নিজস্ব প্রতিবেদক : নেত্রকোণায় বাল্যবিয়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়া দুই কিশোর-কিশোরী মুক্তি পেয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গতকাল বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের মধ্যেই জেলার আদালত তাদের মুক্তির আদেশ দেয়। হাইকোর্টও তাদের মুক্তির আদেশ দিয়েছিল।
সাইফুর বলেন, ‘নেত্রকোণার জেলা প্রশাসককে টেলিফোনে আদালতের আদেশ জানিয়েছি। তবে সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি করে ইতোমধ্যে দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই কিশোর-কিশোরীর তাৎক্ষণিক মুক্তির আদেশ চেয়ে সকালেই হাই কোর্টের কাছে চিঠির আকারে একটি আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ দুপরে তা আবেদন হিসেবে গ্রহণ করে দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেয়। তাদের মুক্তি দিয়ে তা আদালতকে জানাতে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বিকালে দুই কিশোর-কিশোরীর মুক্তির খবর সাংবাদিকদের জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ‘২০১৭-এর ৭ (২) ধারায় শর্ত আরোপ করে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাল্যবিয়ে করলে তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। বিচার বা শাস্তির ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের শিশু আইন প্রযোজ্য হবে। কিন্তু তা না করে নেত্রকোণায় ওই কিশোর-কিশোরীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী শিশির মনির।
‘রাষ্ট্র বনাম আইন মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য’ মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তার আবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ‘এখতিয়ার নেই’। ফলে গত রোববার নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ৭(২) ধারায় দুই শিশুকে যে আটকাদেশ দিয়েছেন, তা ‘এখতয়িারবহির্ভূত’।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএসসির নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী শিশু দুটির বয়স ১৫ বছর। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করছিল। সে সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি মেয়টি বিয়ে করার জন্য ছেলেটিকে চাপ দেয়। কিন্তু ছেলেটি তা প্রত্যাখ্যান করে। গত কোরবানির ঈদে তারা গ্রামের বাড়িতে যায়। মেয়েটি বিয়ের দাবিতে গত সপ্তাহের বুধবার রাত থেকে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এরপর গত রোববার ছেলেমেয়ের পরিবার তাদের বিয়ের আয়োজন করে। বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া সেখানে পুলিশ পাঠান। এরপর দুজনকে তার কার্যালয়ে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে এক মাসের আটকাদেশ দেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাল্যবিয়ের দায়ে আটক কিশোর-কিশোরী মুক্তি পেল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ