বিনোদন ডেস্ক: ছাত্র ও গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক তারকা। তাদের প্রতিক্রিয়ায় ‘বিজয়ের আনন্দের’ পাশাপাশি রয়েছে সহিংসতা বন্ধ করে দেশের সম্পদ সুরক্ষিত রাখার অনুরোধও এসেছে।
সহানুভূতিশীল আচরণ চাইলেন শাকিব খান
মঙ্গলবার সকালে শাকিব খান ফেইসবুকে লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত সবার চাওয়া পূরণ হয়েছে। জয় পেয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই জয়ের আনন্দ যেন আমাদের দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতা ম্লান করে না দেয়। এই মুহূর্তে আমাদের সবার আরো বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে- সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সম্পদ।” সবশেষে নায়ক লিখেছেন, “জাতি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকে এবং দেশের সম্পদ সুরক্ষিত থাকে- আসুন আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাই। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।”
শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা বাঁধনের
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পাশেই ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও অংশ নিয়েছিলেন এই তারকা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই অভিনেত্রী ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এখনই সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করার ডাক দিচ্ছি। আমি সবাইকে শান্ত থাকার এবং শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন, যদি আমাদের হিন্দু ভাই-বোন এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করা হয়।” বর্তমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমরা স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু বর্তমান সহিংসতা নিন্দনীয়। এই বিপ্লব অযৌক্তিক আক্রমণের কারণে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। আমরা প্রতিবাদকারীদের কাছে অনুরোধ করছি, শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং সেনাবাহিনীকে ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে দিন, যারা আবারও আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছেন। আসুন, আমরা একসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি। দয়া করে বাড়ি ফিরে যান এবং সব ধরনের সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করুন।”
এই মূহূর্তে কিছুই কারোই হাতে নেই: প্রিন্স মাহমুদ
মঙ্গলবার সকালে গীতিকবি, সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, “সরকারশূন্য সময়। কিছু ঘটনার রেশ টেনে ‘এই বিজয় কি চেয়েছিলাম’ ধরনের হতাশা আর উস্কানিমূলক কথাবার্তা না বলি। এই তাজা প্রাণের বলিদান ভুলে না যাই। বৈষম্যহীন-অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়বই। যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই মূহূর্তে কিছুই কারোই হাতে নেই …।”
ঐক্যবদ্ধ জাতিই পারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে: আসিফ আকবর
তিন দিন আগে রবীন্দ্র সরোবরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরও। সরকারের পদত্যাগও চেয়েছিলেন। তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “সন্তানদের মেধা বাংলাদেশের সেরা সম্পদ। এই বাংলাদেশ পরিচালিত হতে হবে মেধাবী দেশপ্রেমিকদের মাধ্যমে। আজ ৩৬শে জুলাই (৫ আগস্ট) স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় দেখেছে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে-স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে।” তিনি আরও লিখেছেন, “রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে, সকল বিভক্তি কাটিয়ে জাতিকে হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিই পারে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।” আসিফের ভাষ্য, “আমাদের সন্তান এই বিজয়ী ছাত্রসমাজের স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। শহীদ ছাত্র/ছাত্রী এবং তাদের পরিবারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম, হতাশ হইনি। বিশ্বাস ছিল এই তারুণ্যই একদিন সমস্ত অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের অভিনন্দন জানাই একজন গর্বিত বাবা হিসাবে।” সব শেষে আসিফ লিখেছেন, “দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবুজের বুকে লাল/সেতো উড়বেই চিরকাল। সাবাশ বাংলাদেশ।” এছাড়া ‘নগরবাউল’ জেমস তার জনপ্রিয় ‘শুধু ভালোবাসাটুকু থাক আর সব মুছে যাক’ গানটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘জয় তরুণের জয়।’ অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তাসনিয়া ফারিণ, সাবিলা নূর, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীসহ অনেক তারকাও উচ্ছ্বসিত।
ছাত্রদের আন্দোলন কখনোই বিফলে যায়নি: হানিফ সংকেত
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে সোমবার (০৫ আগস্ট) দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এবার এ বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন উপস্থাপক ও নির্মাতা হানিফ সংকেত। তিনি বলেন, এই তরুণ প্রজন্মকে অভিনন্দন জানাই। ৫২, ৬৯ ও ৯০ এর মতো ২৪ সালেও গণ-আন্দোলনেও নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। ছাত্রদের আন্দোলন কখনোই বিফলে যায়নি। এবারও ছাত্ররা সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবক হিসেবে হানিফ সংকেতেরও সংহতি ছিল। তার ছেলে ও মেয়ে নিয়মিত মিছিলেও ছিলেন। শেষে তার স্ত্রীও অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। হানিফ সংকেতের প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশনের কর্মীরাও আন্দোলনের পাশে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি সব সময় নীরবেই কাজ করি, প্রচারের জন্য নয়। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের বিজয় হলো, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকার করা হবে। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে এ উপস্থাপক বলেন, আমি একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চাই। যা হবে নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত। যারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। যাদের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ পাব।
বিজয়ের উল্লাসে যা লিখলেন তারকারা
ট্যাগস :
বিজয়ের উল্লাসে যা লিখলেন তারকারা
জনপ্রিয় সংবাদ