নিজস্ব প্রতিবেদক : সাড়ে চার মাস পর সেই বিএম কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ প্রক্রিয়ার সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ৯টি শর্ত বেঁধে দিয়ে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তপূরণ সাপেক্ষে আগামী তিন মাস রপ্তানি পণ্য ওঠানো-নামানো করা যাবে ডিপোতে। শর্তগুলো প্রতিপালন না হলে তিন মাস পর এই অনুমোদন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে যাবে। এর আগে গত আগস্ট মাসে খালি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর অনুমোদন দিয়েছিল কাস্টমস; তখনো দুটি শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই শর্ত প্রতিপালন হয়েছে কি না যাচাইয়ে গঠিত কমিটি তদন্ত করছে। এরই মধ্যে রপ্তানি পণ্য রাখার নতুন অনুমোদন দেওয়া হলো। উল্লেখ্য, গত ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৫১ জন। আহত হয় দুই শতাধিক। এ সময় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার এবং আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের পরদিন গত ৫ জুন ডিপোর সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কাস্টমস। এর পর থেকেই বিএম কর্তৃপক্ষ নানা দপ্তরে তদবির করে ডিপো চালুর চেষ্টা করছিল। এখন সুফল মিলল। যদিও আমদানি কনটেইনার রাখার অনুমোদন এখনো দেয়নি কাস্টমস। এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় কাস্টমসের গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৭ আগস্ট প্রতিবেদনে কার্যক্রম পরিচালনায় ১৭টি অনিয়ম তুলে ধরে। এর মধ্যে আইএমডিজি কোড পরিপালনে ব্যর্থতার দায়ে বিএম কনটেইনার ডিপোর লাইসেন্স কেন স্থগিত বা বাতিল করা হবে না তা জানতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষকে একটি কারণ দর্শানোর নেটিশ দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। নোটিশে এক মাসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষকে। এরপর গত ৩ অক্টোবর নোটিশের শুনানি হয়। সেগুলো চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই রপ্তানি পণ্য রাখার অনুমোদন মিলল। বিএম ডিপোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আখতার বলেন, ৩ অক্টোবর উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। কাস্টমসের শর্ত মেনেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বুধবার থেকেই ডিপোতে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হচ্ছে। কনটেইনার ডিপো মালিকদের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এসব আইসিডির কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৭৮ হাজার একক। এর মধ্যে বিএম ডিপোর কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ৬৫০০ একক। সেই ডিপো বন্ধ হওয়ায় চাপে পড়ে অন্যরা। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। ’ শর্তগুলো হলো ডিপোতে কার্যক্রম শুরুর আগে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র নেওয়া; বেসরকারি অফডক স্থাপন ও পরিচালন সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২১ এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স বিধিমালা, ২০০৮-এ প্রযোজ্য শর্তাবলি ওই সময়ের মধ্যে প্রতিপালন; কেমিক্যাল পদার্থবাহী কনটেইনার আইএমডিজি নীতিমালার আলোকে পৃথক ইয়ার্ড ও শেডের ব্যবস্থা করা; ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে অনুমোদিত ফায়ার সেফটি প্লান্ট সংগ্রহ ও অগ্নিনির্বাপণি শর্ত পরিপালন; পুরো আইসিডি সিসিটিভির আওতায় আনা; কাস্টমস কর্মকর্তাদের শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্নের প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস সহায়তা প্রদান; আইসিডির বাইরে একাধিক স্থানে ব্যাক-আপ স্টোরেজ স্থাপন করা এবং অফডক পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যবহৃত নিজস্ব সফটওয়্যারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক প্রবেশাধিকারের শর্ত অন্যতম।