ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপিকর্মীদের মামলায় হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ চান আমীর খসরু

  • আপডেট সময় : ০৮:২১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে বিএনপির যে নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে ‘হয়রানি’ করা হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালাস পাওয়ার পর রোববার (২৭ এপ্রিল) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রাজধানীর শাহবাগ থানার এ মামলায় আমীর খসরুসহ পাঁচজনকে খালাস দেন। খসরু সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৪২টা মামলা। বিগত বছরগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন তো আমাদের কোর্টেই সময় দিতে হত। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কতদিন লাগবে জানি না। আজকে একটার রায় হয়েছে। আরো অনেক মামলা আছে। বাংলাদেশে শুধু আমি না, বিএনপির ৬০ লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে। গুম, খুন করা হয়েছে। তাদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। চাকরি-ব্যবসা ছাড়তে হয়েছে।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই লোকগুলোর কী হবে। তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে। রাষ্ট্র কী এগুলোর ক্ষতিপূরণ দেবে? তাদের সম্পর্কে তো কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্রের আন্দোলনের যারা মূল ভিত্তি সৃষ্টি করেছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর ধরে, তাদের কী হবে? তাদের কোনো খবর নিচ্ছে সেটা তো দেখতে পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বিগত দিনে যারা এ আন্দোলন এ জায়গায় নিয়ে এসেছিল, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, ১৫/১৬ বছর ধরে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, সবকিছু হারিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার মনে হয় এ বিষয়টা আমাদের সকলের ভাবা দরকার।

কেমন বিচার বিভাগ দেখতে চান -এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, মুক্ত বিচার বিভাগ, স্বাধীন বিচার বিভাগ। যেটার জন্য আমরা ১৫/১৬ বছর লড়েছি। বিচারের নামে যে প্রহসনে লাখ লাখ মানুষ আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে, জীবন হারিয়েছে, জেলে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। পুলিশ কাস্টডিতে মারা গেছে। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ছাড়া একটি দেশের গণতন্ত্র টিকতে পারে না।

বিচার বিভাগের স্বাধীন সচিবালয় গঠনের বিষয়ে প্রশ্নে করলে তিনি বলেন, এটা তো আমাদের প্রোপোজাল। এখন যদি এটা বাস্তবায়ন না হয়, আমাদের সময় আমরা বাস্তবায়ন করব। অবশ্যই করব।

এ মামলায় খালাস পাওয়া বাকি চারজন হলেন- ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমী, মো. রফিকুল ইসলাম নয়ন, হাবিবুর রহমান হাবিব ও রবিউল ইসলাম রবি।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব বাসচাপায় নিহত হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমীর খসরুর একটি কথিত ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডিবি পুলিশের তৎকালীন পল্লবী জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. শামীম আহমেদ।

মামলায় আমীর খসরু ও ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে তখনকার ছাত্র আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আদালত যে রায় দিল, তাতে আসামিদের সবাইকে খালাস দেওয়া হল।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিএনপিকর্মীদের মামলায় হয়রানির জন্য ক্ষতিপূরণ চান আমীর খসরু

আপডেট সময় : ০৮:২১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে বিএনপির যে নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে ‘হয়রানি’ করা হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালাস পাওয়ার পর রোববার (২৭ এপ্রিল) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রাজধানীর শাহবাগ থানার এ মামলায় আমীর খসরুসহ পাঁচজনকে খালাস দেন। খসরু সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৪২টা মামলা। বিগত বছরগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন তো আমাদের কোর্টেই সময় দিতে হত। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কতদিন লাগবে জানি না। আজকে একটার রায় হয়েছে। আরো অনেক মামলা আছে। বাংলাদেশে শুধু আমি না, বিএনপির ৬০ লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে। গুম, খুন করা হয়েছে। তাদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। চাকরি-ব্যবসা ছাড়তে হয়েছে।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই লোকগুলোর কী হবে। তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে। রাষ্ট্র কী এগুলোর ক্ষতিপূরণ দেবে? তাদের সম্পর্কে তো কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্রের আন্দোলনের যারা মূল ভিত্তি সৃষ্টি করেছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর ধরে, তাদের কী হবে? তাদের কোনো খবর নিচ্ছে সেটা তো দেখতে পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বিগত দিনে যারা এ আন্দোলন এ জায়গায় নিয়ে এসেছিল, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, ১৫/১৬ বছর ধরে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, সবকিছু হারিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার মনে হয় এ বিষয়টা আমাদের সকলের ভাবা দরকার।

কেমন বিচার বিভাগ দেখতে চান -এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, মুক্ত বিচার বিভাগ, স্বাধীন বিচার বিভাগ। যেটার জন্য আমরা ১৫/১৬ বছর লড়েছি। বিচারের নামে যে প্রহসনে লাখ লাখ মানুষ আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে, জীবন হারিয়েছে, জেলে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। পুলিশ কাস্টডিতে মারা গেছে। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ছাড়া একটি দেশের গণতন্ত্র টিকতে পারে না।

বিচার বিভাগের স্বাধীন সচিবালয় গঠনের বিষয়ে প্রশ্নে করলে তিনি বলেন, এটা তো আমাদের প্রোপোজাল। এখন যদি এটা বাস্তবায়ন না হয়, আমাদের সময় আমরা বাস্তবায়ন করব। অবশ্যই করব।

এ মামলায় খালাস পাওয়া বাকি চারজন হলেন- ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমী, মো. রফিকুল ইসলাম নয়ন, হাবিবুর রহমান হাবিব ও রবিউল ইসলাম রবি।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব বাসচাপায় নিহত হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমীর খসরুর একটি কথিত ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডিবি পুলিশের তৎকালীন পল্লবী জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মো. শামীম আহমেদ।

মামলায় আমীর খসরু ও ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে তখনকার ছাত্র আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আদালত যে রায় দিল, তাতে আসামিদের সবাইকে খালাস দেওয়া হল।