নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা দেশকে ধ্বংস করবে। তাই এই দলগুলোর ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসুন দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও সোনার এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিই।’
দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশবাসীর ভাগ্য বদলে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশবাসী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। ২০০৯ সাল থেকে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ তাঁর সরকার দারিদ্র্য ৪১ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। চরম দারিদ্র্য ২৫ শতাংশের ওপর থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নিয়ে এসেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমেছে। দেশবাসীর গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে। বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যেকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে। গ্রামপর্যায়ে ওয়াই–ফাইয়ের সংযোগ দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ আরও উন্নত হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব আগে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিল। তারা এখন বাংলাদেশকে সম্মান করে। এই সম্মান আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন থেকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে।
মাঝেমধ্যে লোডশেডিং দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত আগে কী ছিল: বিদ্যুৎ খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাঝেমধ্যে লোডশেডিং দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত আগে কী ছিল, এখন কোথায় আছে। শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশ কোথায় ছিল, আওয়ামী লীগের হাতে কোথায় এসেছে- এর একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম শতভাগ বিদ্যুৎ দেবো, সেটা দিতে পেরেছি। সব ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি জ্বালানির দাম বেড়েছে এবং সংকটও দেখা দিয়েছে। যে কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, সেটাও থাকবে না। তবে মাঝেমধ্যে বোধহয় লোডশেডিং দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত- কী ছিল, কোথায় আছে? এসময় বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর আন্দোলনেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, একসময় এদেশের মানুষের নুনভাত জোটাতে কষ্ট হতো। তারপর আসলো ডালভাত। এখন মাংস পাচ্ছে না, এই কথা আসছে। আমি জানি, মাংসের দাম বেড়েছে। তবে এটাও তো সত্য- মানুষের অবস্থার এমন পরিবর্তন হয়েছে যে, এখন মাংসের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা যেহেতু বাড়াতে পেরেছি, ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে খাওয়াতেও পারবো। শেখ হাসিনা বলেন, পলাশীর আম্রকাননে যেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, আওয়ামী লীগের হাতে সেটি ফের উদিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। যখন সংগঠনটি হয়, তখনো আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে জেলে ছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এনে দিয়েছে। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান
জনপ্রিয় সংবাদ