ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

বিজয়ের আনন্দ: কী বলে ইসলাম

  • আপডেট সময় : ০৮:২৭:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

মাহমুদ আহমদ

ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। ইসলামে বিজয়, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন দেশপ্রেমিকের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। রাসুল (সা.) যখন অত্যাচারী কাফেরদের কারণে স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় পাড়ি জমাচ্ছিলেন, তখন তার চোখ থেকে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল। তিনি মক্কার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিতো, কখনো আমি তোমাকে ত্যাগ করতাম না’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা ও তাফসিরে ইবনে কাসির)।

অন্যদিকে হিজরতের পর রাসুল (সা.) মদিনা নগরীকেও খুব ভালোবেসেছেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে রাসুল (সা.)-এর চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠতো। তিনি বলতেন, ‘এই ওহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি’ (বুখারি ও মুসলিম)।

স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। বিজয় ও স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিশেষ আনন্দের দিন। আমাদের স্বাধীনতার বিজয় দিবস। বাংলাদেশের এ বিজয়ের রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি। এর শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।

ইসলাম চায় সব মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। ইসলাম আমাদের এ শিক্ষাই দেয় যে, আমরা যেন আমাদের ভূখণ্ড তথা মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ থেকেও আমরা মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপনের দৃষ্টান্ত পেয়ে থাকি। তাই বলা যায়, দেশপ্রেম রাষ্ট্রের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র।

রাষ্ট্রের সাথে কোনো সত্যিকার ইমানদার গাদ্দারি করতে পারে না। তাই এ দেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব, আমাদের অহঙ্কার। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাকের জমিনে তিনি পরাধীনতা পছন্দ করেন না। ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক।

সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টা প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এ স্বাধীনতার জন্যই মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন। তিনি সকলকে উপভোগ করতে দিয়েছিলেন বিজয়ের প্রকৃত আনন্দ।

বিজয় কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে দুটি সুরা রয়েছে। একটি সুরাতুল ‘ফাতাহ’ (বিজয়), আরেক সুরার নাম ‘আন নাসর’ (মুক্তি ও সাহায্য)। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে; তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কোরো আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কোরো। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল’ (সুরা নসর, আয়াত : ১-৩)। এখানে বিজয়ের যে আনন্দ প্রকাশ; তা আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করার মাধ্যমেই ইসলাম আমাদের দেয়।

ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা গেছে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবীর আগমন হয়েছে- তারা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। আর এই স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেই হোক বা ধমীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক। এক কথায় বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রেরিত নবীদের কাজ।

আমরা জানি, গোলাম মুক্ত করে এবং সর্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার জন্য যিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং শতভাগ সফল হয়েছেন তিনি হলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি হচ্ছেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল সূর্য। তার কিরণ দূর-দূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে। তিনি নিজের মাঝে সব ধরনের স্বাধীনতাকে ধারণ করেছিলেন। তিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরনের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন।

বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কীভাবে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বত্র স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যেমন লড়েছেন, তেমনি তিনি সকলকে করেছিলেনও স্বাধীন। একান্তই সত্য যে, বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার কারণে স্বাধীনতা কেবল তাদের হাতছাড়া হয়নি বরং সে জাতির ইহ ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বিবেক ও বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাউকে পরাধীন করেননি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমার প্রভু-প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই অবশ্যই এক সাথে ইমান নিয়ে আসত। তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করবে?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, আল্লাহ সবার স্বাধীনতা চান। তিনি চাইলে সবাইকে একসাথে মুমিন বানাতে পারেন কিন্তু তা তিনি করেননি। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বুঝেশুনে ইমান আনে।

দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবী ও বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ উদ্যাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকাআত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি (সা.) সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে; তারা যত অত্যাচার নির্যাতনকারীই হোক তারাও নিরাপদ। এ ছিল প্রিয়নবীর মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।

বিজয়ের দিনে আমাদের করণীয়
আগত বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, দোয়া এবং শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে উদ্যাপন করার চেষ্টা করতে পারি।

মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের আনন্দে প্রথমেই তিনি নফল নামাজ আদায় করেছিলেন। আমরাও পারি রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপন করতে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এ বিজয় দান করেছেন। তাই আল্লাহপাকের শোকরিয়াও আদায় করতে হবে আমাদের সবাইকে।

আসুন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত আর আদর্শ দেশ গঠনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ নেই। আল্লাহপাক আমাদের ওই তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয়ের আনন্দ: কী বলে ইসলাম

আপডেট সময় : ০৮:২৭:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

মাহমুদ আহমদ

ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। ইসলামে বিজয়, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন দেশপ্রেমিকের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। রাসুল (সা.) যখন অত্যাচারী কাফেরদের কারণে স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় পাড়ি জমাচ্ছিলেন, তখন তার চোখ থেকে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল। তিনি মক্কার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিতো, কখনো আমি তোমাকে ত্যাগ করতাম না’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা ও তাফসিরে ইবনে কাসির)।

অন্যদিকে হিজরতের পর রাসুল (সা.) মদিনা নগরীকেও খুব ভালোবেসেছেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে রাসুল (সা.)-এর চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠতো। তিনি বলতেন, ‘এই ওহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি’ (বুখারি ও মুসলিম)।

স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। বিজয় ও স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিশেষ আনন্দের দিন। আমাদের স্বাধীনতার বিজয় দিবস। বাংলাদেশের এ বিজয়ের রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি। এর শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।

ইসলাম চায় সব মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। ইসলাম আমাদের এ শিক্ষাই দেয় যে, আমরা যেন আমাদের ভূখণ্ড তথা মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ থেকেও আমরা মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপনের দৃষ্টান্ত পেয়ে থাকি। তাই বলা যায়, দেশপ্রেম রাষ্ট্রের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র।

রাষ্ট্রের সাথে কোনো সত্যিকার ইমানদার গাদ্দারি করতে পারে না। তাই এ দেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব, আমাদের অহঙ্কার। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাকের জমিনে তিনি পরাধীনতা পছন্দ করেন না। ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক।

সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টা প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এ স্বাধীনতার জন্যই মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন। তিনি সকলকে উপভোগ করতে দিয়েছিলেন বিজয়ের প্রকৃত আনন্দ।

বিজয় কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে দুটি সুরা রয়েছে। একটি সুরাতুল ‘ফাতাহ’ (বিজয়), আরেক সুরার নাম ‘আন নাসর’ (মুক্তি ও সাহায্য)। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে; তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কোরো আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কোরো। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল’ (সুরা নসর, আয়াত : ১-৩)। এখানে বিজয়ের যে আনন্দ প্রকাশ; তা আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করার মাধ্যমেই ইসলাম আমাদের দেয়।

ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা গেছে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবীর আগমন হয়েছে- তারা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। আর এই স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেই হোক বা ধমীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক। এক কথায় বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রেরিত নবীদের কাজ।

আমরা জানি, গোলাম মুক্ত করে এবং সর্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার জন্য যিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং শতভাগ সফল হয়েছেন তিনি হলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি হচ্ছেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল সূর্য। তার কিরণ দূর-দূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে। তিনি নিজের মাঝে সব ধরনের স্বাধীনতাকে ধারণ করেছিলেন। তিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরনের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন।

বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কীভাবে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বত্র স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যেমন লড়েছেন, তেমনি তিনি সকলকে করেছিলেনও স্বাধীন। একান্তই সত্য যে, বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার কারণে স্বাধীনতা কেবল তাদের হাতছাড়া হয়নি বরং সে জাতির ইহ ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বিবেক ও বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাউকে পরাধীন করেননি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমার প্রভু-প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই অবশ্যই এক সাথে ইমান নিয়ে আসত। তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করবে?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, আল্লাহ সবার স্বাধীনতা চান। তিনি চাইলে সবাইকে একসাথে মুমিন বানাতে পারেন কিন্তু তা তিনি করেননি। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বুঝেশুনে ইমান আনে।

দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবী ও বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ উদ্যাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকাআত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি (সা.) সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে; তারা যত অত্যাচার নির্যাতনকারীই হোক তারাও নিরাপদ। এ ছিল প্রিয়নবীর মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।

বিজয়ের দিনে আমাদের করণীয়
আগত বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, দোয়া এবং শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে উদ্যাপন করার চেষ্টা করতে পারি।

মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের আনন্দে প্রথমেই তিনি নফল নামাজ আদায় করেছিলেন। আমরাও পারি রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপন করতে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এ বিজয় দান করেছেন। তাই আল্লাহপাকের শোকরিয়াও আদায় করতে হবে আমাদের সবাইকে।

আসুন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত আর আদর্শ দেশ গঠনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শপথ নেই। আল্লাহপাক আমাদের ওই তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ