গাজীপুর সংবাদদাতা : প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে চার বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বৈরাগীরচালা গ্রামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে স্থানীয় প্রশাসন। নাম দেওয়া হয় নবধারা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এমন উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তৎকালীন প্রশাসনকে পুরস্কৃত করা হয়। সরকারের মতো সাধারণ মানুষেরও আশা ছিল উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি হবে বিদ্যালয়টি স্থাপনের মাধ্যমে। তবে প্রশাসনের অবহেলায় এখন বন্ধ বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। একই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ খরচ করে গড়ে তোলা এ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার কোনো সুযোগ না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৭ নালে এ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় মনিরুজ্জামান খান নামের এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের জন্য ১৭ শতাংশ জমিও দান করেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। ইটের দেয়াল ঘেরা ও টিনের ছাউনি দিয়ে একটি হলরুম, চারটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয় মাঠের এক কোণে সুপেয় পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছিল সাবমারসিবল ওয়াটার পাম্প। অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় যা চুরি হয়ে যায় গত বছর। এ বিদ্যালয়ের অনুকূলে বেশ কয়েকবার উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে কার্যক্রম না থাকায় সবই এখন অপ্রয়োজনীয়।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথম অবস্থায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এনে ভর্তি করা হয়েছিল এ বিদ্যালয়ে। কাগজে-কলমে ২৫০ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক ছিল। যদিও বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে উপজেলা প্রশাসন যেদিন বিদ্যালয়টিতে প্রোগ্রাম করতো সেদিন তারা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফটোসেশন করতো। এভাবেই প্রশাসন পুরস্কৃত হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ নেয়নি তারা। বর্তমানে বিদ্যালয় মাঠে তৈরি হয়েছে ঘন জঙ্গল। সাধারণ মানুষই যেখানে যেতে ভয় পাবে। তবে হল রুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে অন্যত্র একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান এক গৃহশিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমাতুজ জহুরা বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করে দেবে বলে জমি দিতে বলা হয়। আমরা জমিও দিই। তবে তারা শুধু অবকাঠামো তৈরি করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। এরপর আর কোনো খোঁজ নেয়নি। তৎকালীন প্রশাসন এ বিদ্যালয় দেখিয়ে পুরস্কার লাভ করেছেন। আর আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি এখন সপরিবার ঢাকায় থাকি। বাকি শিক্ষকদের কোনো খবর নেই। শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, অনেকটা আশা নিয়ে বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছিল। অন্তত আমাদের আশা ছিল প্রতিবন্ধীরা শিক্ষার সুযোগ পাবে। প্রতিবছরই আমরা বই ও শিক্ষা উপকরণ দিয়েছি তাদের। তবে শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থী না থাকা সত্যিই হতাশাজনক। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও তা চালু করতে পারিনি। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ বিদ্যালয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়টি যাতে চালু করা যায় সে ব্যবস্থা নেবেন।
বিদ্যালয় থাকলেও নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ