ঢাকা ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতবিনিময় সভায় জানালেন কমিশনপ্রধান

বিডিআর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

সোমবার রাওয়া ক্লাবে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পলাশীর মতো সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সের অ্যাংকর হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফজলুর রহমান এ কথাগুলো বলেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) প্রতিনিধি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন, জীবিত ফিরে আসা কর্মকর্তা এবং তখন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা যাঁদের সন্দেহ করি, বিশেষ করে শেখ হাসিনা, তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হয় তাঁকে এক্সট্রাডাইট (প্রত্যর্পণ) করতে বলব কিংবা আমাদের দল সেখানে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নেব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি যেটা আমাদের জন্য আইনসিদ্ধ হয়, সেটা করব।’

তদন্ত কমিশনের প্রধান আরো বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আমাদের সহযোগিতার আবেদন থাকবে। এ ঘটনায় যেসব কর্মকর্তা বেঁচে ফিরেছেন, নিগৃহীত হয়েছেন, চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও আমরা বসব, কথা বলব। ঘটনার ১৫ বছরের মাথায় এই কমিশন গঠন করা হলো। ইতিমধ্যে অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবু আমরা কোনো জিনিস গোপন রেখে কিছু করতে চাই না। যা হবে, খোলাখুলি হবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সব বিষয় আমরা জাতিকে জানাব।’

কমিশনের প্রধান বলেন, ‘জাতীয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে যেই সরকারকে (আওয়ামী লীগ সরকার) আমরা সন্দেহ করি, জাতি সন্দেহ করে, তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। এই কমিশন একটি কোর্ট হিসেবে কাজ করছে। সুতরাং এই ধারণা হওয়া উচিত নয়, এই কমিশনের কোনো মূল্য নেই। এটি একটি জাতীয় স্বাধীন কমিশন। আমরা যে মন্তব্য ও সুপারিশ দেব, আদালত সেটি আমলে নেবেন। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।’

কর্মপরিধি নিয়ে কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আমাদের দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করব। এরপরও সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে সময় বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই তদন্তের দুটি অংশ আছে। একটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আরেকটি বহির্দেশের। তদন্তে অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে আমরা দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে চাই।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘কর্মপরিধিতে আমাদের এই দুই বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, যেসব মামলা করা হয়েছে বা যেগুলো বিচারাধীন-সেসব বিষয়ে তদন্তের কথা এতে বলা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা লিখেছি, এখানেও যেন আমরা কাজ করতে পারি।’

মতবিনিময় সভায় কমিশনপ্রধান বলেন, ‘পদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে আমি ছিলাম কমান্ডার। সেই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছে। এরপর সাড়ে চার বছর চাকরি থাকা সত্ত্বেও আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোন সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা বলতে চাই না, আপনারা জানেন। কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘পদুয়া–রৌমারী যুদ্ধে ভারতকে পরাজিত করায় যে সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে পদচ্যুত করে বিডিআরের মহাপরিচালক থেকে ১১ ডিভিশনের জিওসি করেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কাজেই তদন্তের বাইরে কেউ থাকবে না।’

তদন্তের প্রয়োজনে কমিশনকে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক বলেন, অনেকে বলেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত, অন্যান্য জেনারেল জড়িত। শুধু বললে হবে না। তার সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। আমরা চাইব আপনারা প্রমাণ দিন। ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ বা অগুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যা আছে, আমাদেরকে দিন। এটি বিশাল তদন্তের বিষয়। এ জন্য যত দূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাবো।

তদন্ত কমিশনের প্রধান বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে দুটো তদন্ত হয়েছে। আমরা সেগুলো দেখব। কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করব। সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেনাবাহিনীর ওই সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা চাইবো।’

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর পুনর্গঠিত বিজিবির প্রথম মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম সম্পর্কে মতিবিনিময় সভায় নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসে। এই প্রসঙ্গে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘জেনারেল মইনুল বিদেশে যাচ্ছিলেন। তাঁর বিদেশযাত্রা আমরা বন্ধ করেছি।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘সেদিন যত ষড়যন্ত্রই হোক, মনে করুন এর সঙ্গে তৎকালীন সরকার জড়িত, ভারত জড়িত, ওখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারী জড়িত, বাংলাদেশের কিছু রাজনীতিবিদ জড়িত-সবই আমি বুঝলাম। কিন্তু সেদিন সেখানে সেনাবাহিনী গেলে কি হত্যাকাণ্ড হতো? হতো না। পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। পলাশীর মাঠে যেভাবে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে ছিল আর লর্ড ক্লাইভের বাহিনী স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে, তার চেয়েও জঘন্য ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ঘটেছে। সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।’

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল বা কোনো দাবির জন্য সৈনিকেরা নির্মমভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করতে পারে। আমরা জানার চেষ্টা করছি, ওই সময়ে কার কখন বিডিআরে পদায়ন করা হয়েছিল। একজন কর্মকর্তা ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে গিয়ে কী এমন করতে পারে যে তাঁকে মেরে ফেলতে হবে। এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে, তার নাম বদল করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও দেশকে দুর্বল করা হয়েছে। আমরা এমন সুপারিশ করতে চাই, যেন বাংলাদেশে কোনো দিন ২৫ ফেব্রুয়ারির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ‘বিজিবি সদর দপ্তরে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের কোনো নিরাপত্তা বা যানবাহন দেওয়া হয়নি। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এগুলো দেওয়া না হলেও এই তদন্ত আমরা শেষ করে ছাড়ব। তদন্ত কমিশন বক্তব্যগুলো মূল্যায়ন করবে। সেখানে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করব, কোথায় কাকে অথবা কোন দেশকে সাহায্য করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে আমরা জাতির সামনে এই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরতে পারব।’

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে যেন সেনাহত্যা দিবস উপলক্ষে পালন করা হয়, সেই সুপরাশি করা হবে জানিয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘হায়দার হোসেনের গান “কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত?” গানটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংগীত হিসেবে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি যেন বিডিআরের সব জায়গায় গাওয়া হয়, সেই সুপারিশও করা হবে। কোনো বিষয়কেই আমরা দৃষ্টির বাইরে রাখব না।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মতবিনিময় সভায় জানালেন কমিশনপ্রধান

বিডিআর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা

আপডেট সময় : ০৭:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পলাশীর মতো সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সের অ্যাংকর হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফজলুর রহমান এ কথাগুলো বলেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) প্রতিনিধি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন, জীবিত ফিরে আসা কর্মকর্তা এবং তখন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা যাঁদের সন্দেহ করি, বিশেষ করে শেখ হাসিনা, তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হয় তাঁকে এক্সট্রাডাইট (প্রত্যর্পণ) করতে বলব কিংবা আমাদের দল সেখানে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নেব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি যেটা আমাদের জন্য আইনসিদ্ধ হয়, সেটা করব।’

তদন্ত কমিশনের প্রধান আরো বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আমাদের সহযোগিতার আবেদন থাকবে। এ ঘটনায় যেসব কর্মকর্তা বেঁচে ফিরেছেন, নিগৃহীত হয়েছেন, চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও আমরা বসব, কথা বলব। ঘটনার ১৫ বছরের মাথায় এই কমিশন গঠন করা হলো। ইতিমধ্যে অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবু আমরা কোনো জিনিস গোপন রেখে কিছু করতে চাই না। যা হবে, খোলাখুলি হবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সব বিষয় আমরা জাতিকে জানাব।’

কমিশনের প্রধান বলেন, ‘জাতীয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে যেই সরকারকে (আওয়ামী লীগ সরকার) আমরা সন্দেহ করি, জাতি সন্দেহ করে, তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। এই কমিশন একটি কোর্ট হিসেবে কাজ করছে। সুতরাং এই ধারণা হওয়া উচিত নয়, এই কমিশনের কোনো মূল্য নেই। এটি একটি জাতীয় স্বাধীন কমিশন। আমরা যে মন্তব্য ও সুপারিশ দেব, আদালত সেটি আমলে নেবেন। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।’

কর্মপরিধি নিয়ে কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আমাদের দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করব। এরপরও সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে সময় বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই তদন্তের দুটি অংশ আছে। একটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আরেকটি বহির্দেশের। তদন্তে অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে আমরা দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে চাই।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘কর্মপরিধিতে আমাদের এই দুই বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, যেসব মামলা করা হয়েছে বা যেগুলো বিচারাধীন-সেসব বিষয়ে তদন্তের কথা এতে বলা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা লিখেছি, এখানেও যেন আমরা কাজ করতে পারি।’

মতবিনিময় সভায় কমিশনপ্রধান বলেন, ‘পদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে আমি ছিলাম কমান্ডার। সেই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছে। এরপর সাড়ে চার বছর চাকরি থাকা সত্ত্বেও আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোন সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা বলতে চাই না, আপনারা জানেন। কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘পদুয়া–রৌমারী যুদ্ধে ভারতকে পরাজিত করায় যে সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে পদচ্যুত করে বিডিআরের মহাপরিচালক থেকে ১১ ডিভিশনের জিওসি করেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কাজেই তদন্তের বাইরে কেউ থাকবে না।’

তদন্তের প্রয়োজনে কমিশনকে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক বলেন, অনেকে বলেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত, অন্যান্য জেনারেল জড়িত। শুধু বললে হবে না। তার সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। আমরা চাইব আপনারা প্রমাণ দিন। ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ বা অগুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যা আছে, আমাদেরকে দিন। এটি বিশাল তদন্তের বিষয়। এ জন্য যত দূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাবো।

তদন্ত কমিশনের প্রধান বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে দুটো তদন্ত হয়েছে। আমরা সেগুলো দেখব। কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করব। সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেনাবাহিনীর ওই সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা চাইবো।’

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর পুনর্গঠিত বিজিবির প্রথম মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম সম্পর্কে মতিবিনিময় সভায় নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসে। এই প্রসঙ্গে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘জেনারেল মইনুল বিদেশে যাচ্ছিলেন। তাঁর বিদেশযাত্রা আমরা বন্ধ করেছি।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘সেদিন যত ষড়যন্ত্রই হোক, মনে করুন এর সঙ্গে তৎকালীন সরকার জড়িত, ভারত জড়িত, ওখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারী জড়িত, বাংলাদেশের কিছু রাজনীতিবিদ জড়িত-সবই আমি বুঝলাম। কিন্তু সেদিন সেখানে সেনাবাহিনী গেলে কি হত্যাকাণ্ড হতো? হতো না। পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। পলাশীর মাঠে যেভাবে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে ছিল আর লর্ড ক্লাইভের বাহিনী স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে, তার চেয়েও জঘন্য ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ঘটেছে। সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।’

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল বা কোনো দাবির জন্য সৈনিকেরা নির্মমভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করতে পারে। আমরা জানার চেষ্টা করছি, ওই সময়ে কার কখন বিডিআরে পদায়ন করা হয়েছিল। একজন কর্মকর্তা ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে গিয়ে কী এমন করতে পারে যে তাঁকে মেরে ফেলতে হবে। এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে, তার নাম বদল করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও দেশকে দুর্বল করা হয়েছে। আমরা এমন সুপারিশ করতে চাই, যেন বাংলাদেশে কোনো দিন ২৫ ফেব্রুয়ারির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ‘বিজিবি সদর দপ্তরে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের কোনো নিরাপত্তা বা যানবাহন দেওয়া হয়নি। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এগুলো দেওয়া না হলেও এই তদন্ত আমরা শেষ করে ছাড়ব। তদন্ত কমিশন বক্তব্যগুলো মূল্যায়ন করবে। সেখানে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করব, কোথায় কাকে অথবা কোন দেশকে সাহায্য করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে আমরা জাতির সামনে এই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরতে পারব।’

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে যেন সেনাহত্যা দিবস উপলক্ষে পালন করা হয়, সেই সুপরাশি করা হবে জানিয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘হায়দার হোসেনের গান “কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত?” গানটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংগীত হিসেবে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি যেন বিডিআরের সব জায়গায় গাওয়া হয়, সেই সুপারিশও করা হবে। কোনো বিষয়কেই আমরা দৃষ্টির বাইরে রাখব না।’