নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির দুঃসময় চলে গেছে- তা নয়, বরং বর্তমানে বড় দুঃসময় চলছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। নিজেদের আত্মসমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ৪০ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে এখনো বন্দি আছেন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি মুক্ত নন, আমরা এত কৃতিত্বের দাবিদার হই কী করে? আমরা তো আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারি না। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, রাষ্ট্র যতদিন আছে ষড়যন্ত্র ততদিন থাকবে। রাজনীতি যতদিন থাকবে ষড়যন্ত্র ততদিন থাকবে। আমাদের নেত্রী যেহেতু ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সব সময় ঊর্ধ্বে রাখতে চান, সেজন্য তার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিজ দলের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দলে ভালো-মন্দ লোক থাকবে সেটা যেমন ঠিক আছে, তেমনই ভালো কাজটা ভালো লোকদের দিয়ে করাটাও উচিত। সব কথা সবাইকে নিয়ে বলা যায় না। কেন আমরা দলের নিবেদিত কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারি না- প্রশ্ন রাখেন গয়েশ্বর। খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে বিএনপির এ শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন একমাত্র ভাগ্যবান ব্যক্তি, যার মৃত্যুর পর প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তার কফিনে ফুল দিয়েছে। এমনকি আমাদের রাজনৈতিক অত্যন্ত বেশি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ থেকেও তার জন্য শোকবার্তা পাঠিয়েছে। এটাই তার সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে তার যতটুকু সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, জনগণ তা দিলেও বিএনপি দেয়নি। দলটির আরেক প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয়, ব্যারিস্টার মওদুদের রাজনীতিতে অবদান আছে, পাশাপাশি দলের বিপরীতে দাঁড়ানোর রেওয়াজও আছে। তার একটা রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবন আছে। তবে তিনি সবসময় ¯্রােতের অনুকূলে থাকতে চেষ্টা করতেন, প্রতিকূলতায় তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। দলের দুঃসময়ে ও সুসময় থাকা নেতাকর্মীরা সবাই যেখানে সমান সেখানে কাউকে ছোট-বড় করে তুলনা করার প্রয়োজন নেই। আমরা সবসময় যেমন ভালো লোক নিয়ে চলতে পারি না, দলের নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতেও পারি না- বলেন তিনি। গয়েশ্বর বলেন, যে দেশের আদালত শেখ হাসিনার কথায় চলে, যে দেশের বিচারকেরা শেখ হাসিনার নাম শুনলে আতঙ্কে ভুগেন, সে দেশে বিচার পাবো কোথা থেকে? আমাদের জন্য অবিচারই নির্ধারিত। এ নির্ধারিত অবিচার দূর করতে হলে দেলোয়ার হোসেন বৃদ্ধ বয়সে দেশের প্রতি দলের প্রতি যা করে দেখিয়েছেন, সেটা অনুসরণ করে আমাদের সামনে এগোতে হবে। তবেই দেশ ও জনগণকে মুক্ত করা যাবে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।