বিদেশেরখবর ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংস আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। দেশটিতে টানা ষষ্ঠ রাতেও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। বুধবার ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে আটকের পর থেকে এই অস্থিরতা শুরু হয়। ইমামোগলু অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন, তবে এরদোয়ান তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। মূল বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) রবিবার ইমামোগলুকে তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করে এবং মঙ্গলবার বিক্ষোভ শেষ করার ঘোষণা দেয়। তবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা তারা জানায়নি। এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের ‘অশুভ শক্তি’ আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলগুলোর ওপর ‘প্ররোচনা দিয়ে নাগরিকদের শান্তি বিঘ্নিত করার’ অভিযোগ এনেছেন। আঙ্কারায় এক ভাষণে এরদোয়ান বিক্ষোভ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অভিযোগের জবাব দেওয়ার বদলে বিরোধী দলগুলো গত পাঁচ দিনে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও অবৈধ বক্তব্য দিয়েছে।
গত সোমবার ইস্তাম্বুল সিটি করপোরেশনের কাছে জলকামান বহনকারী যান দেখা গেলেও বিক্ষোভ মূলত শান্তিপূর্ণ ছিল। রবিবারের মতো তীব্র সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। বিক্ষোভকারী লিডিয়া বলেছেন, তুর্কি কর্তৃপক্ষ আমাদের কীটপতঙ্গের মতো শিকার করছে এবং তারা আমাদের ওপর কীটনাশকের মতো পেপার স্প্রে ছিটাচ্ছে। এরদোয়ানের শাসন ছাড়া অন্য কোনও সরকার না দেখা তরুণরা এই বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও তারা কোনও নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা সবাই সরকারের বিরুদ্ধে, তবে সিএইচপিকেও সমালোচনা করতে পিছপা হয় না। একজন নারী বিবিসিকে বলেন, আমাদের হারানোর কিছুই নেই। অন্যদিকে, রবিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, আগে ভয় পেতেন, কিন্তু এখন শুধু রাগ। সোমবার রাতের বিক্ষোভের আগে তুরস্কের সরকার জানায়, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে ১ হাজার ১৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। সিএইচপি ইস্তাম্বুলে তাদের সমাবেশ শেষ করায় স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ চলবে কি না, তা অস্পষ্ট। সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল সোমবার রাতে হাজার হাজার মানুষের সামনে বলেছেন, এই বিক্ষোভ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ। তিনি সিলিভরিতে কারাগারে ইমামোগলুর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, সিএইচপি ইমামোগলুর বিচার-পূর্ব মুক্তি এবং রাষ্ট্রীয় টিভি টিআরটিতে তার বিচার সরাসরি সম্প্রচারের জন্য আবেদন করবে।
ইমামোগলুকে সোমবার তুরস্কের ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সিএইচপির প্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে, যদিও তিনি কারাগারে আটক আছেন। প্রার্থী নির্বাচনটি প্রতীকী ছিল, কারণ তিনিই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। তাকে অপরাধী সংগঠন গঠন ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, জবরদস্তি, ব্যক্তিগত ডেটা অবৈধভাবে রেকর্ড করা এবং টেন্ডার কারচুপির অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করারও অভিযোগ আনা হয়েছিল, তবে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গ্রেফতারের আগে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তারা ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল করছে। এটি বহাল থাকলে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রশ্নের মুখে পড়বে, কারণ তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে হলে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। ইমামোগলু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি কখনোই মাথা নত করবেন না এবং তার গ্রেফতারকে গণতন্ত্রের ওপর কালো দাগ বলে অভিহিত করেছেন। তার স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোগলু ইস্তাম্বুল সিটি করপোরেশনের বাইরে বিক্ষোভকারীদের বলেছেন, তার স্বামীর ওপর অন্যায় প্রত্যেক বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগ ক্ষোভ এরদোয়ান ও তার সরকারের বিরুদ্ধে। ইস্তাম্বুলের সারাচানে বিক্ষোভরত ২২ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইরমাক বিবিসিকে বলেন, ২০ বছর আগে তিনি কী করেছিলেন জানি না, কিন্তু এখন তিনি একজন স্বৈরশাসক। ইরমাক ও তার বন্ধুরা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ভয়ে ফোনে লোকেশন শেয়ারিং চালু রেখেছেন। ২০১৩ সালের গেজি বিক্ষোভের পর এটিই তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। সেসময় ইস্তাম্বুলের একটি পার্ক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
সিএইচপি নেতা ওজেল বলেছেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চাই এবং এই কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই। ইমামোগলুর গ্রেফতার তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা বা নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করবে না, তবে যদি তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। বিরোধী এই মেয়রকে এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়, যিনি ২২ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এরদোয়ানের মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হচ্ছে এবং বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী তিনি আর দাঁড়াতে পারবেন না। তবে তিনি আগেই নির্বাচন ডাকতে পারেন বা সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা করে ক্ষমতায় থাকার পথ খুলে নিতে পারেন। তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয় এরদোয়ানকে এই গ্রেফতারের সঙ্গে যুক্ত করার সমালোচনা করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে।