ঢাকা ০৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাংবাদিকদের জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিজিবি ও জনগণের শক্ত অবস্থানে পিছু হটেছে ভারত

  • আপডেট সময় : ০৭:০৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সীমান্তের পাঁচ স্থানে ভারতের বিধিহির্ভূত বেড়া নির্মাণের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ঠেকানোর কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, নওগাঁর পত্নীতলাসহ পাঁচ সীমান্তে শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে ভারত সম্প্রতি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এ নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে একটা আলোচনা হয়েছে। এবং আমাদের বিজিবি খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় এই জায়গায় থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে (ভারত)।

রোববার (১২ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে মৈত্রী চুক্তি হয়, তার আলোকে ১৯৭৫ সালে সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

ওই নীতিমালার প্রসঙ্গ টেনে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ১৫০ গজের ভেতরে কেউ কোনো প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বা ডিফেন্স পোটেনশিয়ালিটি আছে- এইসব জিনিস কেউ করতে পারবে না। ২ নম্বর ছিল হলো- শূন্যলাইন থেকে ১৫০ কাজের ভেতরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের থেকে সম্মতি নিতে হবে; কোনো সম্মতি ছাড়া তারা এই কাজটা করতে পারবে না।

৩ নম্বরে ছিল- ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের ভেতরে ৩,২৭১ কিলোমিটার স্থানে অলরেডি তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ফেলেছে। বাকি আছে ৮৮৫ কিলোমিটার।

তিনি বলেছেন, আমাদের এইখানে বিগত সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের ভেতরে এরা কতগুলো অসম কাজ- যেইডা ইন্ডিয়ার করা উচিত হয়নি; বাট আমাদের আগের সরকার কতগুলা সুযোগ দিয়েছে।

এই সুযোগের ভেতরে তারা প্রায় ১৬০টা স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, ৭৮টা স্থানে আরেকটা ঝামেলা রয়ে গেছে।

আর পাঁচটা স্থানে আপনারা দেখছেন যে- চলমান যেটা ঝামেলা দেখা দিতেছে, একটা হলো চাঁপাইনবাগঞ্জে, আরেকটা তিন বিঘা করিডরের ওখানে, নওগাঁর পত্নীতলার ওখানে একটা আছে, আরেকটা লালমনিরহাট। এই জায়গাগুলোতে রিসেন্টলি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে বিজিবি ও দেশের জনগণ শক্ত অবস্থান নেওয়াই ভারতের সেই প্রচেষ্টা ঠেকানো গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা হয়েছে, যেহেতু আগের সরকার এখানে কিছু কিছু জায়গায় লিখিত দিয়ে গেছে- এই জায়গায় এটা করতে পারবা, এই জায়গায় এটা করতে পারবা; বাট যেইগুলো তাদের দেওয়াটা উচিত হয় নাই। এর ভেতরে একটা বড়ো সমস্যা দেখা দিয়েছে তিন বিঘা করিডরের ওখানে।

আপনারা জানেন, ’৭৪ সালে যে বেরুবাড়ী চুক্তি হয়েছিল, ওই চুক্তির সময় কিন্তু আমরা বেরুবাড়ী দিয়ে দিছি। আমাদের পার্লামেন্ট এটা রেডি হয়েই করছে। আর ইন্ডিয়ানদের আমাদের এই প্যাসেজটা (যাতায়াতের পথ) দেওয়ার কথা ছিল, ওখানে যাওয়ার করিডোরটা। কিন্তু করিডোরটার বিষয়ে কথা ছিল সারাজীবনের জন্য আমাদেরই থাকবে।

বাংলাদেশের জটিলতার মুখে পড়ার কথা তুলে ধরতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু ওরা পার্লামেন্টে র‌্যাটিফাই করে নাই, এই জায়গাটা আমাদের দেয়ও নাই। এরা করছে নাকি-এই মাঝে মাঝে ইয়ে করে- ১ ঘণ্টা চালু করত, ১ ঘণ্টা বন্ধ করত, তারপর ৬ ঘণ্টা খুলত, ৬ ঘণ্টা বন্ধ করত। তারপরে রাত্রে পুরোটাই বন্ধ থাকত। এরপর ২০১০ সালে (প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালে) চুক্তি করা হয়, বলা হয়- এটা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, ইউজ করতে পারব। কিন্তু এটার পরিবর্তে একটা বিরাট ঝামেলা করছে। আমাদের যে আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে, ওই খানে জিরোলাইনের উপরে বলছে যে- তারা ইয়ে দিতে পারবে। জিরো লাইন থেকে যে ১৫০ গজ দূরে যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা, বাট ওই জায়গার ক্ষেত্রে দিয়ে দিয়েছে যে- জিরোলাইনের উপরেই তারা কাঁটাতারের ফেন্স করতে পারবে। এইজন্য এইখানে একটা বড় ধরনের সমস্যা হইছে। তিনি বলেন, ওরা ফেন্স (বেড়া) করতে গেলে আমরা বাধা দেই, বাট লিগ্যালি আমাগো বাধা দেওয়ার ইয়ে নাই। অলরেডি এটা সিগনেচারৃআমরা এটা সাইন করছি। এখন এখানে দুই ধরনেরই সমস্যা।

যদি আমরা ওখানে বেশি (বাধা) দিলে, ওরা আবার প্রবেশের ক্ষেত্রে ঝামেলা করে। বর্ডারের অবস্থা ছিল এরকমই মোটামুটি। কিন্তু বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় এরা কিন্তু অন্যান্য জায়গা থেকে কাজ কিন্তু বন্ধ করতে বাধ্য হইছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, এইজন্য আমি বিজিবি এবং আমার বাংলাদেশের জনগণকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, তাদের এই শক্ত অবস্থানের জন্য।

ওই জায়গায় যারা সাংবাদিক আছে, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই- তারাও কিন্তু এই জিনিসটা ভালোভাবে ফুটাই উঠাইছে। বিধি বহির্ভূতভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ চেষ্টার ঘটনায় ভারতের হাই কমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবেন বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাংবাদিকদের জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিজিবি ও জনগণের শক্ত অবস্থানে পিছু হটেছে ভারত

আপডেট সময় : ০৭:০৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সীমান্তের পাঁচ স্থানে ভারতের বিধিহির্ভূত বেড়া নির্মাণের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ঠেকানোর কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, নওগাঁর পত্নীতলাসহ পাঁচ সীমান্তে শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে ভারত সম্প্রতি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এ নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে একটা আলোচনা হয়েছে। এবং আমাদের বিজিবি খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় এই জায়গায় থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে (ভারত)।

রোববার (১২ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে মৈত্রী চুক্তি হয়, তার আলোকে ১৯৭৫ সালে সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

ওই নীতিমালার প্রসঙ্গ টেনে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ১৫০ গজের ভেতরে কেউ কোনো প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বা ডিফেন্স পোটেনশিয়ালিটি আছে- এইসব জিনিস কেউ করতে পারবে না। ২ নম্বর ছিল হলো- শূন্যলাইন থেকে ১৫০ কাজের ভেতরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের থেকে সম্মতি নিতে হবে; কোনো সম্মতি ছাড়া তারা এই কাজটা করতে পারবে না।

৩ নম্বরে ছিল- ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের ভেতরে ৩,২৭১ কিলোমিটার স্থানে অলরেডি তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ফেলেছে। বাকি আছে ৮৮৫ কিলোমিটার।

তিনি বলেছেন, আমাদের এইখানে বিগত সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের ভেতরে এরা কতগুলো অসম কাজ- যেইডা ইন্ডিয়ার করা উচিত হয়নি; বাট আমাদের আগের সরকার কতগুলা সুযোগ দিয়েছে।

এই সুযোগের ভেতরে তারা প্রায় ১৬০টা স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, ৭৮টা স্থানে আরেকটা ঝামেলা রয়ে গেছে।

আর পাঁচটা স্থানে আপনারা দেখছেন যে- চলমান যেটা ঝামেলা দেখা দিতেছে, একটা হলো চাঁপাইনবাগঞ্জে, আরেকটা তিন বিঘা করিডরের ওখানে, নওগাঁর পত্নীতলার ওখানে একটা আছে, আরেকটা লালমনিরহাট। এই জায়গাগুলোতে রিসেন্টলি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে বিজিবি ও দেশের জনগণ শক্ত অবস্থান নেওয়াই ভারতের সেই প্রচেষ্টা ঠেকানো গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা হয়েছে, যেহেতু আগের সরকার এখানে কিছু কিছু জায়গায় লিখিত দিয়ে গেছে- এই জায়গায় এটা করতে পারবা, এই জায়গায় এটা করতে পারবা; বাট যেইগুলো তাদের দেওয়াটা উচিত হয় নাই। এর ভেতরে একটা বড়ো সমস্যা দেখা দিয়েছে তিন বিঘা করিডরের ওখানে।

আপনারা জানেন, ’৭৪ সালে যে বেরুবাড়ী চুক্তি হয়েছিল, ওই চুক্তির সময় কিন্তু আমরা বেরুবাড়ী দিয়ে দিছি। আমাদের পার্লামেন্ট এটা রেডি হয়েই করছে। আর ইন্ডিয়ানদের আমাদের এই প্যাসেজটা (যাতায়াতের পথ) দেওয়ার কথা ছিল, ওখানে যাওয়ার করিডোরটা। কিন্তু করিডোরটার বিষয়ে কথা ছিল সারাজীবনের জন্য আমাদেরই থাকবে।

বাংলাদেশের জটিলতার মুখে পড়ার কথা তুলে ধরতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু ওরা পার্লামেন্টে র‌্যাটিফাই করে নাই, এই জায়গাটা আমাদের দেয়ও নাই। এরা করছে নাকি-এই মাঝে মাঝে ইয়ে করে- ১ ঘণ্টা চালু করত, ১ ঘণ্টা বন্ধ করত, তারপর ৬ ঘণ্টা খুলত, ৬ ঘণ্টা বন্ধ করত। তারপরে রাত্রে পুরোটাই বন্ধ থাকত। এরপর ২০১০ সালে (প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালে) চুক্তি করা হয়, বলা হয়- এটা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, ইউজ করতে পারব। কিন্তু এটার পরিবর্তে একটা বিরাট ঝামেলা করছে। আমাদের যে আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে, ওই খানে জিরোলাইনের উপরে বলছে যে- তারা ইয়ে দিতে পারবে। জিরো লাইন থেকে যে ১৫০ গজ দূরে যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা, বাট ওই জায়গার ক্ষেত্রে দিয়ে দিয়েছে যে- জিরোলাইনের উপরেই তারা কাঁটাতারের ফেন্স করতে পারবে। এইজন্য এইখানে একটা বড় ধরনের সমস্যা হইছে। তিনি বলেন, ওরা ফেন্স (বেড়া) করতে গেলে আমরা বাধা দেই, বাট লিগ্যালি আমাগো বাধা দেওয়ার ইয়ে নাই। অলরেডি এটা সিগনেচারৃআমরা এটা সাইন করছি। এখন এখানে দুই ধরনেরই সমস্যা।

যদি আমরা ওখানে বেশি (বাধা) দিলে, ওরা আবার প্রবেশের ক্ষেত্রে ঝামেলা করে। বর্ডারের অবস্থা ছিল এরকমই মোটামুটি। কিন্তু বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় এরা কিন্তু অন্যান্য জায়গা থেকে কাজ কিন্তু বন্ধ করতে বাধ্য হইছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, এইজন্য আমি বিজিবি এবং আমার বাংলাদেশের জনগণকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, তাদের এই শক্ত অবস্থানের জন্য।

ওই জায়গায় যারা সাংবাদিক আছে, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই- তারাও কিন্তু এই জিনিসটা ভালোভাবে ফুটাই উঠাইছে। বিধি বহির্ভূতভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ চেষ্টার ঘটনায় ভারতের হাই কমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবেন বলে জানান তিনি।