ঢাকা ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিজ্ঞান গবেষণায় জানা গেল ১১৭ বছর বাঁচার রহস্য

  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

১১৭ বছর বয়সে গত বছর মারা যান মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা -ছবি সিএনএন থেকে

প্রত্যাশা ডেস্ক: শতবর্ষী মানুষদের হামেশাই একটি প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। প্রশ্নটি হলো, ‘আপনার এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?’ এমন প্রশ্নে কেউ কেউ কথায় কথায় দীর্ঘায়ু ও সুস্থ একটি জীবন পেতে কিছু পরামর্শও দেন। কিন্তু শুধু কথায় নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে এই রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।

কিছু মানুষ কেন অন্যদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন? তাঁদের জিনগত গঠনে বিশেষ কী আছে? রোগে ভুগে যখন বহু মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন কেন তাঁদের এসব রোগ হয় না? যদি কোনো রহস্য থেকেই থাকে, তাহলে তা কি অন্যদেরও দীর্ঘজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করবে?

উল্লিখিত, এমন বহু প্রশ্নের উত্তর মিলবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী সেল রিপোর্টস মেডিসিন-এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা ১১৭ বছর ১৬৮ দিন বেঁচে থাকা এক নারীর জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেছেন এতে।

মার্কিন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ ওই নারীর নাম মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত ব্যক্তি। তিনি জীবিত থাকতেই তাঁকে নিয়ে এই গবেষণা শুরু হয়েছিল।

গবেষণাটি যাঁরা করেছেন, তাঁদের একজন মানেল এস্তেলার। স্পেনের বার্সেলোনার জোসেপ ক্যারারাস লিউকেমিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই গবেষক সিএনএনকে বলেন, তিনি (মোরেরা) ছিলেন অত্যন্ত উদার মনের একজন মানুষ। তাঁর সঙ্গে কাজ করাটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।

মোরেরার দীর্ঘ জীবন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রথমে গবেষকেরা মোরেরার রক্ত, থুতু ও মলমূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে সেসবের জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখেন। এরপর আইবেরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে (দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ) জন্ম নেওয়া আরো ৭৫ জন নারীর জিনগত বৈশিষ্ট্য সেসবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

সব বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা এই উপসংহার টানেন যে মোরেরার দীর্ঘ জীবন পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে দুটি বিষয়। প্রথমত, তিনি বিশেষ জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেন, যা তাঁকে দীর্ঘায়ু হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। অর্থাৎ তাঁর ডিএনএ বা জিনে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যা দুর্লভ। এটা তাঁকে অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শুধু জিনগত বৈশিষ্ট্য হলেই হয় না, তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস ছিল স্বাস্থ্যকর। মোরেরার দীর্ঘ জীবনের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা-দুটোই প্রায় সমানভাবে কাজ করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

মানেল এস্তেলার কথায়, মোরেরা শুরু থেকেই ছিলেন ভাগ্যবান। আজীবন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন দ্বিতীয় আশীর্বাদ হয়ে আসে। কখনো ধূমপান বা মদ্যপান করেননি। যতক্ষণ পারতেন কাজ করতেন। থাকতেন গ্রামীণ খোলামেলা জায়গায়। প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা হাঁটতেন। তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল অলিভ অয়েল। আর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের মতো ছিল তাঁর খাদ্যাভ্যাস। তিনি দিনে অন্তত তিনবার করে দই খেতেন।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্লেয়ার স্টিভস বলেন, এই গবেষণায় যেসব বিষয় বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। গবেষকেরা বার্ধক্যের নানা রকম প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখেছেন। আমার জানামতে, এত বিস্তারিতভাবে এর আগে এ ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি।

সানা/আপ্র/২৮/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিজ্ঞান গবেষণায় জানা গেল ১১৭ বছর বাঁচার রহস্য

আপডেট সময় : ০৯:৩১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: শতবর্ষী মানুষদের হামেশাই একটি প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। প্রশ্নটি হলো, ‘আপনার এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?’ এমন প্রশ্নে কেউ কেউ কথায় কথায় দীর্ঘায়ু ও সুস্থ একটি জীবন পেতে কিছু পরামর্শও দেন। কিন্তু শুধু কথায় নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে এই রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন গবেষকেরা।

কিছু মানুষ কেন অন্যদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন? তাঁদের জিনগত গঠনে বিশেষ কী আছে? রোগে ভুগে যখন বহু মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন কেন তাঁদের এসব রোগ হয় না? যদি কোনো রহস্য থেকেই থাকে, তাহলে তা কি অন্যদেরও দীর্ঘজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করবে?

উল্লিখিত, এমন বহু প্রশ্নের উত্তর মিলবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসা সাময়িকী সেল রিপোর্টস মেডিসিন-এ নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা ১১৭ বছর ১৬৮ দিন বেঁচে থাকা এক নারীর জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেছেন এতে।

মার্কিন বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ ওই নারীর নাম মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা। ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত ব্যক্তি। তিনি জীবিত থাকতেই তাঁকে নিয়ে এই গবেষণা শুরু হয়েছিল।

গবেষণাটি যাঁরা করেছেন, তাঁদের একজন মানেল এস্তেলার। স্পেনের বার্সেলোনার জোসেপ ক্যারারাস লিউকেমিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই গবেষক সিএনএনকে বলেন, তিনি (মোরেরা) ছিলেন অত্যন্ত উদার মনের একজন মানুষ। তাঁর সঙ্গে কাজ করাটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।

মোরেরার দীর্ঘ জীবন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রথমে গবেষকেরা মোরেরার রক্ত, থুতু ও মলমূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে সেসবের জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখেন। এরপর আইবেরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে (দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ) জন্ম নেওয়া আরো ৭৫ জন নারীর জিনগত বৈশিষ্ট্য সেসবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

সব বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা এই উপসংহার টানেন যে মোরেরার দীর্ঘ জীবন পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে দুটি বিষয়। প্রথমত, তিনি বিশেষ জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেন, যা তাঁকে দীর্ঘায়ু হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। অর্থাৎ তাঁর ডিএনএ বা জিনে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যা দুর্লভ। এটা তাঁকে অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শুধু জিনগত বৈশিষ্ট্য হলেই হয় না, তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস ছিল স্বাস্থ্যকর। মোরেরার দীর্ঘ জীবনের পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা-দুটোই প্রায় সমানভাবে কাজ করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

মানেল এস্তেলার কথায়, মোরেরা শুরু থেকেই ছিলেন ভাগ্যবান। আজীবন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন দ্বিতীয় আশীর্বাদ হয়ে আসে। কখনো ধূমপান বা মদ্যপান করেননি। যতক্ষণ পারতেন কাজ করতেন। থাকতেন গ্রামীণ খোলামেলা জায়গায়। প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা হাঁটতেন। তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল অলিভ অয়েল। আর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের মতো ছিল তাঁর খাদ্যাভ্যাস। তিনি দিনে অন্তত তিনবার করে দই খেতেন।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্লেয়ার স্টিভস বলেন, এই গবেষণায় যেসব বিষয় বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। গবেষকেরা বার্ধক্যের নানা রকম প্রক্রিয়া খুঁটিয়ে দেখেছেন। আমার জানামতে, এত বিস্তারিতভাবে এর আগে এ ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি।

সানা/আপ্র/২৮/০৯/২০২৫