নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রমিকদের যেকোন সমস্যা হলে বিদেশিদের কাছে নালিশ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্ধ ভাব প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের দিয়ে যদি কিছু আদায় করতে হয়, তা আমি আদায় করে দেব। আমি পারব, এ কথা আমি বলতে পারি।’
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার সকালে ‘মহান মে দিবস ২০২২’ উদযাপনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তারপরেও আমরা দেখি যে আমাদের দেশে কিছু কিছু শ্রমিকনেতা আছেন, তারা কোনো বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন? এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনাপাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না।’
শ্রমিক কল্যাণে গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অনেক মালিক নিয়মিত অর্থ জমা না দেয়াকেও ‘দুঃখজনক’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের সুযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, অন্তত আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি নিজেরা। আর এটা আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে মালিক এবং শ্রমিক তারা নিজেরা বসে আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করবেন। আমরা নিজের দেশের বিরুদ্ধে বা নিজের দেশের সম্পর্কে অন্যের কাছে কেন কাঁদতে যাব, বলতে যাব। আমরা তো এটা চাই না।’
বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমাদের সব উন্নয়ন প্রকল্প, যেসব উন্নয়ন প্রকল্প এক সময় বিদেশি অনুদান বা বিদেশি সহযোগিতা-নির্ভর ছিল, সেগুলো আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে- পদ্মা সেতু আমাদের নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় আমরা নির্মাণ করেছি।’
‘যদি এটা করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারো কাছে আমাদের হাত পেতে চলতে হয় না। দেশের সমস্যা, আমরা দেশেই সমাধান করতে পারব।’
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। সেই পরিকল্পনা আমি দিয়ে যাচ্ছি, ২০৪১-এ বাংলাদেশ কেমন হবে। ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন উন্নত হবে, এই বদ্বীপ পরিকল্পনা নিয়ে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে আমরা তারই ভিত্তিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পরবর্তীতে একের পর এক যারাই ক্ষমতায় আসুক তারা যদি এটা অনুসরণ করে এই বাংলাদেশকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা আমরা মোকাবিলা করেছি, পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা পারি করতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ২১ বছর অন্ধকারে ছিলাম। আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অন্ধকারে ছিলাম। কিন্তু ২০০৯ থেকে যে আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের সব শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ— তাদের কল্যাণ হোক সেই কামনা করি।
শ্রমিকের কল্যাণে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমি বলব, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে যে, একটা পার্সেন্টেজ তারা এখানে জমা দেবেন। এটা অনেকে দেন না, এটা খুব দুঃখজনক। আমি মনে করি এটা যথাযথভাবে দেয়া উচিত। কারণ একজন যখন কেউ বিপদে পড়ে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে। যার শ্রমের ফসল ভোগ করবেন, অথচ তার দুর্দিনে পাশে থাকবেন না, এটা হতে পারে না। কাজেই সেই বিষয়টা সবাইকে দেখতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক উভয়ই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন, সেটাই আমি চাই। আপনারা যে প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েছেন, সেটা আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে কিন্তু আপনারা এগিয়ে যেতে পারবেন, সেটাই আমি মনে করি। শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা। কাজেই শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তাহলে কখনই উন্নয়ন হয় না।’
সারা বিশ্বের ১০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে দেশে শিল্পায়ন করা হচ্ছে। ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশটা ছোট। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। কাজেই সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।’
২০২৫ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না বলে অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মে দিবসের আয়োজনে ১০ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দেয়া হয় আর্থিক সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার হাতে চেক তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
বিদেশিদের নালিশ না দিয়ে আমার কাছে আসুন, শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী
                                      জনপ্রিয় সংবাদ                                
                                 
																			 
										























