প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের পছন্দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্লুস্কাইয়ের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্লুস্কাই’তে বিজ্ঞানীদের গবেষণানির্ভর পোস্ট বেশি মনোযোগ পায় এবং সেগুলো মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ গভীরভাবে করা হয়, যা মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স-এ তুলনামূলক কম ঘটে।
গবেষণায় গত আড়াই বছরে ব্লুস্কাইয়ের ২৬ লাখ পোস্ট বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যেখানে পাঁচ লাখেরও বেশি গবেষণাপত্রের পোস্টের উল্লেখ রয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে করা এসব পোস্ট কেবল বেশি লাইক বা শেয়ারই পাচ্ছে না, বরং এগুলো নিয়ে ‘মানুষ নিজস্ব ভাষায় আরো গভীর ও মৌলিক আলোচনাও’ করছে, যার র মধ্যে ‘টেক্সটের মৌলিকত্ব’ বা নিজস্ব ভাষায় লেখা মন্তব্যও এক্স-এর চেয়ে বেশি।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে লিখেছে, এ গবেষণার ফলাফল এমন এক সময়ে এল যখন ব্লুস্কাইকে লড়তে হচ্ছে সক্রিয় ব্যবহারকারী ও প্ল্যাটফর্মে কার্যক্রম কমিয়ে আনার মতো বিভিন্ন প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে। মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর ব্লুস্কাইতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেই গতি কিছুটা কমে এসেছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বিজ্ঞানী সমাজের মধ্যে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ব্লুস্কাই। আগস্টে প্রতিদিন বিজ্ঞান সম্পর্কিত পোস্টের সংখ্যা জুলাইয়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে ও মার্চের তুলনায় হয়েছে তিন গুণেরও বেশি। তবে প্লাটফর্মটিতে এখনও পর্যন্ত মোট কতগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক পোস্ট হয়েছে সেই বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে ব্লুস্কাই। গবেষণায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্লুস্কাই জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক সম্পৃক্ততা।
যুক্তরাজ্যের ‘শেফিল্ড ইউনিভার্সটি’র গবেষণা দলটি বলছে, ব্লুস্কাইয়ে বিজ্ঞানের প্রায় অর্ধেক পোস্টেই কম করে হলেও ১০টি লাইক মিলেছে এবং এক-তৃতীয়াংশ পোস্ট ১০ বা তার বেশি বার শেয়ার হয়েছে। আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, এক্স প্ল্যাটফর্মে এই সংখ্যা অনেক কম, সেখানে কেবল চার দশমিক চার শতাংশ পোস্টই ১০ বা তার বেশি বার শেয়ার হয়েছে।
এদিকে, ব্লুস্কাইতে অনেক ব্যবহারকারী কেবল পোস্ট শেয়ারই করেনি, বরং নিজেদের মতামত বা মন্তব্যও করেছেন। বিজ্ঞানের পোস্টে মানুষ বেশি করে উত্তরও দিয়েছে। ছয় দশমিক তিন শতাংশ ব্যবহারকারী আর্টিকেল বা জার্নালের নাম উল্লেখ করেছেন। তবে গবেষণাটি এখনও সম্পূর্ণ যাচাই বা পিয়ার রিভিউ হয়নি।
গবেষণার অন্যতম লেখক আর টি ঝেং বলেছেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করে ব্লুস্কাইয়ে যে বৈজ্ঞানিক আলোচনা বেড়েছিল তা এখনও ধারাবাহিকভাবে চলছে। সম্প্রতি এক্স-এর মতোই বা কখনো কখনো এর থেকেও বেশি উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক আলোচনা ব্লুস্কাইয়ে হচ্ছে।
গার্ডিয়ান লিখেছে, ২০২৩ সালে চালু হওয়ার পর থেকে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে ব্লুস্কাই, বিশেষ করে ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার মতো বড় রাজনৈতিক ঘটনার কারণে। এখন প্ল্যাটফর্মটিতে তিন কোটি ৮০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। তবে ২০২৪ সালের শরতে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনের সক্রিয় ব্যবহারকারী, লাইক ও পোস্টের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে প্লাটফর্মটির। ব্লুস্কাইয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা ভালো হওয়ার পেছনে কারণ হল কিছু শীর্ষ বিজ্ঞান লেখক বা বক্তারা একসঙ্গে মিলেমিশে এখানে এক টেকসই কমিউনিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
এসি/আপ্র/০৩/০৯/২০২৫