ঢাকা ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

বিজয়ের গালে চপেটাঘাত

  • আপডেট সময় : ০৪:১৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

সালেক উদ্দিন : গণ-আন্দোলনকেন্দ্রিক দুটি হত্যার সংবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন মনে করছি। প্রথমটি হলো, জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনকার কথা। ৫ আগস্ট নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় আন্দোলনকারী গণমানুষ একজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। ওইদিনই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। বিজয় হয় আন্দোলনের। গণ-আন্দোলনের বিজয়ের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানার কনস্টেবল হত্যার বিষয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। সেই মামলায় এক কিশোর ও দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং পুরনো কায়দায় ১৬৪ ধারায় আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে ১২ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়।
এ ঘটনার দুই দিন পরে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর টেলিভিশনে দেখলাম আরেকটি খবর। গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরস্ত্র এক যুবক পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে দুই মাস মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়ার কাহিনি। টিভির পর্দায় যুবকের বাবার বুকফাটা চিৎকার শুনলাম। তিনি বলছিলেন তার ছেলে পুলিশের টিয়ার গ্যাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সশস্ত্র পুলিশ দলবেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সেই অবস্থায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা করেও তাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফেরানো যায়নি।
এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রংপুরের আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মীদের হাতে খুন হয়েছে, তার প্রতিটি মৃত্যুই ছিল একেকটি লোমহর্ষক ঘটনা। এসব ঘটনা আমরা আন্দোলনের মাঠে দেখেছি এবং টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি।
আলোচনার প্রথম ঘটনায় অর্থাৎ সোনাইমুড়ি থানা পুলিশ হত্যার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতে উপস্থাপন। এই আলামত সুখকর নয়। এটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে শুধু সোনাইমুড়ি থানাই আক্রান্ত হয়নি বা ওই থানার একজন পুলিশ সদস্যই মারা যায়নি।
ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান হাতিয়ার পুলিশ বাহিনীকে আন্দোলনে নামা এসব কিশোর-যুবক ছাত্র সমাজ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ পরাস্ত করতে পেরেছিল বলেই সেই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এসেছে নতুন বাংলাদেশ। সেই বিজয় আনতে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছেন। তাদের নির্মমভাবে খুন করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনীতিক দলের কর্মী এবং সেই সরকারের পোষ্য এই পুলিশ বাহিনীর একটি গ্রুপ। আর সেই গ্রুপটি যদি আন্দোলনকারীদের খুনি বানিয়ে বিজয় লাভ করে তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা গণ-আন্দোলনের বিজয় কলঙ্কিত হবে। যার জন্য এ ঘটনাটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারলে বিজয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করার সময়ের ব্যাপার মাত্র।
স্বস্তির বিষয় হলো অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি দ্রুত আমলে এনেছেন। আন্দোলনের সময় থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কোনও আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং একই সময়ে বলতে চাই, সোনাইমুড়ির ঘটনায় যে তিন কিশোর-যুবকের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতে উপস্থাপন করা হলো তাদের কী হবে?
বলতে দ্বিধা নেই, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ১৬৪ ধারায় কীভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করে তা দেশের মানুষের অজানা নয়। এই পুলিশের তেলেসমাতিতেই তো আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ১৬৪ ধারায় জজ মিয়ার মতো নিরীহ নিরপরাধী মানুষও স্বীকারোক্তি দিয়েছিল।
সোনাইমুড়ির পুলিশ হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক। তবে এটাও তো চাক্ষুষ সত্য যে গণ-আন্দোলনকারীদের অমানবিক নির্যাতন এবং নির্বিচারে হত্যা করেছে ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠনের কর্মী এবং পুলিশ বাহিনী। ফলে তাদের ওপর সংগ্রামী জনতার যে ক্ষোভ ছিল, সেই ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বিজয়ক্ষণে প্রতিপক্ষ পুলিশ গণপিটুনিতে মারা যেতেই পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া সোনাইমুড়ি কিশোর যুবকদের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখবে।
এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসা যাক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে তাদের দমনের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন মর্মান্তিক দৃশ্য আমরা রাস্তায় স্বচক্ষে দেখেছি, টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি, সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি। তৎকালীন সরকারের পোষ্য এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের কর্মীদের সঙ্গে মিশে আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। আহত আন্দোলনকারীদের কী নির্মমভাবে পুলিশের গাড়ির থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে, আবার মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, মৃতদের লাশ আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কী ভয়াবহ সেই নির্যাতনের চিত্র! পুলিশ সদস্য কর্তৃক আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করার সেসব ভিডিও ফুটেজ এখনও আছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কে তাদের ধরে সোনাইমুড়ির মতো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে আদালতে উপস্থাপন করবে? নাকি তারা সরকারি পোশাকের বদৌলতে পার পেয়ে যাবে?
বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ভাবতে হবে। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে, তার কতা তারা করে গেল; নাকি প্রত্যাশার বিপরীত কিছু করল সেই জবাবদিহিও একদিন সামনে এসে দাঁড়াবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

বিজয়ের গালে চপেটাঘাত

আপডেট সময় : ০৪:১৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

সালেক উদ্দিন : গণ-আন্দোলনকেন্দ্রিক দুটি হত্যার সংবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন মনে করছি। প্রথমটি হলো, জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনকার কথা। ৫ আগস্ট নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় আন্দোলনকারী গণমানুষ একজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। ওইদিনই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। বিজয় হয় আন্দোলনের। গণ-আন্দোলনের বিজয়ের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানার কনস্টেবল হত্যার বিষয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। সেই মামলায় এক কিশোর ও দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং পুরনো কায়দায় ১৬৪ ধারায় আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে ১২ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়।
এ ঘটনার দুই দিন পরে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর টেলিভিশনে দেখলাম আরেকটি খবর। গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরস্ত্র এক যুবক পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে দুই মাস মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়ার কাহিনি। টিভির পর্দায় যুবকের বাবার বুকফাটা চিৎকার শুনলাম। তিনি বলছিলেন তার ছেলে পুলিশের টিয়ার গ্যাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সশস্ত্র পুলিশ দলবেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সেই অবস্থায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা করেও তাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফেরানো যায়নি।
এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রংপুরের আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মীদের হাতে খুন হয়েছে, তার প্রতিটি মৃত্যুই ছিল একেকটি লোমহর্ষক ঘটনা। এসব ঘটনা আমরা আন্দোলনের মাঠে দেখেছি এবং টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি।
আলোচনার প্রথম ঘটনায় অর্থাৎ সোনাইমুড়ি থানা পুলিশ হত্যার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতে উপস্থাপন। এই আলামত সুখকর নয়। এটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে শুধু সোনাইমুড়ি থানাই আক্রান্ত হয়নি বা ওই থানার একজন পুলিশ সদস্যই মারা যায়নি।
ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান হাতিয়ার পুলিশ বাহিনীকে আন্দোলনে নামা এসব কিশোর-যুবক ছাত্র সমাজ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ পরাস্ত করতে পেরেছিল বলেই সেই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এসেছে নতুন বাংলাদেশ। সেই বিজয় আনতে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছেন। তাদের নির্মমভাবে খুন করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনীতিক দলের কর্মী এবং সেই সরকারের পোষ্য এই পুলিশ বাহিনীর একটি গ্রুপ। আর সেই গ্রুপটি যদি আন্দোলনকারীদের খুনি বানিয়ে বিজয় লাভ করে তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা গণ-আন্দোলনের বিজয় কলঙ্কিত হবে। যার জন্য এ ঘটনাটিকে একটি অ্যাসিড টেস্ট বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারলে বিজয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করার সময়ের ব্যাপার মাত্র।
স্বস্তির বিষয় হলো অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি দ্রুত আমলে এনেছেন। আন্দোলনের সময় থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কোনও আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং একই সময়ে বলতে চাই, সোনাইমুড়ির ঘটনায় যে তিন কিশোর-যুবকের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতে উপস্থাপন করা হলো তাদের কী হবে?
বলতে দ্বিধা নেই, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ১৬৪ ধারায় কীভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করে তা দেশের মানুষের অজানা নয়। এই পুলিশের তেলেসমাতিতেই তো আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ১৬৪ ধারায় জজ মিয়ার মতো নিরীহ নিরপরাধী মানুষও স্বীকারোক্তি দিয়েছিল।
সোনাইমুড়ির পুলিশ হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে সব মৃত্যুই বেদনাদায়ক। তবে এটাও তো চাক্ষুষ সত্য যে গণ-আন্দোলনকারীদের অমানবিক নির্যাতন এবং নির্বিচারে হত্যা করেছে ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠনের কর্মী এবং পুলিশ বাহিনী। ফলে তাদের ওপর সংগ্রামী জনতার যে ক্ষোভ ছিল, সেই ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বিজয়ক্ষণে প্রতিপক্ষ পুলিশ গণপিটুনিতে মারা যেতেই পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া সোনাইমুড়ি কিশোর যুবকদের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখবে।
এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসা যাক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে তাদের দমনের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন মর্মান্তিক দৃশ্য আমরা রাস্তায় স্বচক্ষে দেখেছি, টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি, সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি। তৎকালীন সরকারের পোষ্য এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের কর্মীদের সঙ্গে মিশে আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। আহত আন্দোলনকারীদের কী নির্মমভাবে পুলিশের গাড়ির থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে, আবার মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, মৃতদের লাশ আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কী ভয়াবহ সেই নির্যাতনের চিত্র! পুলিশ সদস্য কর্তৃক আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করার সেসব ভিডিও ফুটেজ এখনও আছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কে তাদের ধরে সোনাইমুড়ির মতো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে আদালতে উপস্থাপন করবে? নাকি তারা সরকারি পোশাকের বদৌলতে পার পেয়ে যাবে?
বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ভাবতে হবে। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে, তার কতা তারা করে গেল; নাকি প্রত্যাশার বিপরীত কিছু করল সেই জবাবদিহিও একদিন সামনে এসে দাঁড়াবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক