ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আলাদা মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ হাই কোর্টের

  • আপডেট সময় : ০২:২০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২১
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী হোমিও, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ ‘বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি’কে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দিয়ে সেজন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে হাই কোর্টের এক রায়ে।
সেই সঙ্গে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ও সেবার মান নির্ধারণের জন্য ‘বিকল্প চিকিৎসা’ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সনদের স্বীকৃতিও দিতে বলা হয়েছে। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকরা নমের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে একটি রিট মামলার রায়ে এ পরামর্শ এসেছে। তবে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করার অনুমতি হাই কোর্ট দেয়নি।
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও এ পদ্ধতির চিকিৎসকরা যাতে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবী ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গতবছর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ৯৬ জন চিকিৎসক হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছর ১ জানুয়ারি রুল জারি করে।
পেশাগত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির (হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ অন্যান্য) চিকিৎসকেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারে আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠন ও নীতিমালা তৈরিতে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না এবং বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও আলাদা নীতিমালা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
শুনানির পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করা হয়। সে রায়টি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে রুল শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশনা ইমাম, খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন ও মো. মজিবর রহমান। বিএমডিসির পক্ষে রুল শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম, সাকিবুজ্জামান, কাজী ইরশাদুল আলম ও ইমরান আনোয়ার। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, সায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।
বিকল্প পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ নয় : রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু আবেদনকারীদের এমবিবিএস ডিগ্রি আইনগতভাবে স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া নয়, সেহেতু রুলটি খারিজযোগ্য।
২০১০ সালের বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ফলে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদ কর্মকর্তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি সংযোজনের যে অনুমতি দিয়েছে, তা ‘বেআইনি’। তাছাড়া ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নামের আগে পদবি হিসেবে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াও ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
তবে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ইনটিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান’, ‘কমপ্লিমেনটারি ফিজিশিয়ান’, ‘ইনটিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার’ বা ‘কমপ্লিমেনটারি মেডিসিন প্র্যাকটিশনার’ ব্যবহার করতে পারেন বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে রায়ে। পাশের দেশ ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখেতে পারেন না।
স্বাস্থ্যসেবা ‘তলানিতে’ : সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও ‘বাণিজ্যিকীকরণের কারণে’ দেশের স্বাস্থ্যখাত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে হাই কোর্টের এ রায়ে। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ‘বাংলাদেশের বর্তমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তা যতটা না রোগীর ব্যথ্য নিরাময় বা রোগমুক্তির, তার চেয়েও বেশি ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল এবং তাদের সহায়তাকারী হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীদের জন্য।
‘ফলে রাতারাতি অনেক ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত বড় বড় ডাক্তারদের টাকার পাহাড় হলেও সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা একদম তলানীতে। এটি ভুক্তোভোগীমাত্রই জানে।’
২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি ‘এনইজেএম ক্যাটালিস্ট’ এবং ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর হেলথ লিড ওয়েবসাইটে প্রকাশিথ পেশেন্ট-সেন্টার্ড কেয়ার: এলিমেন্টস, বেনিফিটস অ্যান্ড একজাম্পলস’ শিরোনমে প্রকাশিত দুটি প্রবন্ধের পর্যালোচনা করা হয়েছে রায়ে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সম্মানজনক এবং প্রত্যেকটি রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করে রোগীকে কেন্দ্র করে দেশে এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যার উদ্দেশ্য হবে রোগীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
‘সুতরাং প্রচলিত বা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিও আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত বা পশ্চিমা চিকিৎসার সাথে সম্পূরক মেডিসিন হিসেবে থেরাপির ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ইন্টিগ্রেটেটিভ মেডিসিন এখন ব্যাপক আলোচনায়।’
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ, পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে রায়ে। সে সব বিবেচনায় নিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। এর কারণ- সহজলভ্যতা, স্বল্প খরচ, কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও প্রচলিত চিকিৎসার চিকিৎসকের অপ্রতুলতা। বর্তমানে বিকল্প ধারার বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিকে আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৭৯টি সদস্য রাষ্ট্র বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আইন ও নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো প্রণয়ন করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ ইতোমধ্যে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে মূল ধারার চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খতের আওতায় আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যলেঞ্জের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত অন্যতম। সে কারণে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর মানুষের আগ্রহ ঊর্ধ্বমুখী।’
বিকল্প বা পরিপূরক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ডব্লিএইচওর ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে ‘প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা’ বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি সাধন করেছে। ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৭৯টি দেশ এই অগ্রগতির অংশীদার। ২০১৮ সালে তারা প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা সংক্রান্ত জাতীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ণ করেছে এবং ১২৪টি রাষ্ট্র হারবাল চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধিমালা বাস্তবায়ন করছে। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে নিয়ে আদলত রায়ে বলেছে, ‘জরুরি স্বাস্থ্য সেবা খাতের মধ্যে ‘প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা’ অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় : উচ্চ আদালত মনে করছে, বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিকে ‘সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত’ করা হয়নি। সে পর্যালোচনায় আদালত বলেছে, বাংলাদেশে প্রস্তাবিত বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা এবং ২০২১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে মূলত হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাখাকেই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তা বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে ‘সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত’ করে না।
অথচ জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা অছে, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্যসেবার পরিসর বর্ধিত করা হবে। রায়ে বলা হয়েছে, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে চলে আসছে। এসব প্রাচীন পদ্ধতির ‘যথাযথ এবং সঠিক পঠন-প্রশিক্ষণ’ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ‘উন্নয়ন করবে’।
‘সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক তার বিবেক ও চিন্তার মাধ্যমে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করবে এটি সম্পূর্ণ তার মৌলিক অধিকার। ‘আর সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন নাগরিক প্রচলিত চিকিৎসক হবেন না বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসক হবেন- সে সিদ্ধান্ত নেওয়াও তার মৌলিক অধিকার। সুতরাং বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।’
সেজন্য সংশ্লিষ্টদের চারটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রায়ে-

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কাজাখস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাটি ঘোষণা’ বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রুত প্রণয়ন।
সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগী কেন্দ্রীক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণ।
প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি, যেমন ভারত সরকার ‘মিনিস্ট্রি অব আয়ুস’ তৈরি করেছে।
বিকল্প ধারার চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রির (সনদ) স্বীকৃতি ও পদবী নির্ধারণ করা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আলাদা মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ হাই কোর্টের

আপডেট সময় : ০২:২০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী হোমিও, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ ‘বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি’কে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দিয়ে সেজন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে হাই কোর্টের এক রায়ে।
সেই সঙ্গে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ও সেবার মান নির্ধারণের জন্য ‘বিকল্প চিকিৎসা’ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সনদের স্বীকৃতিও দিতে বলা হয়েছে। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকরা নমের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে একটি রিট মামলার রায়ে এ পরামর্শ এসেছে। তবে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করার অনুমতি হাই কোর্ট দেয়নি।
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও এ পদ্ধতির চিকিৎসকরা যাতে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবী ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গতবছর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ৯৬ জন চিকিৎসক হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছর ১ জানুয়ারি রুল জারি করে।
পেশাগত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির (হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ অন্যান্য) চিকিৎসকেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারে আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠন ও নীতিমালা তৈরিতে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না এবং বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও আলাদা নীতিমালা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
শুনানির পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করা হয়। সে রায়টি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে রুল শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশনা ইমাম, খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন ও মো. মজিবর রহমান। বিএমডিসির পক্ষে রুল শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম, সাকিবুজ্জামান, কাজী ইরশাদুল আলম ও ইমরান আনোয়ার। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, সায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।
বিকল্প পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ নয় : রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু আবেদনকারীদের এমবিবিএস ডিগ্রি আইনগতভাবে স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া নয়, সেহেতু রুলটি খারিজযোগ্য।
২০১০ সালের বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ফলে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদ কর্মকর্তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি সংযোজনের যে অনুমতি দিয়েছে, তা ‘বেআইনি’। তাছাড়া ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নামের আগে পদবি হিসেবে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াও ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
তবে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ইনটিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান’, ‘কমপ্লিমেনটারি ফিজিশিয়ান’, ‘ইনটিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার’ বা ‘কমপ্লিমেনটারি মেডিসিন প্র্যাকটিশনার’ ব্যবহার করতে পারেন বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে রায়ে। পাশের দেশ ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখেতে পারেন না।
স্বাস্থ্যসেবা ‘তলানিতে’ : সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও ‘বাণিজ্যিকীকরণের কারণে’ দেশের স্বাস্থ্যখাত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে হাই কোর্টের এ রায়ে। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ‘বাংলাদেশের বর্তমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তা যতটা না রোগীর ব্যথ্য নিরাময় বা রোগমুক্তির, তার চেয়েও বেশি ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল এবং তাদের সহায়তাকারী হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীদের জন্য।
‘ফলে রাতারাতি অনেক ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত বড় বড় ডাক্তারদের টাকার পাহাড় হলেও সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা একদম তলানীতে। এটি ভুক্তোভোগীমাত্রই জানে।’
২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি ‘এনইজেএম ক্যাটালিস্ট’ এবং ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর হেলথ লিড ওয়েবসাইটে প্রকাশিথ পেশেন্ট-সেন্টার্ড কেয়ার: এলিমেন্টস, বেনিফিটস অ্যান্ড একজাম্পলস’ শিরোনমে প্রকাশিত দুটি প্রবন্ধের পর্যালোচনা করা হয়েছে রায়ে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সম্মানজনক এবং প্রত্যেকটি রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করে রোগীকে কেন্দ্র করে দেশে এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যার উদ্দেশ্য হবে রোগীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
‘সুতরাং প্রচলিত বা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিও আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত বা পশ্চিমা চিকিৎসার সাথে সম্পূরক মেডিসিন হিসেবে থেরাপির ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ইন্টিগ্রেটেটিভ মেডিসিন এখন ব্যাপক আলোচনায়।’
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ, পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে রায়ে। সে সব বিবেচনায় নিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। এর কারণ- সহজলভ্যতা, স্বল্প খরচ, কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও প্রচলিত চিকিৎসার চিকিৎসকের অপ্রতুলতা। বর্তমানে বিকল্প ধারার বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিকে আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৭৯টি সদস্য রাষ্ট্র বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির আইন ও নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো প্রণয়ন করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ ইতোমধ্যে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে মূল ধারার চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খতের আওতায় আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যলেঞ্জের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত অন্যতম। সে কারণে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর মানুষের আগ্রহ ঊর্ধ্বমুখী।’
বিকল্প বা পরিপূরক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ডব্লিএইচওর ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে ‘প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা’ বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি সাধন করেছে। ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৭৯টি দেশ এই অগ্রগতির অংশীদার। ২০১৮ সালে তারা প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা সংক্রান্ত জাতীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ণ করেছে এবং ১২৪টি রাষ্ট্র হারবাল চিকিৎসা সংক্রান্ত বিধিমালা বাস্তবায়ন করছে। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে নিয়ে আদলত রায়ে বলেছে, ‘জরুরি স্বাস্থ্য সেবা খাতের মধ্যে ‘প্রথাগত ও পরিপূরক চিকিৎসা’ অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় : উচ্চ আদালত মনে করছে, বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিকে ‘সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত’ করা হয়নি। সে পর্যালোচনায় আদালত বলেছে, বাংলাদেশে প্রস্তাবিত বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা এবং ২০২১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে মূলত হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাখাকেই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তা বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে ‘সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত’ করে না।
অথচ জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা অছে, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতিকে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্যসেবার পরিসর বর্ধিত করা হবে। রায়ে বলা হয়েছে, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে চলে আসছে। এসব প্রাচীন পদ্ধতির ‘যথাযথ এবং সঠিক পঠন-প্রশিক্ষণ’ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ‘উন্নয়ন করবে’।
‘সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক তার বিবেক ও চিন্তার মাধ্যমে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করবে এটি সম্পূর্ণ তার মৌলিক অধিকার। ‘আর সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন নাগরিক প্রচলিত চিকিৎসক হবেন না বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসক হবেন- সে সিদ্ধান্ত নেওয়াও তার মৌলিক অধিকার। সুতরাং বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।’
সেজন্য সংশ্লিষ্টদের চারটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রায়ে-

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কাজাখস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাটি ঘোষণা’ বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রুত প্রণয়ন।
সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগী কেন্দ্রীক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণ।
প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি, যেমন ভারত সরকার ‘মিনিস্ট্রি অব আয়ুস’ তৈরি করেছে।
বিকল্প ধারার চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রির (সনদ) স্বীকৃতি ও পদবী নির্ধারণ করা।