ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ছাত্রদল

ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি অব্যাহত

  • আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

ছাত্রদলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ- ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও নিন্দা ও প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা সোমবারও (১০ মার্চ) অব্যাহত দেখা গেছে।

মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুকে ‘বোন’ সম্বোধন করে ছাত্রদলের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যারা আমাদের বোনকে ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।’

এদিকে এদিনও রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে পৃথক ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের: সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

বক্তব্যে সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভাপতি প্রফেসর ড. শামীমা তাসনীম বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে এসেছি ধর্ষণের ঘটনায় অনেক সময় আলামত নষ্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অনেক সময় থানায় মামলাও নেওয়া হয়নি। যদিওবা কোনো ধর্ষকে আইনের আওতায় আনা গেছে বা ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে, দেখা গেছে তিনি কোনো না কোনো এমপির আত্মীয় পরিচয়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

ছবি সংগৃহীত

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তার প্রমাণ আবার দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই নতুন বাংলাদেশকে আমরা কলঙ্কিত হতে দেব না।

সংগঠনের সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা বকুল বলেন, আজ একটি পরিবারে, ঘরে শিশু নিরাপদ নয়। আমাদের মানবিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে একজন নারী যেন ঘরে বাইরে সমান নিরাপদ বোধ করবেন। আওয়ামী লীগের নৈতিকতাবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের নৈতিকতার বিলুপ্ত হয়েছে। সেজন্য সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নৈতিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সহ-সভাপতি ডা. শাহীন আরা আনওয়ারী, সহকারী সেক্রেটারি সাহেল মুস্তারি, ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলাম প্রমুখ।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান দাবি জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের: ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম আবরার, শামসুদ্দোহা আশরাফী, লুৎফুর রহমান ফরায়জী, মোস্তফা কামাল, লোকমান হোসেন জাফরী প্রমুখ।

ছবি সংগৃহীত

বক্তারা বলেন, দেশে নারীসমাজের নিরাপত্তা নিয়ে আজ সচেতন মহল মাত্রই উদ্বিগ্ন। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ আমরা অতীতেও দেখিনি, বর্তমানেও অনুপস্থিত। অথচ ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এবং তা প্রকাশ্যে দ্রুত কার্যকর করলে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন নওগাঁর শিক্ষার্থীরা: সারা দেশে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় নওগাঁয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রশাসনকে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, জাহানে মোতায়েন যুক্ত, সাদমান সাকিব, রিদিতা আহমেদ রোজা, নাবিলা তাবাসসুম বর্ষাসহ অন্যান্যরা। বিক্ষোভ সমাবেশে রিদিতা আহমেদ রোজা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশে যেভাবে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ বেড়েছে তাতে শিশু থেকে বয়স্ক কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমরা এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পাই। সব সময় নিজেকে অনিরাপদ মনে হচ্ছে। আজকেও যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম চিন্তা হচ্ছিল বাসায় ভালোভাবে ফিরতে পারবো কি না। অথচ যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া না গেলে আগামীতে মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাবে। আর মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যোগ্যতা নেই সেই চেয়ারে বসে থাকার।’

ছবি সংগৃহীত

আরেক শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ছাত্ররা জুলাই আন্দোলন শুধু স্বৈরাচার সরকার পরিবর্তনের জন্য করেননি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সে সুফলগুলো আমরা সাধারণ মানুষ পাচ্ছি না। দেশে ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়ে চলছে। বিশেষ করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার যে বহিঃপ্রকাশ দেখাচ্ছে এজন্যই আজকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনকে আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে না পারে আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে।’

ধর্ষণের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ছাত্রদল: মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুকে ‘বোন’ সম্বোধন করে ছাত্রদলের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যারা আমাদের বোনকে ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।’
সোমবার (১০ মার্চ) হাইকোর্ট গেটের সামনের সড়কে ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধনে নেতারা একথা বলেন।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, দিনের পর দিন নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গতানুগতিক ধারার বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি। সরকারের সদিচ্ছার অভাব আমরা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করছি।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-বোনরা ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা ক্লাস বর্জন করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সর্বাত্মক সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের বোনের ধর্ষকদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল রাজপথে থাকবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রদল সভাপতি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরের সমাজব্যবস্থা যে পরিমাণে ধ্বংস হয়েছে, আমরা সেটির পরিবর্তন চাই। আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যদি আগামীতে কোনো সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যতদিন রয়েছেন, দয়া করে আজ থেকে আপনারা আরো বেশি সচেষ্ট হন। প্রতিটি ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সুনিশ্চিত করুন। এ ছাড়া অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল সরকার। এ সরকারকে এ দেশের সব মানুষ সমর্থন দেওয়ার পরও তারা আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। আপনারা দেখেছেন মাগুরায় আট বছরের শিশুকে কীভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেজন্য গত সাত বা আট মাস ধরে নারীর প্রতি যে সহিংসতা যে নির্যাতন সেগুলো কিন্তু ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানববন্ধনে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।

ধর্ষণের আরো খবর-

হবিগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণ, খবর শুনে বাবার মৃত্যু: হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের (বানিয়াচং সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, রোববার বানিয়াচংয়ের দক্ষিণ যাত্রাপাশা বনমথুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মেয়েটির নানি সোমবার বানিয়াচং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে। এ ঘটনায় আটকরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না। ঘটনার বর্ণনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস বলেন, গত ৯ মার্চ বিকালে শিশুটি দক্ষিণ যাত্রাপাশায় তার বাড়িতে খেলাধুলা করছিল। এক পর্যায়ে তাকে ১০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাড়ির পাশের মুক্তা গাছের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেয়েটি বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরকে আটক করে।
ভিকটিমের মামা মুমিন মিয়া বলেন, তার ভগ্নিপতি (৫০) বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। রোববার বিকালে তার মেয়ের এই ঘটনা শোনার পর থেকে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার বেলা ১১টায় তিনি মারা যান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আটক দুই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ: রাজধানীর গুলশানে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক এলাকায় দশ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশকে (৪০) পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গত রোববার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে গুলশান থানা পুলিশ সোমবার (১০ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে শিশুটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাঈম উদ্দিন সুজন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুর মা জানান- গতকাল (রোববার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশ শিশুটিকে বাসায় একা পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে শিশুটি তার মায়ের কাছে বিষয়টি জানালে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে গুলশান থানায় এসে অভিযুক্ত সজলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ শিশুটিকে মেডিকেল চেকআপের জন্য সোমবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে সালিশে ডেকে অপবাদ, আত্মহত্যা: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় সালিশে ডেকে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে উল্টো অপবাদ দেওয়ার পর ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে সে। ৬ মার্চ ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন মামলা করেন তার মা। ওই মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি রাকিব হোসেনকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১০ মার্চ) সকালে কুমিল্লার লাকসাম এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার রাকিব হোসেন রামগতি উপজেলার পশ্চিম চর কোলাকোপা এলাকার মো. খবির হোসেনের ছেলে। ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনায় ৭ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে রাকিব হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার পর হেলাল উদ্দিন নামের আরো একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হলো।
পুলিশ জানায়, ১ মার্চ ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো বিচার পায়নি ওই কিশোরী। উল্টো তাকে অপবাদ দেওয়া হয়। ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরীকে বাড়িতে রেখে তার মা বাড়ির পাশের জমিতে ফসল দেখতে যান। এসে দেখেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ মার্চ রাতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে রাকিব ধর্ষণ করেন। কিশোরীর মা টের পেয়ে ঘরে ঢুকলে রাকিব পালিয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি তিনি রাকিবের মা-বাবাকে জানান। পরে এ নিয়ে অভিযুক্ত রাকিবের পরিবার একটি সালিস বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনায় কোনো বিচার করা হয়নি। উল্টো কিশোরীকে অপবাদ দেওয়া হয়। এরপর মামলার আরেক আসামি হেলাল উদ্দিন কিশোরীর বাড়িতে ঢুকে তার চুল কেটে গ্রামে ঘোরানোর হুমকি দেন। ওই দিনই কিশোরী আত্মহত্যা করে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সালিশি বৈঠকের হেলাল উদ্দিন অপবাদ দিয়ে হুমকি দেন। তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

লালমাটিয়ায় দুই তরুণী লাঞ্ছিত, রিংকুকে হেফাজতে নিল পুলিশ: রাজধানীর লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রিংকু নামের এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
গত রোববার (৯ মার্চ) রাতে লালমাটিয়া এলাকা থেকে রিংকুকে আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সোমবার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘লালমাটিয়ার উত্ত্যক্তকারী রিংকুকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তবে পুলিশ বলছে, রিংকুকে গ্রেফতার নয়, হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ১ মার্চ লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ঘটে। এক ব্যক্তি ধূমপান নিয়ে আপত্তি তোলেন, যা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে রিংকু নামের ব্যক্তি তরুণীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক লাঞ্ছনার চেষ্টা করেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ছাত্রদল

ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি অব্যাহত

আপডেট সময় : ০৮:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও নিন্দা ও প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা সোমবারও (১০ মার্চ) অব্যাহত দেখা গেছে।

মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুকে ‘বোন’ সম্বোধন করে ছাত্রদলের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যারা আমাদের বোনকে ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।’

এদিকে এদিনও রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে পৃথক ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের: সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

বক্তব্যে সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভাপতি প্রফেসর ড. শামীমা তাসনীম বলেন, যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে এসেছি ধর্ষণের ঘটনায় অনেক সময় আলামত নষ্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অনেক সময় থানায় মামলাও নেওয়া হয়নি। যদিওবা কোনো ধর্ষকে আইনের আওতায় আনা গেছে বা ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে, দেখা গেছে তিনি কোনো না কোনো এমপির আত্মীয় পরিচয়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

ছবি সংগৃহীত

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তার প্রমাণ আবার দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই নতুন বাংলাদেশকে আমরা কলঙ্কিত হতে দেব না।

সংগঠনের সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা বকুল বলেন, আজ একটি পরিবারে, ঘরে শিশু নিরাপদ নয়। আমাদের মানবিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে একজন নারী যেন ঘরে বাইরে সমান নিরাপদ বোধ করবেন। আওয়ামী লীগের নৈতিকতাবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের নৈতিকতার বিলুপ্ত হয়েছে। সেজন্য সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নৈতিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সহ-সভাপতি ডা. শাহীন আরা আনওয়ারী, সহকারী সেক্রেটারি সাহেল মুস্তারি, ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলাম প্রমুখ।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান দাবি জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের: ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম আবরার, শামসুদ্দোহা আশরাফী, লুৎফুর রহমান ফরায়জী, মোস্তফা কামাল, লোকমান হোসেন জাফরী প্রমুখ।

ছবি সংগৃহীত

বক্তারা বলেন, দেশে নারীসমাজের নিরাপত্তা নিয়ে আজ সচেতন মহল মাত্রই উদ্বিগ্ন। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ আমরা অতীতেও দেখিনি, বর্তমানেও অনুপস্থিত। অথচ ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এবং তা প্রকাশ্যে দ্রুত কার্যকর করলে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন নওগাঁর শিক্ষার্থীরা: সারা দেশে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় নওগাঁয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রশাসনকে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, জাহানে মোতায়েন যুক্ত, সাদমান সাকিব, রিদিতা আহমেদ রোজা, নাবিলা তাবাসসুম বর্ষাসহ অন্যান্যরা। বিক্ষোভ সমাবেশে রিদিতা আহমেদ রোজা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশে যেভাবে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ বেড়েছে তাতে শিশু থেকে বয়স্ক কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমরা এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পাই। সব সময় নিজেকে অনিরাপদ মনে হচ্ছে। আজকেও যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম চিন্তা হচ্ছিল বাসায় ভালোভাবে ফিরতে পারবো কি না। অথচ যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া না গেলে আগামীতে মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাবে। আর মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যোগ্যতা নেই সেই চেয়ারে বসে থাকার।’

ছবি সংগৃহীত

আরেক শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ছাত্ররা জুলাই আন্দোলন শুধু স্বৈরাচার সরকার পরিবর্তনের জন্য করেননি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সে সুফলগুলো আমরা সাধারণ মানুষ পাচ্ছি না। দেশে ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়ে চলছে। বিশেষ করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার যে বহিঃপ্রকাশ দেখাচ্ছে এজন্যই আজকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনকে আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে না পারে আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে।’

ধর্ষণের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ছাত্রদল: মাগুরায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুকে ‘বোন’ সম্বোধন করে ছাত্রদলের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যারা আমাদের বোনকে ধর্ষণ করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।’
সোমবার (১০ মার্চ) হাইকোর্ট গেটের সামনের সড়কে ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধনে নেতারা একথা বলেন।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, দিনের পর দিন নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গতানুগতিক ধারার বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি। সরকারের সদিচ্ছার অভাব আমরা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করছি।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-বোনরা ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা ক্লাস বর্জন করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সর্বাত্মক সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের বোনের ধর্ষকদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল রাজপথে থাকবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রদল সভাপতি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরের সমাজব্যবস্থা যে পরিমাণে ধ্বংস হয়েছে, আমরা সেটির পরিবর্তন চাই। আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যদি আগামীতে কোনো সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার নারী নির্যাতন বন্ধ করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যতদিন রয়েছেন, দয়া করে আজ থেকে আপনারা আরো বেশি সচেষ্ট হন। প্রতিটি ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সুনিশ্চিত করুন। এ ছাড়া অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল সরকার। এ সরকারকে এ দেশের সব মানুষ সমর্থন দেওয়ার পরও তারা আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। আপনারা দেখেছেন মাগুরায় আট বছরের শিশুকে কীভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেজন্য গত সাত বা আট মাস ধরে নারীর প্রতি যে সহিংসতা যে নির্যাতন সেগুলো কিন্তু ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানববন্ধনে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।

ধর্ষণের আরো খবর-

হবিগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণ, খবর শুনে বাবার মৃত্যু: হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের (বানিয়াচং সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, রোববার বানিয়াচংয়ের দক্ষিণ যাত্রাপাশা বনমথুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মেয়েটির নানি সোমবার বানিয়াচং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে। এ ঘটনায় আটকরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না। ঘটনার বর্ণনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস বলেন, গত ৯ মার্চ বিকালে শিশুটি দক্ষিণ যাত্রাপাশায় তার বাড়িতে খেলাধুলা করছিল। এক পর্যায়ে তাকে ১০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাড়ির পাশের মুক্তা গাছের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেয়েটি বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরকে আটক করে।
ভিকটিমের মামা মুমিন মিয়া বলেন, তার ভগ্নিপতি (৫০) বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। রোববার বিকালে তার মেয়ের এই ঘটনা শোনার পর থেকে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার বেলা ১১টায় তিনি মারা যান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আটক দুই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ: রাজধানীর গুলশানে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক এলাকায় দশ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশকে (৪০) পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গত রোববার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে গুলশান থানা পুলিশ সোমবার (১০ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে শিশুটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাঈম উদ্দিন সুজন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুর মা জানান- গতকাল (রোববার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশ শিশুটিকে বাসায় একা পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে শিশুটি তার মায়ের কাছে বিষয়টি জানালে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে গুলশান থানায় এসে অভিযুক্ত সজলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ শিশুটিকে মেডিকেল চেকআপের জন্য সোমবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সজল হোসেন পলাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে সালিশে ডেকে অপবাদ, আত্মহত্যা: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় সালিশে ডেকে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে উল্টো অপবাদ দেওয়ার পর ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে সে। ৬ মার্চ ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পরদিন মামলা করেন তার মা। ওই মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামি রাকিব হোসেনকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১০ মার্চ) সকালে কুমিল্লার লাকসাম এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার রাকিব হোসেন রামগতি উপজেলার পশ্চিম চর কোলাকোপা এলাকার মো. খবির হোসেনের ছেলে। ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনায় ৭ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে রাকিব হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার পর হেলাল উদ্দিন নামের আরো একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হলো।
পুলিশ জানায়, ১ মার্চ ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় সালিস বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো বিচার পায়নি ওই কিশোরী। উল্টো তাকে অপবাদ দেওয়া হয়। ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরীকে বাড়িতে রেখে তার মা বাড়ির পাশের জমিতে ফসল দেখতে যান। এসে দেখেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ মার্চ রাতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে রাকিব ধর্ষণ করেন। কিশোরীর মা টের পেয়ে ঘরে ঢুকলে রাকিব পালিয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি তিনি রাকিবের মা-বাবাকে জানান। পরে এ নিয়ে অভিযুক্ত রাকিবের পরিবার একটি সালিস বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনায় কোনো বিচার করা হয়নি। উল্টো কিশোরীকে অপবাদ দেওয়া হয়। এরপর মামলার আরেক আসামি হেলাল উদ্দিন কিশোরীর বাড়িতে ঢুকে তার চুল কেটে গ্রামে ঘোরানোর হুমকি দেন। ওই দিনই কিশোরী আত্মহত্যা করে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সালিশি বৈঠকের হেলাল উদ্দিন অপবাদ দিয়ে হুমকি দেন। তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

লালমাটিয়ায় দুই তরুণী লাঞ্ছিত, রিংকুকে হেফাজতে নিল পুলিশ: রাজধানীর লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রিংকু নামের এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
গত রোববার (৯ মার্চ) রাতে লালমাটিয়া এলাকা থেকে রিংকুকে আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সোমবার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘লালমাটিয়ার উত্ত্যক্তকারী রিংকুকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তবে পুলিশ বলছে, রিংকুকে গ্রেফতার নয়, হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ১ মার্চ লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ঘটে। এক ব্যক্তি ধূমপান নিয়ে আপত্তি তোলেন, যা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে রিংকু নামের ব্যক্তি তরুণীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক লাঞ্ছনার চেষ্টা করেন।