ঢাকা ১২:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

বিকালঙ্গতার শেকল

  • আপডেট সময় : ১০:২০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : ক্রমবর্ধমান জীবনধারা। তাই বিকশিত করতে হবে চিন্তা, ধ্যান, ধারণা, মূল্যবোধ ও মানবতাসম্পন্ন মানসিকতা। প্রগতিশীল সমাজের সুষ্ঠু ধারক ও বাহক হিসেবে যাপিত জীবনের পরবর্তী সকল দিনের সমীপে নিজেকে উপস্থাপন যেন গতানুগতিক পশ্চাৎপদ জীবনধারার প্রবাহের বিপরীতে অগ্রসর হওয়ার নামান্তর। হাজারো বেড়াজালের এই সংস্কৃতির মনোমুগ্ধতায় একরাশ বিষাক্ত অলিগলির ধোয়া স্বাভাবিক জীবন ধারাকে ক্রমধারায় সংকুচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে। দিনান্তে অভিশপ্ত, নারকীয় ও পৈচাশিক উন্মাদনায় জীবনের সকল আয়োজনকে বিপন্ন, বিচ্ছিন্ন ও বিষাদগ্রস্ত করে। সময়ের অগ্রসর ধারায় স্বাধীনচেতা ও মুক্তমনা কোন নারীর বাইক চালিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অনাহুত হয় আমাদের কট্টরপন্থি ধারা। পীড়িত হয় তাদের ভাবধারানুসারীরা।
আবার, বোরকা পরিহিত কোন মা তার আদুরে সন্তানের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেললে আমাদের বিকৃত মানসিকতা অসূচিরুপে ঘুনে ধরা ব্যবস্থাকে লজ্জিত করে। অপব্যাখ্যার ধর্মীয় মূল্যবোধকে কটাক্ষ করে। তাই নিন্দা যেন তার প্রতি স্তুতি। হেরে যায় মাতৃত্ব। সচলায়তনে চলতে থাকা শিশু, কিশোরী ও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, পৈচাশিকতা, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন রোধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণে যেন তাদের বৈকল্য, অনীহা ও অরুচি। মনের গহীন কোটায় যেনো পুরানো গানের ভাঙ্গা রের্কড আজো বাজে-পুরুষ মানুষ একটু দোষ থাকতেই পারে। অথবা ছেলে মানুষ বয়সের দোষ!
পশ্চাৎপদ ভাবধারানুসারী আদর্শে লালিত কিছু বিপদগামীর অনুপ্রবেশে আজ দুষিত করছে বেঁচে থাকা। যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিনা সংকোচে পাহাড় সম অপরাধ অবলীলায় সংঘটিত হয়। তাই প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখিত হয়ে সাভারে বেপোয়ারা, বিপদগামী মিজানের হাতে কিশোরী নীলা রায়ের অপমৃত্যু হয়। যেন প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করা এক গর্হিত অপরাধ। এই সমাজে কোন কিশোরী’র মতামত জ্ঞাপন-এর কোন অধিকার নেই। এভাবেই অবাঞ্ছিত, উপেক্ষিত, নিগৃহতি হয় হাজারো কিশোরী। ইভটিজিং এর দুর্বৃত্তায়নে প্রতিনিয়ত শোষিত, নিপীড়িত হয় নাম না জানা কিশোরীর দল। শিক্ষা গ্রহণের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করে ইভটিজিং-এর ভয়াল থাবা। আবার কখনো ইভটিজিং-এর ছোবলে লাশ হয় কোমলমতি কিশোরী। যা কখনো প্রকাশিত হয় বা অপ্রকাশিত রয়ে যায়। অপরাধের গ্রাসে যেনো পুড়ে যায় এই লোকালয়। নিরাপত্তাহীনতার চাঁদরে জড়িয়ে আছে এই সমাজ। যেখানে স্বামীর সামনে তার স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে একদল নরপিশাচ শিক্ষাগৃহের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের উন্মাদিত লীলায় মেতে ওঠে। প্রশ্নবিদ্ধ হয় সামাজিক ব্যবস্থা। এ দেশে কোন এক স্ত্রী তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়। মানবিক বিপর্যয়ের অসহায়ত্বের আহাজারি আজ ভায়োলিনের করুণ সুরে প্রতিধ্বনিত হয়। মনুষ্যজগতে যেনো হারিয়ে গেছে মনুষ্যত্ব। তাই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয় যে-২০২০ সালের প্রথম আট মাসে ৮৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ( উধরষু ঝঃধৎ, ২৯ ঝবঢ়ঃবসনবৎ ২০২০).
সভ্য সমাজের এই হিংস্রতা যেন তার রন্ধ্র জুড়ে বিকশিত। কখনো ধর্মের লেবাসধারী বয়োবৃদ্ধ অনায়াসে নারীর প্রতি কুরুচিসম্পন্ন মন্তব্য করে। বিচারের পরিবর্তে হাস্যরস উপকরণ হিসেবে যা সাবলীলভাবে গৃহীত হয়। তাই পরবর্তীতে তাদের পৃষ্ঠপোষকে নারী সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়। এ যেনো সমগ্র নারী জাতির প্রতি বঞ্চনা। তাই ধিক্কার এই বিকার বোধহীন আপোষ। নারীর প্রতি ন্যূনতম কুরুচিপূর্ণ সকল আয়োজনে তীব্র ঘৃণা। বোধহীন, বিবেক বির্সজন সম, আপত্তিকর, হেনস্থাস্বরূপ সকল আয়োজনে নারীকে অনঅভিপ্রেতভাবে উপস্থাপনের তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশের অবকাশ নেই। এই অবকাঠামোতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার আজ আশু কাম্য। নারীর প্রতি পাশবিক আচরণ রোধে দুষ্কৃতিকারী সকল দু’পায়ে পশুদলের নিধন অতীব প্রয়োজন। সমাজকে সভ্যভুক্তিকরণে মানুষ নামের এই কুকুর নিধন আজ বাস্তবিক অর্থে প্রয়োজন।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিকালঙ্গতার শেকল

আপডেট সময় : ১০:২০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

ফারজানা কাশেমী : ক্রমবর্ধমান জীবনধারা। তাই বিকশিত করতে হবে চিন্তা, ধ্যান, ধারণা, মূল্যবোধ ও মানবতাসম্পন্ন মানসিকতা। প্রগতিশীল সমাজের সুষ্ঠু ধারক ও বাহক হিসেবে যাপিত জীবনের পরবর্তী সকল দিনের সমীপে নিজেকে উপস্থাপন যেন গতানুগতিক পশ্চাৎপদ জীবনধারার প্রবাহের বিপরীতে অগ্রসর হওয়ার নামান্তর। হাজারো বেড়াজালের এই সংস্কৃতির মনোমুগ্ধতায় একরাশ বিষাক্ত অলিগলির ধোয়া স্বাভাবিক জীবন ধারাকে ক্রমধারায় সংকুচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে। দিনান্তে অভিশপ্ত, নারকীয় ও পৈচাশিক উন্মাদনায় জীবনের সকল আয়োজনকে বিপন্ন, বিচ্ছিন্ন ও বিষাদগ্রস্ত করে। সময়ের অগ্রসর ধারায় স্বাধীনচেতা ও মুক্তমনা কোন নারীর বাইক চালিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অনাহুত হয় আমাদের কট্টরপন্থি ধারা। পীড়িত হয় তাদের ভাবধারানুসারীরা।
আবার, বোরকা পরিহিত কোন মা তার আদুরে সন্তানের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেললে আমাদের বিকৃত মানসিকতা অসূচিরুপে ঘুনে ধরা ব্যবস্থাকে লজ্জিত করে। অপব্যাখ্যার ধর্মীয় মূল্যবোধকে কটাক্ষ করে। তাই নিন্দা যেন তার প্রতি স্তুতি। হেরে যায় মাতৃত্ব। সচলায়তনে চলতে থাকা শিশু, কিশোরী ও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, পৈচাশিকতা, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন রোধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণে যেন তাদের বৈকল্য, অনীহা ও অরুচি। মনের গহীন কোটায় যেনো পুরানো গানের ভাঙ্গা রের্কড আজো বাজে-পুরুষ মানুষ একটু দোষ থাকতেই পারে। অথবা ছেলে মানুষ বয়সের দোষ!
পশ্চাৎপদ ভাবধারানুসারী আদর্শে লালিত কিছু বিপদগামীর অনুপ্রবেশে আজ দুষিত করছে বেঁচে থাকা। যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিনা সংকোচে পাহাড় সম অপরাধ অবলীলায় সংঘটিত হয়। তাই প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখিত হয়ে সাভারে বেপোয়ারা, বিপদগামী মিজানের হাতে কিশোরী নীলা রায়ের অপমৃত্যু হয়। যেন প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করা এক গর্হিত অপরাধ। এই সমাজে কোন কিশোরী’র মতামত জ্ঞাপন-এর কোন অধিকার নেই। এভাবেই অবাঞ্ছিত, উপেক্ষিত, নিগৃহতি হয় হাজারো কিশোরী। ইভটিজিং এর দুর্বৃত্তায়নে প্রতিনিয়ত শোষিত, নিপীড়িত হয় নাম না জানা কিশোরীর দল। শিক্ষা গ্রহণের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করে ইভটিজিং-এর ভয়াল থাবা। আবার কখনো ইভটিজিং-এর ছোবলে লাশ হয় কোমলমতি কিশোরী। যা কখনো প্রকাশিত হয় বা অপ্রকাশিত রয়ে যায়। অপরাধের গ্রাসে যেনো পুড়ে যায় এই লোকালয়। নিরাপত্তাহীনতার চাঁদরে জড়িয়ে আছে এই সমাজ। যেখানে স্বামীর সামনে তার স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে একদল নরপিশাচ শিক্ষাগৃহের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের উন্মাদিত লীলায় মেতে ওঠে। প্রশ্নবিদ্ধ হয় সামাজিক ব্যবস্থা। এ দেশে কোন এক স্ত্রী তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে ধর্ষিত হয়। মানবিক বিপর্যয়ের অসহায়ত্বের আহাজারি আজ ভায়োলিনের করুণ সুরে প্রতিধ্বনিত হয়। মনুষ্যজগতে যেনো হারিয়ে গেছে মনুষ্যত্ব। তাই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয় যে-২০২০ সালের প্রথম আট মাসে ৮৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ( উধরষু ঝঃধৎ, ২৯ ঝবঢ়ঃবসনবৎ ২০২০).
সভ্য সমাজের এই হিংস্রতা যেন তার রন্ধ্র জুড়ে বিকশিত। কখনো ধর্মের লেবাসধারী বয়োবৃদ্ধ অনায়াসে নারীর প্রতি কুরুচিসম্পন্ন মন্তব্য করে। বিচারের পরিবর্তে হাস্যরস উপকরণ হিসেবে যা সাবলীলভাবে গৃহীত হয়। তাই পরবর্তীতে তাদের পৃষ্ঠপোষকে নারী সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়। এ যেনো সমগ্র নারী জাতির প্রতি বঞ্চনা। তাই ধিক্কার এই বিকার বোধহীন আপোষ। নারীর প্রতি ন্যূনতম কুরুচিপূর্ণ সকল আয়োজনে তীব্র ঘৃণা। বোধহীন, বিবেক বির্সজন সম, আপত্তিকর, হেনস্থাস্বরূপ সকল আয়োজনে নারীকে অনঅভিপ্রেতভাবে উপস্থাপনের তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশের অবকাশ নেই। এই অবকাঠামোতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার আজ আশু কাম্য। নারীর প্রতি পাশবিক আচরণ রোধে দুষ্কৃতিকারী সকল দু’পায়ে পশুদলের নিধন অতীব প্রয়োজন। সমাজকে সভ্যভুক্তিকরণে মানুষ নামের এই কুকুর নিধন আজ বাস্তবিক অর্থে প্রয়োজন।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ