ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়, নির্বাচন ইস্যুতে কারো চাপে কিছু যায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:৫১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩
  • ১৪৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি ভদ্রতা জানে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন তিনি। নির্বাচন ইস্যুতে কারোর চাপে কিছু যায় আসে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার বিকালে সাড়ে ৪টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ভাষণ ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কথা বলেন। আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে (টলাতে) পারে।’
‘কে চাপ দিল, কেন চাপ দিল সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে আমার কিছু যায় আসে না।’ ‘কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন থেমে গেছে? আমাদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তাই বলে আমাদের উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে?’
জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করেছি: আওয়ামী লীগের আমলে ভোট চুরির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। জনগণের ভাতের অধিকার এবং ভোটের অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয় আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে। এর জন্য ধৈর্য দরকার। আওয়ামী লীগ সবসময় দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে।’ জনগলই আওয়ামী লীগের মুল শক্তি উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কথা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার। নির্বাচন উপলক্ষে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করে।’
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরত যেতে হবে: এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে, কিন্তু তাই বলে মিয়নমারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করতে চাই না। ‘যদিও রাশিয়া ইউক্রন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি একটু অন্য দিকে চলে গেছে। মানুষের পাশে আমাদের থাকতে হবে। যুদ্ধের সময় আমরাও শরনার্থী ছিলাম সেটাও মনে রাখতে হবে।’
ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ৪০ নেতার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন: অপর এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের ৪০ নেতার চিঠির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি (ইউনূস) একজন নামিদামি ব্যক্তি, কিন্তু এত নামিদামি ব্যক্তি তারপরও তাকে ৪০ জন ব্যক্তির নাম ভিক্ষা করে বিজ্ঞাপন দিতে হয়? এটাই আমার প্রশ্ন।’ সরকারপ্রধান বলেন, দেশে আইন আছে এবং আইন অনুযায়ী সব চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি। যারা ট্যাক্স ঠিকমত দেয় সেটা আলাদা বিভাগ আছে ট্যাক্স আদায় করে।’ ‘এই সমস্ত বিষয়ে কেউ যদি কোনো রকম আইন ভঙ্গ করে, শ্রমিকদের অধিকার শ্রম আদালত সেটা দেখে। সরকারপ্রধান হিসেবে এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এর বাইরে আমি বাকি বলব? পদ্মাসেতু কিন্তু করে ফেলেছি খালি এটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’
জ্বালানি চাহিদা পূরণে পাশে থাকবে কাতার: বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে কাতার পাশে থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। কাতার সফরকালে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে বৈঠকে পাওয়া আশ্বাসের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফেরেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী।
স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের ন্যায্য পাওনা চায়: লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা বা দাক্ষিণ্য চায় না বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য পাওনা চায়। সফরে করোনা মহামারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি। এছাড়া বাংলাদেশসহ উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন অর্জনকে গতিশীল রাখতে বর্ধিত সময়ের জন্য এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোজায় বেশি কিনে ঘরে মজুদ করবেন না: রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি’। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে।
“আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো। সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।”
রমজান মাসে চালের কোনো অভাব হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুদ আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। “আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লক্ষ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে এক কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরকেও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে। “আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।” সবাই সহযোগিতা করলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়, নির্বাচন ইস্যুতে কারো চাপে কিছু যায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:৫১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি ভদ্রতা জানে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন তিনি। নির্বাচন ইস্যুতে কারোর চাপে কিছু যায় আসে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে গতকাল সোমবার বিকালে সাড়ে ৪টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ভাষণ ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কথা বলেন। আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক কোনো চাপ আছে কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে (টলাতে) পারে।’
‘কে চাপ দিল, কেন চাপ দিল সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে আমি তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে করুক। বিদেশি দূতাবাসে যাচ্ছে, বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে এনে বৈঠক করছে, বহির্বিশ্বে চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে আমার কিছু যায় আসে না।’ ‘কত ফোন এসেছে, কত হুমকি এসেছে, আমাদের উন্নয়ন থেমে গেছে? আমাদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তাই বলে আমাদের উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে?’
জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করেছি: আওয়ামী লীগের আমলে ভোট চুরির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। জনগণের ভাতের অধিকার এবং ভোটের অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয় আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে। এর জন্য ধৈর্য দরকার। আওয়ামী লীগ সবসময় দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে।’ জনগলই আওয়ামী লীগের মুল শক্তি উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের কথা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছে সরকার। নির্বাচন উপলক্ষে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করে।’
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরত যেতে হবে: এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে, কিন্তু তাই বলে মিয়নমারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করতে চাই না। ‘যদিও রাশিয়া ইউক্রন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি একটু অন্য দিকে চলে গেছে। মানুষের পাশে আমাদের থাকতে হবে। যুদ্ধের সময় আমরাও শরনার্থী ছিলাম সেটাও মনে রাখতে হবে।’
ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ৪০ নেতার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন: অপর এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের ৪০ নেতার চিঠির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি (ইউনূস) একজন নামিদামি ব্যক্তি, কিন্তু এত নামিদামি ব্যক্তি তারপরও তাকে ৪০ জন ব্যক্তির নাম ভিক্ষা করে বিজ্ঞাপন দিতে হয়? এটাই আমার প্রশ্ন।’ সরকারপ্রধান বলেন, দেশে আইন আছে এবং আইন অনুযায়ী সব চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি। যারা ট্যাক্স ঠিকমত দেয় সেটা আলাদা বিভাগ আছে ট্যাক্স আদায় করে।’ ‘এই সমস্ত বিষয়ে কেউ যদি কোনো রকম আইন ভঙ্গ করে, শ্রমিকদের অধিকার শ্রম আদালত সেটা দেখে। সরকারপ্রধান হিসেবে এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এর বাইরে আমি বাকি বলব? পদ্মাসেতু কিন্তু করে ফেলেছি খালি এটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’
জ্বালানি চাহিদা পূরণে পাশে থাকবে কাতার: বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে কাতার পাশে থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। কাতার সফরকালে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে বৈঠকে পাওয়া আশ্বাসের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফেরেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী।
স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের ন্যায্য পাওনা চায়: লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা বা দাক্ষিণ্য চায় না বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য পাওনা চায়। সফরে করোনা মহামারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি। এছাড়া বাংলাদেশসহ উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন অর্জনকে গতিশীল রাখতে বর্ধিত সময়ের জন্য এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোজায় বেশি কিনে ঘরে মজুদ করবেন না: রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি’। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে।
“আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো। সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।”
রমজান মাসে চালের কোনো অভাব হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুদ আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। “আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লক্ষ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে এক কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরকেও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে। “আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।” সবাই সহযোগিতা করলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান।