর্ভোগের মুখে রয়েছেন। অনেক ভবনের জেনারেটরও বন্ধ হয়েছে তেল ফুরিয়ে যাওয়ায়। তা ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে বাসা-বাড়ির শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ভোগান্তি বেড়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪ মিনিটে গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশের অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তবে গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি।৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘোড়াশাল, টঙ্গীসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে৷ ঢাকার কিছু এলাকাসহ দেশের সীমিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, বিকল্প উপায়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন -হাসপাতাল, সরকারি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আশা করছি, আজ মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই সারা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুজে বের করতে কাজ করবে। প্রতিমন্ত্রী ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভোগান্তি সবদিকে

আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বিঘিœত হচ্ছে হাসপাতালের সেবা কার্যত্রক্রম। ভোগান্তিতে পড়েছে মোবাইল-ইন্টারনেট মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকেরা। মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। কলড্রপ বেড়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। একই সাথে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে সিএিনজি স্টেশনগুলোতেও।
নানা সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর দিয়ে অতি জরুরি সেবাগুলো চালিয়ে নেওয়া হলেও ওয়ার্ডগুলোতে বাতি জ্বলছে না, চলছে না পাখা। ফলে গরম রোগীদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলছিল। সন্ধ্যায় ঢাকার মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের দুর্ভোগ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের জেনারেটর দিয়ে জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ, আইসিইউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছে। তবে ওয়ার্ডে কোনো বাতি জ্বলছিল না, পাখাগুলোও নিশ্চল। ওয়ার্ডে মোবাইলের বাতি কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন রোগীদের স্বজনরা। হাতপাখা, কাগজ দিয়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোগীদের। ২০/২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১২টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে তিনটি চলতে দেখা গেছে। বাতি সবগুলোও ছিল বন্ধ। এই ওয়ার্ডে ভর্তি সাড়ে সাত বছর বয়সী ইমাম মাহাদী হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন। তাকে একটি মোটা কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলেন তার মা মরিয়ম। মরিয়ম বলেন, দুপুরে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমের কারণে ইমাম মাহাদী বিছানায় থাকতে চাচ্ছে না। এজন্য ফ্লোরে শুইয়ে বাতাস করছেন তিনি। “ছেলে অসুস্থ্, এরমধ্যে কারেন্ট নাই। এমন গরম যে সে সিটের উপরে থাকতে চায় না। এজন্য নিচে নামায়া বাতাস দিতাছি।” ওই ওয়ার্ডের ভর্তি নুরুল ইসলাম নামে একজন রোগী অভিযোগ করেন, তিনটি মাত্র ফ্যান চলায় যেসব বেডের উপর ফ্যান রয়েছে, তারা মোটামুটি স্বস্তিতে আছেন। বাকিদের কষ্ট হচ্ছে। “আমি অ্যাজমার রোগী। ঠা-া বা অনেক গরম দুইটা হইলেই আমার শ্বাসকষ্ট বাইড়া যায়। শ্বাসকষ্টে ঠিকমতো দম নিতে পারতেছি না। পোলারে পাডাইছি একটা চার্জার ফ্যান কিন্না আনতে।”
কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বিকাল থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য লোকজন বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমায়। সন্ধ্যায় মহাখালীর ক্রিসেন্ট পেট্রোল পাম্পে খালি কনটেইনার ও ড্রাম নিয়ে লোকজনকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ডিজেলের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। ওই পেট্রোল পাম্পে বনানীর ১৫ নম্বর রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনের কর্মী মো. জুয়েল কনটেইনার হাতে তেল নিতে আসেন। তিনি বলেন, “জেনারেটরের জন্য সাধারণত ১০০ লিটার ডিজেল রিজার্ভে থাকে, দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা টানা জেনারেটর চলার কারণে তেল শেষ দিকে চলে আসে। আরও কয়েক ঘণ্টা যদি কারন্ট না থাকে, তাহলে জেনারেটর বন্ধ হয়ে লিফটসহ পুরো ভবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এ জন্য তেল নিতে আসলাম।”
গুলশান-১ এর ৭ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির মাজেদা কমপ্লেক্সের কর্মী মো. ইউসুফ জানান, তাদের ১৫ তলা ভবনে ২১টি ফ্ল্যাট আছে। দুপুরের পর থেকেই জেনারেটর দিয়ে জরুরিভাবে বিদ্যুৎ চালু রাখা হয়েছে। “১০০ লিটার তেল রিজার্ভ ছিল, সন্ধ্যায় তা ২০ লিটারে নেমেছে। আর কিছুক্ষণ পর জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে তেল নিতে এসে দেখি লম্বা লাইন। মনে হচ্ছে এই লাইনে থেকে তেল নেওয়া সহজ হবে না।”
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলজুড়ে বিদ্যুৎ নেই। এরই মধ্যে দেশের এক হাজার বিটিএস (মোবাইল টাওয়ার) এর সেবা বিঘিœত হয়েছে। আরও কয়েক হাজার বিটিএস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ বিকল্প উপায়ে বিটিএসগুলো দুই-তিন ঘণ্টা চালু রাখা যায়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না এলে মোবাইলে ও ইন্টারনেট সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সমকালকে বলেন, বিটিএসগুলোর ব্যাকআপ নির্দিষ্ট সময় থাকে। বিদ্যুৎ আসতে দেরি হলে নেটওয়ার্ক সেবায় বিঘœ ঘটবে। ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় নেটের ব্যবহার কমে গেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক সিএনজি পাম্প বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্যাস ভরতে আসা গাড়িচালকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় রাজধানীর বহুতল ভবনের বাসিন্দারাও দুর্ভোগের মুখে রয়েছেন। অনেক ভবনের জেনারেটরও বন্ধ হয়েছে তেল ফুরিয়ে যাওয়ায়। তা ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে বাসা-বাড়ির শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের ভোগান্তি বেড়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪ মিনিটে গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশের অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তবে গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি।৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘোড়াশাল, টঙ্গীসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে৷ ঢাকার কিছু এলাকাসহ দেশের সীমিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, বিকল্প উপায়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন -হাসপাতাল, সরকারি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আশা করছি, আজ মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই সারা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুজে বের করতে কাজ করবে। প্রতিমন্ত্রী ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ করেন।