ঢাকা ১১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি পুনর্ব্যক্ত

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি পুনরায় জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে এনসিপির আয়োজনে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্পষ্টভাবে আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন হাজারো, লক্ষ মানুষ যাঁরা রাজপথে নেমেছিলেন, তাঁরা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি, আমরা বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব। আমরা বাংলার ছাত্র, জনতা, তরুণদের আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাব।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিচার এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আমরা এখনো বিচার সম্পন্ন দেখতে পাইনি। আমাদের যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের যে সংস্কার সেটিও সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল কেবল। আমরা মনে করি, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য।’
নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়ে গাইবান্ধা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাইবান্ধা পৌরপার্কে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। সেই সরকার পতন হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ গঠন এখনও হয়নি। এবার আমরা সেই নতুন দেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি। গাইবান্ধা থেকেই সেই সংগ্রাম শুরু করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাইবান্ধার মানুষ দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গাইবান্ধার ছয়জন শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ নতুন স্বাধীনতার পথ তৈরি করেছে। এই আত্মত্যাগ এনসিপি এবং বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ রাখবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষ রক্ত দিয়েছে। এক নতুন বাংলাদেশের জন্য। যেখানে কথা বলার জন্য কাউকে পুলিশের লাঠি, গুলি কিংবা নির্যাতনের শিকার হতে হবে না। ২০২৪ সালেই আমাদের ভয় কেটে গেছে। বাংলাদেশে আর কোনো ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠতে দেবো না।’
নাহিদ ইসলাম সবাইকে সাহস করে এলাকার সমস্যা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে কথা বলবেন, মত প্রকাশ করবেন। এনসিপি আপনাদের পাশে আছে।’
এর আগে সকালে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সাদুল্লাপুরে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে দুপুরে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন সড়কে জনসাধারণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। গাইবান্ধা থেকে শুরু হওয়া ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে এনসিপির সারা দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস। এ ছাড়া গাইবান্ধার সাত উপজেলার এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আবু সাঈদ ও সব শহীদকে স্মরণ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অনুপ্রেরণা ছিলেন বলে মন্তব্য করেন এই প্ল্যাটফর্মটির তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ সব শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা যখন আমরা শুনতে পেয়েছিলাম শহীদ মিনার থেকে, বাংলাদেশ তখন শোকে কেঁপে উঠেছিল। ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এ আন্দোলন অন্য দিকে মোড় নেয়। লাখ লাখ তরুণ ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের যে প্রতিবাদ, যে নতুন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা, তা ঘোষণা করেন।’
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা তার ব্যবস্থার বিলোপ চেয়েছি। একটি নতুন দেশ গড়ার জন্য যে উদ্যম দরকার, রাষ্ট্রগঠনের জন্য আমাদের কাজ করা দরকার, সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যই মূলত এই জুলাই পদযাত্রা। যেখানে আমরা ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলব, তাঁদের কথা শুনব। যাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন, সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা তাঁদের কাছে তুলে ধরব।’
এনসিপির আহ্বায়ক ঘোষণা দেন, ৬৪ জেলায় পদযাত্রা শেষে ৩ আগস্ট ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। ওই সমাবেশ থেকে তাঁরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়বেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে এবং বাংলাদেশের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাঁদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের পুরোনো যে সংবিধান এই মুজিববাদী সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন এক সংবিধান প্রণয়ন করতে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
কর্মসূচি: জাতীয় নাগরিক পার্টির ৬৪ জেলা পদযাত্রার প্রথম দিন রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গাইবান্ধায় পথসভা ও পদযাত্রা করে এনসিপি।
বেলা তিনটায় রংপুরের পার্কের মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়ে পদযাত্রা করে টাউন হলে পথসভা করে। এ ছাড়া সন্ধ্যা সাতটায় রংপুরের কাউনিয়ায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব কর্মসূচিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ অংশ নিচ্ছেন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু

বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি পুনর্ব্যক্ত

আপডেট সময় : ০৯:০৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি পুনরায় জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে এনসিপির আয়োজনে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্পষ্টভাবে আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন হাজারো, লক্ষ মানুষ যাঁরা রাজপথে নেমেছিলেন, তাঁরা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি, আমরা বাংলার প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব। আমরা বাংলার ছাত্র, জনতা, তরুণদের আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাব।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিচার এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আমরা এখনো বিচার সম্পন্ন দেখতে পাইনি। আমাদের যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের যে সংস্কার সেটিও সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, এটা সরকার পতনের আন্দোলন ছিল কেবল। আমরা মনে করি, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য।’
নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়ে গাইবান্ধা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাইবান্ধা পৌরপার্কে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। সেই সরকার পতন হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ গঠন এখনও হয়নি। এবার আমরা সেই নতুন দেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি। গাইবান্ধা থেকেই সেই সংগ্রাম শুরু করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাইবান্ধার মানুষ দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গাইবান্ধার ছয়জন শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ নতুন স্বাধীনতার পথ তৈরি করেছে। এই আত্মত্যাগ এনসিপি এবং বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ রাখবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষ রক্ত দিয়েছে। এক নতুন বাংলাদেশের জন্য। যেখানে কথা বলার জন্য কাউকে পুলিশের লাঠি, গুলি কিংবা নির্যাতনের শিকার হতে হবে না। ২০২৪ সালেই আমাদের ভয় কেটে গেছে। বাংলাদেশে আর কোনো ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠতে দেবো না।’
নাহিদ ইসলাম সবাইকে সাহস করে এলাকার সমস্যা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে কথা বলবেন, মত প্রকাশ করবেন। এনসিপি আপনাদের পাশে আছে।’
এর আগে সকালে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সাদুল্লাপুরে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে দুপুরে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন সড়কে জনসাধারণের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। গাইবান্ধা থেকে শুরু হওয়া ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে এনসিপির সারা দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস। এ ছাড়া গাইবান্ধার সাত উপজেলার এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
আবু সাঈদ ও সব শহীদকে স্মরণ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দেওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অনুপ্রেরণা ছিলেন বলে মন্তব্য করেন এই প্ল্যাটফর্মটির তৎকালীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ সব শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা যখন আমরা শুনতে পেয়েছিলাম শহীদ মিনার থেকে, বাংলাদেশ তখন শোকে কেঁপে উঠেছিল। ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এ আন্দোলন অন্য দিকে মোড় নেয়। লাখ লাখ তরুণ ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের যে প্রতিবাদ, যে নতুন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা, তা ঘোষণা করেন।’
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা তার ব্যবস্থার বিলোপ চেয়েছি। একটি নতুন দেশ গড়ার জন্য যে উদ্যম দরকার, রাষ্ট্রগঠনের জন্য আমাদের কাজ করা দরকার, সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যই মূলত এই জুলাই পদযাত্রা। যেখানে আমরা ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলব, তাঁদের কথা শুনব। যাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের সেই স্বপ্ন, সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা তাঁদের কাছে তুলে ধরব।’
এনসিপির আহ্বায়ক ঘোষণা দেন, ৬৪ জেলায় পদযাত্রা শেষে ৩ আগস্ট ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। ওই সমাবেশ থেকে তাঁরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়বেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, যারা গণহত্যা সংঘটিত করেছে এবং বাংলাদেশের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাঁদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের পুরোনো যে সংবিধান এই মুজিববাদী সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন এক সংবিধান প্রণয়ন করতে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
কর্মসূচি: জাতীয় নাগরিক পার্টির ৬৪ জেলা পদযাত্রার প্রথম দিন রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গাইবান্ধায় পথসভা ও পদযাত্রা করে এনসিপি।
বেলা তিনটায় রংপুরের পার্কের মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়ে পদযাত্রা করে টাউন হলে পথসভা করে। এ ছাড়া সন্ধ্যা সাতটায় রংপুরের কাউনিয়ায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব কর্মসূচিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীর উদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ অংশ নিচ্ছেন।