প্রত্যাশা ডেস্ক: চলে গেলেন রূপালী পর্দার ‘নবাব’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অভিনেতা মিশা সওদাগর।
রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে মিশা সওদাগর লিখেছেন, ‘প্রবীর মিত্র দাদা আর নেই। কিছুক্ষণ আগে উনি ইন্তেকাল করেছেন। স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করুক।’
সেই পোস্টের কমেন্ট বক্সে ভক্ত-অনুরাগীরা কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জনার মৃত্যুর দুই দিনের মাথায় এই শক্তিমান অভিনেতাকে হারালো দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন; অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন প্রবীর মিত্র।
চার দশক রুপালী পর্দায় অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করা জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
জানা গেছে, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ ও রক্তক্ষরণের কারণে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল বলে শনিবার জানিয়েছিলেন প্রবীর মিত্রের পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন।
রোববার রাতে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললেন, বাবা আর নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
হাড়ক্ষয়সহ (অস্টিওপরোসিস) বার্ধক্যজনিত নানা রোগে কয়েক বছর ধরেই চার দেওয়ালে বন্দি জীবন কাটছিল প্রবীণ এই অভিনয়শিল্পীর।
প্রবীর মিত্রের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, রাতে তার মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয় ধানমন্ডির বাসায়। সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হয়। এরপর চ্যানেল আইয়ে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।
১৯৪০ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্রের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।
তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী অজন্তা মিত্রকে ২০০০ সালে হারানোর পর ২০১২ সালে ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান।
স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেন প্রবীর মিত্র। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ প্রবীর মিত্রের।
সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮২ সালে বড় ভাল লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন প্রবীর মিত্র। ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা বিভাগে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।