ঢাকা ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

  • আপডেট সময় : ০১:২২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
  • ১৪২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি বিএনপির বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিজের গায়ের ভারতীয় চাদর খুলে আগুনে পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দলটির উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এটা রিজভীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ÿমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের মধ্যে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের দাম বাড়ানো। না হলে রমজানের সময় ঈদের আগে এই ডাক কেন? আর সব ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা কখনও ঠিক রাখা যাবে?
গতকাল রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বা¯Íবতা হচ্ছে বিএনপির অনেকেই লাইন দিয়েছিল। অনেকেই গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য লাইন দিয়েছিল। অনেকের হিসাব মিলে নাই। সেই কারণে তারা ভিন্ন পথে হেঁটেছে। সুতরাং জয়নাল আবেদিন ফারুক সাহেব কিংবা অন্য সাহেবরা যা কিছু বলুক না কেন, কারও যখন গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তখন এরকম অনেকেই বলে।
তারা মামলা করতে চাইলে করুক, আমিও বসে আছি: এর আগে একটি টেলিভিশন টকশোতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেছিলেন, রেকর্ড প্রকাশ না করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করবেন। সেই প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, তারা মামলা করতে চাইলে করুক, আমিও বসে আছি। আমি সেটার জন্য প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে আমরাও আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এটা আসলে আইনের বিষয় নয়। এসব কথা বলে আসলেৃ তাদের নেতারা বিভিন্ন দল করতো। জয়নাল আবেদিন ফারুক ছাত্রলীগ করতো। পরে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্য বিএনপিতে গেছে। যারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী তারা নানা ধরনের কথা বলে।
ইফতারে ভারতের পেঁয়াজ দিয়েই ছোলা-পেঁয়াজু খেয়েছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে কী না আসে? যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে দেখা যাবে যে ইফতারের সময় ভারতের পেঁয়াজ দিয়েই ছোলা-পেঁয়াজু খেয়েছেন। এসব খেয়ে উনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। আর উনার স্ত্রী ভারতীয় শাড়ি পরেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন, কয়েক দিন আগে না ভারতে গেলেন চিকিৎসা করতে! তোমরা ভারতে চিকিৎসা করতে যাবা, ভারতের পেঁয়াজ খাবা, গরুর মাংস খাবা, শাড়ি পরবা, অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করবা, আর রা¯Íায় নেমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিবা। এটার মূল উদ্দেশ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা এবং রমজান ঈদের আগে পণ্যের দাম বাড়ানো। তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। সুতরাং আমরা একে অপরের সহযোগী। এই সহযোগিতার মাধ্যমেই আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে এই সহযোগিতা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে চাই।
ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য জানতে চান কাদের: ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ এর আহŸান নিয়ে বিএনপি নেতারা যে যাই বলুন না কেন, এ বিষয়ে দলটির অবস্থান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে শুনতে চান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, “বিএনপির নেতারা একেক জন একেক কথা বলেন, একেক নেতা একেক সুরে কথা বলেন। আমি এখন শুনতে চাইব বিএনপির মহাসচিব তিনি কি বলেন, দলের মুখপাত্র আছে তো। এখন দলের মুখপাত্র হিসেবে মির্জা ফখরুল সাহেব কি বলেন?
“হাফিজ সাহেব কি বললেন, রিজভী কি বললেন, মঈন খান কি বললেন, আমির খসরু কি বললেন, তার চেয়েও আমরা এখানে গুরুত্ব দিয়ে জানতে চাইব ফখরুল সাহেব কি বলেন।“
রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে কথা বলছিলেন কাদের। ঠিক কী কারণে বিএনপি নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করার কথা বলতে পারেন, সেই প্রশ্নে কাদের বলেন, “বিএনপির নেতারা ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই ক্লান্ত, তাদের কর্মীরা হতাশ। এ সময় নেতাদের কারও সাথে কারও কথার মিল আমরা দেখি না। মঈন খান বললেন ভারতকে গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য সহযোগিতা করার জন্য। আবার রিজভী তার চাদর খুলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ভারত বর্জন শুরু করলেন। বিএনপি আসলে কী চায়?”
গত সপ্তাহে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে দলের সমর্থন জানিয়ে তার গায়ে থাকা কাশ্মীরি শাল আগুন ছুড়ে ফেলেন। তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেছেন, এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়নি। রিজভী এই কাজ করবেন, সেটাও জানা ছিল না তাদের।
সরকারের অর্জনকে বিএনপি ‘ধ্বংস করতে চায়’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, “এই কারণেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা। বাংলাদেশ আর ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে এর ভিতরে এই ধরনের কথা বা¯Íবসম্মতও না, বা¯Íবতাও নাই।” বিএনপি নেতাকর্মীদের সামরিক ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলার যে কথা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সেটি কীভাবে দেখছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “আন্দোলন করার লোক পায় না, সামরিক ট্রেনিং কাকে দেবে। এ আরেকটা প্রতারণা, এতে সার বলতে আর কিছু নেই। আমি বলব এটা প্রতারণামূলক কথা।” বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি কতখানি বা¯Íবসম্মত– এই প্রশ্নে কাদের বলেন, “কী কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন? নির্বাচন এই দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে।”
দীর্ঘদিনের অপমান ও লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনে সমর্থন দিয়েছে: এদিকে গতকাল রোববারও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “আজকের রাজনীতিতে সবচেয়ে সমাদৃত শব্দ ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’। এই পণ্য বর্জন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের অপমান, বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনে সমর্থন দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ বর্জনের আহŸান জানালেও আজ তা সর্বমহলে সমাদৃত।”
গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, “আজকে ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে। অথচ, পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় না, বন্ধুত্বের কথা বলে প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করা হচ্ছে। এসব অন্যায় ও অবিচারের কারণে বাংলাদেশিদের প্রতিবাদী করে তুলেছে। বাংলাদেশের বাজার বাণিজ্যে তারা একতরফা আধিপত্য বজায় রেখেছে দীর্ঘদিন। তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র মনে করলে ভারসাম্যমূলক বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতো। ভারত কখনই ব্যবসায়িক নীতি মানেনি।”
তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। দেশ কীভাবে চলবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। দেশবাসীই ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে কে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।” রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আর এই অবৈধ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা। এ কারণেই বাংলাদেশের জনগণের ভারতের বিরুদ্ধে বেশি ÿুব্ধ হয়েছে।” রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, “৭২ সালে ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তখন থেকেই মওলানা ভাসানী এর প্রতিবাদ করেন। সব বাম রাজনৈতিক দলগুলোও এর বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। তৎকালীন জাসদও সে সময় ভারতের এই নীতির জন্য প্রকাশ্যে রাজপথে ছিল। বড়ভাইসুলভ আচরণের জন্য ভারতকে আধিপত্যবাদী শক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আপডেট সময় : ০১:২২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি বিএনপির বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিজের গায়ের ভারতীয় চাদর খুলে আগুনে পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও দলটির উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এটা রিজভীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ÿমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের মধ্যে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের দাম বাড়ানো। না হলে রমজানের সময় ঈদের আগে এই ডাক কেন? আর সব ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা কখনও ঠিক রাখা যাবে?
গতকাল রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বা¯Íবতা হচ্ছে বিএনপির অনেকেই লাইন দিয়েছিল। অনেকেই গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য লাইন দিয়েছিল। অনেকের হিসাব মিলে নাই। সেই কারণে তারা ভিন্ন পথে হেঁটেছে। সুতরাং জয়নাল আবেদিন ফারুক সাহেব কিংবা অন্য সাহেবরা যা কিছু বলুক না কেন, কারও যখন গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তখন এরকম অনেকেই বলে।
তারা মামলা করতে চাইলে করুক, আমিও বসে আছি: এর আগে একটি টেলিভিশন টকশোতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেছিলেন, রেকর্ড প্রকাশ না করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করবেন। সেই প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, তারা মামলা করতে চাইলে করুক, আমিও বসে আছি। আমি সেটার জন্য প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে আমরাও আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এটা আসলে আইনের বিষয় নয়। এসব কথা বলে আসলেৃ তাদের নেতারা বিভিন্ন দল করতো। জয়নাল আবেদিন ফারুক ছাত্রলীগ করতো। পরে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্য বিএনপিতে গেছে। যারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী তারা নানা ধরনের কথা বলে।
ইফতারে ভারতের পেঁয়াজ দিয়েই ছোলা-পেঁয়াজু খেয়েছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে কী না আসে? যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে দেখা যাবে যে ইফতারের সময় ভারতের পেঁয়াজ দিয়েই ছোলা-পেঁয়াজু খেয়েছেন। এসব খেয়ে উনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। আর উনার স্ত্রী ভারতীয় শাড়ি পরেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন, কয়েক দিন আগে না ভারতে গেলেন চিকিৎসা করতে! তোমরা ভারতে চিকিৎসা করতে যাবা, ভারতের পেঁয়াজ খাবা, গরুর মাংস খাবা, শাড়ি পরবা, অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করবা, আর রা¯Íায় নেমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিবা। এটার মূল উদ্দেশ্য বাজারকে অস্থিতিশীল করা এবং রমজান ঈদের আগে পণ্যের দাম বাড়ানো। তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। সুতরাং আমরা একে অপরের সহযোগী। এই সহযোগিতার মাধ্যমেই আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে এই সহযোগিতা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে চাই।
ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য জানতে চান কাদের: ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ এর আহŸান নিয়ে বিএনপি নেতারা যে যাই বলুন না কেন, এ বিষয়ে দলটির অবস্থান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে শুনতে চান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, “বিএনপির নেতারা একেক জন একেক কথা বলেন, একেক নেতা একেক সুরে কথা বলেন। আমি এখন শুনতে চাইব বিএনপির মহাসচিব তিনি কি বলেন, দলের মুখপাত্র আছে তো। এখন দলের মুখপাত্র হিসেবে মির্জা ফখরুল সাহেব কি বলেন?
“হাফিজ সাহেব কি বললেন, রিজভী কি বললেন, মঈন খান কি বললেন, আমির খসরু কি বললেন, তার চেয়েও আমরা এখানে গুরুত্ব দিয়ে জানতে চাইব ফখরুল সাহেব কি বলেন।“
রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে কথা বলছিলেন কাদের। ঠিক কী কারণে বিএনপি নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করার কথা বলতে পারেন, সেই প্রশ্নে কাদের বলেন, “বিএনপির নেতারা ব্যর্থতার জন্য তারা নিজেরাই ক্লান্ত, তাদের কর্মীরা হতাশ। এ সময় নেতাদের কারও সাথে কারও কথার মিল আমরা দেখি না। মঈন খান বললেন ভারতকে গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য সহযোগিতা করার জন্য। আবার রিজভী তার চাদর খুলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ভারত বর্জন শুরু করলেন। বিএনপি আসলে কী চায়?”
গত সপ্তাহে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে দলের সমর্থন জানিয়ে তার গায়ে থাকা কাশ্মীরি শাল আগুন ছুড়ে ফেলেন। তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেছেন, এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়নি। রিজভী এই কাজ করবেন, সেটাও জানা ছিল না তাদের।
সরকারের অর্জনকে বিএনপি ‘ধ্বংস করতে চায়’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, “এই কারণেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা। বাংলাদেশ আর ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে এর ভিতরে এই ধরনের কথা বা¯Íবসম্মতও না, বা¯Íবতাও নাই।” বিএনপি নেতাকর্মীদের সামরিক ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলার যে কথা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সেটি কীভাবে দেখছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, “আন্দোলন করার লোক পায় না, সামরিক ট্রেনিং কাকে দেবে। এ আরেকটা প্রতারণা, এতে সার বলতে আর কিছু নেই। আমি বলব এটা প্রতারণামূলক কথা।” বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি কতখানি বা¯Íবসম্মত– এই প্রশ্নে কাদের বলেন, “কী কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন? নির্বাচন এই দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে।”
দীর্ঘদিনের অপমান ও লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনে সমর্থন দিয়েছে: এদিকে গতকাল রোববারও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “আজকের রাজনীতিতে সবচেয়ে সমাদৃত শব্দ ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’। এই পণ্য বর্জন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের অপমান, বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনে সমর্থন দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ বর্জনের আহŸান জানালেও আজ তা সর্বমহলে সমাদৃত।”
গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, “আজকে ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে। অথচ, পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় না, বন্ধুত্বের কথা বলে প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা করা হচ্ছে। এসব অন্যায় ও অবিচারের কারণে বাংলাদেশিদের প্রতিবাদী করে তুলেছে। বাংলাদেশের বাজার বাণিজ্যে তারা একতরফা আধিপত্য বজায় রেখেছে দীর্ঘদিন। তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র মনে করলে ভারসাম্যমূলক বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতো। ভারত কখনই ব্যবসায়িক নীতি মানেনি।”
তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। দেশ কীভাবে চলবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। দেশবাসীই ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে কে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।” রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আর এই অবৈধ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা। এ কারণেই বাংলাদেশের জনগণের ভারতের বিরুদ্ধে বেশি ÿুব্ধ হয়েছে।” রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, “৭২ সালে ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তখন থেকেই মওলানা ভাসানী এর প্রতিবাদ করেন। সব বাম রাজনৈতিক দলগুলোও এর বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। তৎকালীন জাসদও সে সময় ভারতের এই নীতির জন্য প্রকাশ্যে রাজপথে ছিল। বড়ভাইসুলভ আচরণের জন্য ভারতকে আধিপত্যবাদী শক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো।”