আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরনো সমস্যায় ফিরে যেতাম। সরকার একটি বৈধ নির্বাচন করতে চায়। যে নির্বাচন হবে গ্রামের মেলার মতো আনন্দদায়ক। বুধবার (১৩ আগস্ট) সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিএনএ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি চলে এসেছি। সবকিছু রাতারাতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তবে আমরা একটি উপসংহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের রাজনৈতিক এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, কারণ বিগত সরকার এই ব্যবস্থাগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার, অপব্যবহার ও বিকৃত করেছিল।
নির্বাচন নাকি সংস্কার আগে, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, আমাদের অঙ্গীকার ছিল, অভ্যুত্থানের সময় মানুষ যে সংস্কার চেয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা। আমরা সেই অঙ্গীকারকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছি—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। ভাবুন তো, যদি আমরা শুধু নির্বাচন দিয়ে শুরু করতাম, তাহলে সংস্কার বা বিচারের দরকার হতো না। সব কিছু নির্বাচিত লোকদের হাতে চলে যেত। তাহলে আমরা আবার আগের সমস্যায় ফিরে যেতাম।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে ড. ইউনূস বলেছেন, এটি একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল, কারণ তারা আইনের শাসন মানেনি। তারা যেভাবে প্রকাশ্যে মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার জন্য আমি দানব শব্দটিও ব্যবহার করেছিলাম। এর চেয়েও শক্তিশালী কোনো শব্দ থাকলে আমি সেটাই ব্যবহার করতাম।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, আমরা হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো বিবাদে জড়াতে চাই না। আমরা বলেছি, আপনারা তাকে রাখতে পারেন, আমাদের বিচার চলতে থাকবে। তবে এর মধ্যে তাকে যেন বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেওয়া না হয়।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এবং চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে উন্নতির সমালোচনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমি জানি না কীভাবে এটা মাপা যায়। আমাদের পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে, ভারতের সঙ্গেও আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা বলেছি, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত রাজ্য মিলে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা সম্ভব।
নতুন সরকার টেকসই হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমি শুধু বলতে পারি কী হবে তা নির্ধারণের কাজ রাজনীতিকদের। আমার কাজ হলো একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা। গত ১৫ বছর ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আমি চাই এবারের নির্বাচন একটি গ্রামের মেলার মতো আনন্দদায়ক হোক, যেখানে কোনো উত্তেজনা থাকবে না।
এক বছর আগে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপটের বিষয়ে তিনি বলেছেন, যখন তাকে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি প্রথমে রাজি হননি। তবে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও রক্তপাতের কথা স্মরণ করে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, তারা আমাকে অনুরোধ করেছিল যে এত রক্ত ঝরেছে, এত আত্মত্যাগ হয়েছে, আর আপনি দেশের বাইরে জীবন উপভোগ করছেন, আপনি আমাদের সাহায্য করবেন না? এটা আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল, তাই আমি দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলাম।
এসি/