ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বাড়ছে দাম, আরও ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি

  • আপডেট সময় : ০২:২৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কমানো শুল্কহারে চাল আমদানির জন্য আরও ৭৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ এক হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির জন্য বরাদ্দ দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ও ২৪ হাজার টন আতপ চাল। এর আগে গত ১৭ আগস্ট ৪১ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ১০ হাজার টন, ১৮ আগস্ট ৬৯ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ১৮ হাজার টন, ২১ আগস্ট ৯১ প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ ৯১ হাজার, ২২ আগস্ট দুই লাখ ২২ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৭৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে, ২৩ আগস্ট ৯৪ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ও ২৪ আগস্ট ৫৭ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৩৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নদেশের নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজারে লাগাম টানতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এতে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে দাম। কিন্তু গতকাল সোমবার ফের কেজিতে এক টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এদিকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তবে, এ দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। এ অস্থিরতা রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের ওপর নজরদারিতে গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭ দফায় মোট সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করতে হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম ৪৬ থেকে ৪৮ ও লতা ৫৫-৫৬ টাকা। এছাড়া বিরি-২৮ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং স্বর্ণা ৪১ থেকে ৪৩ টাকায়। এসব চাল একদিন আগেও এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আর ১৫ আগে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৩, ৫৬,৫৯ টাকা। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫২,৫৫,৫৮ টাকা। আর গত ১৫ দিন আগেছিলো ৫৫, ৫৮, ৬১ টাকা। নাজিরশাইল ৫৭, ৬০ ও ৬২ টাকা। একদিন আগে এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আর ১৫ দিন আগে ছিল ৬০, ৬৩, ৬৫ টাকা। ২৮ চাল প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, হাস্কী নাজির ৪৬, ৪৭, ৫০ টাকা। কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। পাইজাম ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা। যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে এক টাকা কমে। ১৫ দিন আগে ছিলে এর থেকেও কেজিতে ৩ টাকা বেশি।
জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টনেরও বেশি ধান কাটা হয়েছে। তবুও চালের দাম কমেনি। বোরো মৌসুমের আগে সরকারের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ টাকা হয়ে যায়। সরকার স্থানীয় বাজার থেকে নয় দশমিক ৩২ টন বোরো ও তিন দশমিক ৫০ লাখ টন অন্যান্য জাতের চাল সংগ্রহ করে মজুত বাড়ালেও বাজারে দাম আর কমেনি। গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের হাতে সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৭ দশমিক ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৪ দশমিক নয় লাখ টন চাল এবং বাকিটা ধান, গম ও আটা। গত বছর আগস্টের শেষ নাগাদ সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৩ দশমিক ১৪ লাখ টন, এর মধ্যে নয় দশমিক ৮৫ লাখ টন চাল ছিল। বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানির খবরে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। বাবুবাজারের পাইকারী আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির আব্দুল রশিদ বলেন, এখন চালের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। মূলত অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। তারা ধান কিনে মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যখন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে তখন চালের দাম প্রকার ভেদে বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমিয়ে দেয়। এখন এলসি করার তারিখ শেষ হওয়ায় আজ (৩০ আগস্ট) আবার চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে কেজিতে ২/৩ টাকা কমলেও ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের দাম আবার ১ টাকা বেড়েছে। বাবুবাজারের পাইকারী বাজারের দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার আনিসুল হক বলেন, মূলত মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। সরকারের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। সরকারকে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

বাড়ছে দাম, আরও ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি

আপডেট সময় : ০২:২৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : কমানো শুল্কহারে চাল আমদানির জন্য আরও ৭৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ এক হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে আমদানির জন্য বরাদ্দ দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ও ২৪ হাজার টন আতপ চাল। এর আগে গত ১৭ আগস্ট ৪১ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ১০ হাজার টন, ১৮ আগস্ট ৬৯ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ১৮ হাজার টন, ২১ আগস্ট ৯১ প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ ৯১ হাজার, ২২ আগস্ট দুই লাখ ২২ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৭৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে, ২৩ আগস্ট ৯৪ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ও ২৪ আগস্ট ৫৭ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৩৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নদেশের নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজারে লাগাম টানতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এতে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে দাম। কিন্তু গতকাল সোমবার ফের কেজিতে এক টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এদিকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তবে, এ দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। এ অস্থিরতা রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের ওপর নজরদারিতে গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭ দফায় মোট সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করতে হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম ৪৬ থেকে ৪৮ ও লতা ৫৫-৫৬ টাকা। এছাড়া বিরি-২৮ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং স্বর্ণা ৪১ থেকে ৪৩ টাকায়। এসব চাল একদিন আগেও এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আর ১৫ আগে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৩, ৫৬,৫৯ টাকা। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫২,৫৫,৫৮ টাকা। আর গত ১৫ দিন আগেছিলো ৫৫, ৫৮, ৬১ টাকা। নাজিরশাইল ৫৭, ৬০ ও ৬২ টাকা। একদিন আগে এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আর ১৫ দিন আগে ছিল ৬০, ৬৩, ৬৫ টাকা। ২৮ চাল প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, হাস্কী নাজির ৪৬, ৪৭, ৫০ টাকা। কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। পাইজাম ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা। যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে এক টাকা কমে। ১৫ দিন আগে ছিলে এর থেকেও কেজিতে ৩ টাকা বেশি।
জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টনেরও বেশি ধান কাটা হয়েছে। তবুও চালের দাম কমেনি। বোরো মৌসুমের আগে সরকারের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ টাকা হয়ে যায়। সরকার স্থানীয় বাজার থেকে নয় দশমিক ৩২ টন বোরো ও তিন দশমিক ৫০ লাখ টন অন্যান্য জাতের চাল সংগ্রহ করে মজুত বাড়ালেও বাজারে দাম আর কমেনি। গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের হাতে সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৭ দশমিক ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৪ দশমিক নয় লাখ টন চাল এবং বাকিটা ধান, গম ও আটা। গত বছর আগস্টের শেষ নাগাদ সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৩ দশমিক ১৪ লাখ টন, এর মধ্যে নয় দশমিক ৮৫ লাখ টন চাল ছিল। বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানির খবরে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। বাবুবাজারের পাইকারী আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির আব্দুল রশিদ বলেন, এখন চালের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। মূলত অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। তারা ধান কিনে মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যখন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে তখন চালের দাম প্রকার ভেদে বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমিয়ে দেয়। এখন এলসি করার তারিখ শেষ হওয়ায় আজ (৩০ আগস্ট) আবার চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে কেজিতে ২/৩ টাকা কমলেও ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের দাম আবার ১ টাকা বেড়েছে। বাবুবাজারের পাইকারী বাজারের দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার আনিসুল হক বলেন, মূলত মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। সরকারের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। সরকারকে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।