নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। বিএনপির সাতজন চলে গেলে সংসদ অচল হয়ে পড়বে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যায়িত করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর জন্য দলটিকে অনুতাপ করতে হবে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের রেডিও কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ‘বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ’-এ সমাবেশের আয়োজন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর নয়াপল্টনে গত বুধবার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশে অনুমতি পাওয়ার আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১৬০ বস্তা চাল, হাঁড়ি-পাতিল, মশারি, মশার কয়েল এসব পেয়েছে। এসব নিয়ে নয়াপল্টন ঘিরে তারা ‘পিকনিক পার্টি’ শুরু করেছিল।
কোথা থেকে বিএনপির এত টাকা আসে, এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন ব্যবসায়ী, কোন শিল্পপতি বিএনপিকে কত টাকা দিয়েছে, সব খবর আমরা জানি। সময়মতো তাদের জবাব দিতে হবে।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ সকালে খবর এসেছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর আর ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য খারাপ খবর। যুক্তরাষ্ট্র ৯টি দেশের ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ নেই। বিদেশি বন্ধুরা এখন বাস্তবতা অনেকটাই বুঝতে পেরেছে। সামনে আরও বুঝতে পারবে। শনিবার সমাবেশে মঞ্চে অনেক নেতা-কর্মীর ভিড় ছিল। কিন্তু মাঠের এক পাশ ছিল ফাঁকা। এতে বিরক্তি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘আজ এই সমাবেশ মঞ্চ থেকে তাকিয়ে দেখছি, নেতা আর নেতা। সিকি নেতা, আধুলি নেতা, পাতি নেতা, সব নেতা। কর্মী কোথায়?’
বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের বিষয়ে দলটির নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আজকে পল্টনে গেলেন না? গেলেন না? হাফ ডিফিট (অর্ধেক পরাজয়) হয়ে গেছে।’
শনিবার সাভারের রেডিও কলোনি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এই কথা বলেন। একই দিন ঢাকার গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। যদিও বিএনপির নেতারা বেশ কিছুদিন ধরেই নয়া পল্টনেই সমাবেশটি করবেন বলে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। যদিও শেষ মুহূর্তে গোলাপবাগে মাঠে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এরপরও নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতারা জড়ো হতে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। আর এটিকেই বিএনপির ‘অর্ধেক পরাজয়’ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নয়াপল্টনের অফিসৃ ১০ তারিখে সমাবেশ, অনুমতি পায়নি। অনুমতি পাওয়ার আগেই তারা কী করেছে? তারা সেখানে প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশ পরে তল্লাশি করে সেখানে কী পেলো? ১৬০ বস্তা চাল, ওই যে হান্ডি পাতিল, মশারি-বিছানা, সব নিয়ে পিকনিক পার্টি শুরু করেছে এই নয়া পল্টনকে ঘিরে।’ পুলিশের ওপর বিএনপিই সেদিন হামলা করেছে দাবি করে এই নেতা বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ কি দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে? পুলিশের ওপর হামলা চালাবে, পুলিশ কি দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকবে? আত্মরক্ষা তাদেরও করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে কোন ব্যবসায়ী, কোন শিল্পপতি টাকা দিচ্ছে জানি। যারা এই পিকনিকে টাকা দিচ্ছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কোথা থেকে আসে টাকা, ফখরুল সাহেবদের? খবর নেওয়া হচ্ছে কোথা থেকে টাকা আসে। কোন ব্যবসায়ী, কোন শিল্পপতি কতো টাকা দিয়েছে, সে খবর আমরা জানি। টাকা দিয়ে পিকনিক করাচ্ছে বিএনপি। পিকনিক পার্টি, যাকে বলে বনভোজন। বনভোজন করছিল তারা, বিভিন্ন জেলার সমাবেশেও তারা এ কাজটি করেছে।’
নির্বাচন এলেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিএনপি: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, ‘যখনই বিএনপি কোনো নির্বাচন আসে, তখনই তারা সারা বাংলার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। দেশের দুঃসময় আসলেই বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে তারা। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে সাভারের রেডিও কলোনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদী জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা আজম বলেন, ‘সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশের মূল লক্ষ্য বিএনপির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমি যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাই, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবো। দেশকে ডিজিটাল করবো, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। শেখ হাসিনা যা বলেছিলেন তা তিনি করেছেন। ১৪ বছরে বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। মাথাপিছু আয় ২১০০ ডলার।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছিলেন পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। সেই সেতুর বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে চান। আর সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বিএনপির সাতজন চলে গেলে সংসদ অচল হবে না: ওবায়দুল কাদের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ