ঢাকা ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

বায়িং হাউজের আড়ালে ভয়ঙ্কর মাদক আইস বেচাকেনা

  • আপডেট সময় : ০৯:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ থেকে ভয়ঙ্কর মাদক আইস সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতো চক্রটি। আইস সেবনের জন্য উত্তরায় একটি ‘নিরাপদ জায়গায়’ নিয়ে সেখানেই উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। রাজধানীর উত্তরা থেকে আইস মাদক চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতারের পর গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা অভিযানে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকা থেকে এই ছয়জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- তৌফিক হোসাইন, জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন, আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র, রাকিব বাশার খান, খালেদ ইকবাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ। এরা বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব-৩ এর অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মাদক আইস, ইয়াবা, বিদেশী মদ, গাঁজা ও ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, এয়ার গান, রেপ্লিকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্য। ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করতেন তারা। টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে সরবরাহ করা হতো উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর গুলশান উত্তরা থেকে আইস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন তারা। রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করে পরবর্তীতে আরো জানতে পারে, একটি বাইয়িং হাউজের আড়ালে চলছিল আইস কেনাবেচা এবং সেবন। যেসব তরুণ-তরুণীরা তাদের এসব জায়গায় সেবন করতে আসতো, তাদের বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তরুণ-তরুণীদের আইস এবং ইয়াবা সেবন করিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছে থেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো এই চক্রটি। সিন্ডিকেটের বাইরে আইস সরবরাহ করা হতো না বলেই ক্লায়েন্টদের প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখতেন তারা।
র‌্যাব জানায়, এই চক্রের আইস মাদক ব্যবসার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে ছিলেন গ্রেফতার জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন। আর গ্রেফতারকৃত তৌফিক মূলত সমন্বয়ের কাজ করতেন। রুদ্র ল্যাবের কেমিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। সবুজ আইস সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ করতেন। এছাড়া মাদক বিপণন বহন করার ক্ষেত্রে রাকিব ও খালিদকে ব্যবহার করা হতো। রাজধানীতে আরো ৫০ জনের মতো আইসসেবী রয়েছেন। এই চক্রটি প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আইস পৌঁছে দিতো। গত দু’বছর যাবৎ তারা এই আইস ব্যবসার সাথে জড়িত। এর আগে ১০ বছর ধরে তারা ইয়াবার সাথে জড়িত ছিলেন।
উদ্ধার হওয়া এয়ারগান প্রসঙ্গে র‌্যাব জানায়, মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বায়িং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানে আইস সেবনের পর তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তারা এইমিং গেমস খেলতেন। আর এই এয়ারগান দিয়ে চলতো গেমসটি। তবে উদ্ধার এয়ার গানগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি, যদিও এয়ারগান ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তাদের কাছে এয়ারগানগুলো কীভাবে এলো এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আর উদ্ধার হওয়া রেপ্লিকা অস্ত্র দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় আগত আইস সেবীদের ভয়-ভীতি দেখাতো।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ, রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপ আউট, খালেদ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে গ্রেফতারকৃত রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
অর্থ যোগানদাতা কে এই জুবেইন : লন্ডন থেকে বিবিএ করা জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইনের বসবাস রাজধানীর উত্তরায়। আগে থেকে ইয়াবাসেবী জুবেইন অধিক লাভের আশায় আইস মাদক এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার একসাথে ১৫ থেকে ২০টি ইয়াবা লাগতো। উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করাই ছিল তার কাজ।
এইচএসসি পাস করে কেমিস্ট, বানাতেন ‘ঝাক্কি’ : কোমল পানীয়, আইস, ইয়াবা- এগুলো সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের একটি মাদক ‘ঝাক্কি’। এইচএসসি পাস আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র ছিলেন তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ম্যাথ ল্যাবের কেমিস্ট। তিনিই বানাতেন এসব সংমিশ্রণ। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরা প্রথমে প্রথমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সেই মাদকের সংমিশ্রণে তৈরি করে ‘ঝাক্কি’ নাম দিয়ে সেগুলোও সরবরাহ করতেন মাদকসেবীদের কাছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বায়িং হাউজের আড়ালে ভয়ঙ্কর মাদক আইস বেচাকেনা

আপডেট সময় : ০৯:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ থেকে ভয়ঙ্কর মাদক আইস সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতো চক্রটি। আইস সেবনের জন্য উত্তরায় একটি ‘নিরাপদ জায়গায়’ নিয়ে সেখানেই উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। রাজধানীর উত্তরা থেকে আইস মাদক চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতারের পর গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা অভিযানে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকা থেকে এই ছয়জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- তৌফিক হোসাইন, জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন, আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র, রাকিব বাশার খান, খালেদ ইকবাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ। এরা বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব-৩ এর অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মাদক আইস, ইয়াবা, বিদেশী মদ, গাঁজা ও ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, এয়ার গান, রেপ্লিকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্য। ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করতেন তারা। টেকনাফ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে সরবরাহ করা হতো উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর গুলশান উত্তরা থেকে আইস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন তারা। রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করে পরবর্তীতে আরো জানতে পারে, একটি বাইয়িং হাউজের আড়ালে চলছিল আইস কেনাবেচা এবং সেবন। যেসব তরুণ-তরুণীরা তাদের এসব জায়গায় সেবন করতে আসতো, তাদের বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তরুণ-তরুণীদের আইস এবং ইয়াবা সেবন করিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছে থেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো এই চক্রটি। সিন্ডিকেটের বাইরে আইস সরবরাহ করা হতো না বলেই ক্লায়েন্টদের প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখতেন তারা।
র‌্যাব জানায়, এই চক্রের আইস মাদক ব্যবসার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে ছিলেন গ্রেফতার জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন। আর গ্রেফতারকৃত তৌফিক মূলত সমন্বয়ের কাজ করতেন। রুদ্র ল্যাবের কেমিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। সবুজ আইস সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ করতেন। এছাড়া মাদক বিপণন বহন করার ক্ষেত্রে রাকিব ও খালিদকে ব্যবহার করা হতো। রাজধানীতে আরো ৫০ জনের মতো আইসসেবী রয়েছেন। এই চক্রটি প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আইস পৌঁছে দিতো। গত দু’বছর যাবৎ তারা এই আইস ব্যবসার সাথে জড়িত। এর আগে ১০ বছর ধরে তারা ইয়াবার সাথে জড়িত ছিলেন।
উদ্ধার হওয়া এয়ারগান প্রসঙ্গে র‌্যাব জানায়, মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বায়িং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানে আইস সেবনের পর তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তারা এইমিং গেমস খেলতেন। আর এই এয়ারগান দিয়ে চলতো গেমসটি। তবে উদ্ধার এয়ার গানগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি, যদিও এয়ারগান ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। তাদের কাছে এয়ারগানগুলো কীভাবে এলো এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আর উদ্ধার হওয়া রেপ্লিকা অস্ত্র দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় আগত আইস সেবীদের ভয়-ভীতি দেখাতো।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ, রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপ আউট, খালেদ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে গ্রেফতারকৃত রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।
অর্থ যোগানদাতা কে এই জুবেইন : লন্ডন থেকে বিবিএ করা জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইনের বসবাস রাজধানীর উত্তরায়। আগে থেকে ইয়াবাসেবী জুবেইন অধিক লাভের আশায় আইস মাদক এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার একসাথে ১৫ থেকে ২০টি ইয়াবা লাগতো। উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করাই ছিল তার কাজ।
এইচএসসি পাস করে কেমিস্ট, বানাতেন ‘ঝাক্কি’ : কোমল পানীয়, আইস, ইয়াবা- এগুলো সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের একটি মাদক ‘ঝাক্কি’। এইচএসসি পাস আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র ছিলেন তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ম্যাথ ল্যাবের কেমিস্ট। তিনিই বানাতেন এসব সংমিশ্রণ। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরা প্রথমে প্রথমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সেই মাদকের সংমিশ্রণে তৈরি করে ‘ঝাক্কি’ নাম দিয়ে সেগুলোও সরবরাহ করতেন মাদকসেবীদের কাছে।