ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

বালুর ট্রাকে ৭দিনে ১১ প্রাণহানি

  • আপডেট সময় : ১২:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ড্রাম ট্রাক তথা বালুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মাত্র ৭দিনে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারান গত ৯ জানুয়ারি। পরদিন ১০ জানুয়ারি ভোরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল এলাকায় ড্রাম ট্রাকের চাপায় নিহত হন চার তামাক শ্রমিক। পরদিন ১১ জানুয়ারি শহরের বাড়াদী এলাকায় একই ধরনের আরেক ট্রাকের চাপায় নিহত হন এক পথচারী। এর পরদিন ১২ জানুয়ারি মিরপুরের মশানে নিহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। একইদিন বিআরবি কেবলসের এক কর্মকর্তা নিহত হন ত্রিমোহনী এলাকায়। ১৪ জানুয়ারি শহরের হরিশংকরপুরে এক শিশু বালুবাহী ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারায়। পরদিন ১৫ জানুয়ারিও এক ভ্যানযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয় বালুর ট্রাক। দুর্ঘটনাটি ঘটে বিত্তিপাড়া এলাকায়। এসব পরিসংখ্যান বলছে, ৯ থেকে ১৫ জানুয়ারি এই এক সপ্তাহ সময়ে কুষ্টিয়ায় ড্রাম ট্রাক কেড়ে নিয়েছে বিভিন্ন বয়সী ১১ জনের প্রাণ। কেবল এই এক সপ্তাহই নয়, ড্রাম ট্রাক তথা বালুবাহী ট্রাক ধারাবাহিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুষ্টিয়ায়। জেলার সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগের সঙ্গেই জড়িত এই বাহনটি। এলাকাবাসী একে নাম দিয়েছে ‘ঘাতক বাহন’। স্থানীয়রা বলছেন, শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুবাহী ড্রাম ট্রাক। এর কারণে প্রতিদিনই কুষ্টিয়া শহর ও শহরতলীতে সড়কে ঝরছে প্রাণ। অথচ ঘাতক এই বাহনটি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। দুর্ঘটনাকবলিত কিছু গাড়ি জব্দ করা হলেও মামলা না দিয়েই সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বালু কিংবা মাটি ভর্তি দ্রুতগামী ড্রাম ট্রাকসহ অনুমোদনহীন নছিমন-করিমনের মতো যানবাহনই দখল করে রেখেছে কুষ্টিয়ার সড়ক-মহাসড়ক। আর এসব লাগামহীন যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে একেকটি তরতাজা প্রাণ। কুষ্টিয়ার সড়কের নিয়মিত পথচারীরা জামশেদ বলছেন, ড্রাম ট্রাকগুলো অনেক বেশি লোড করা হয়। তাদের পাশ দিয়ে অন্য গাড়ি গেলেও সাইড দিতে চায় না। এর জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব গাড়ির চালক সাধারণত অল্প বয়সী ও অদক্ষ। এসব যানবাহন যদি শুধুমাত্র রাতের বেলায় চালানোর অনুমতি থাকে, তাহলেও দুর্ঘটনা কমবে। এলাকার ফারুক বলেন, এমন কোনো দিন নেই যেদিন লোক মরছে না। রাস্তার এসব বড় বড় গাড়িগুলো ছোট গাড়িদের পাত্তাই দেয় না। যার ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। দিনের বেলায় ড্রাম ট্রাকে বালু বহন করাকে দুর্ঘটনা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন শহরের এক রিকশাচালক। তার দাবি, দিনের বেলায় শহরের ভেতর দিয়ে বালু বহন করে এসব ড্রাম ট্রাক। গাড়ি থেকে সেই বালু উড়ে এসে পড়ে তাদের চোখেমুখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালকের বক্তব্য, দুর্ঘটনা সবই কপালের ওপর। কার মাধ্যমে দুর্ঘটনা হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের তথ্যেও সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র প্রকট হয়েছে। আড়াইশ শয্যা সদর হাসপাতালের তথ্য, গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৭৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭১ জন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও মো. আশরাফুল আলম বলেন, প্রতিটি দুর্ঘটনাই মর্মান্তিক। চিকিৎসক হিসেবে এসব দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরাও বিপর্যস্ত হই। প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল সবাই উদ্যোগ নিলে কিছুটা হলেও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ জানালেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য কারশেদ আলম। তিনি বলেন, সড়ক ব্যবস্থার যে ধারণক্ষমতা, তারচেয়েও বড় বড় ড্রাম ট্রাক চলছে। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য ড্রাম ট্রাক নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। বরং ড্রাম ট্রাকগুলো নির্ধারিত মাত্রার বেশি গতিতে চলছে এমন অভিযোগই স্বীকার করছে তারা। কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইদ্রিস আলী বলেন, ড্রাম ট্রাকগুলো কোথায় বেপরোয়া চলে, আমরা বলতে পারব না। কারণ আমরা বিভিন্ন চেকপোস্টে স্পিডগান ব্যবহার করে দেখেছি, তাদের গতি কখনোই ৬০ কিলোমিটারের বেশি থাকে না। তবে পুলিশ-প্রশাসনের এমন বক্তব্য মানতে নারাজ স্থানীয়রা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বালুর ট্রাকে ৭দিনে ১১ প্রাণহানি

আপডেট সময় : ১২:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ড্রাম ট্রাক তথা বালুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মাত্র ৭দিনে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারান গত ৯ জানুয়ারি। পরদিন ১০ জানুয়ারি ভোরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল এলাকায় ড্রাম ট্রাকের চাপায় নিহত হন চার তামাক শ্রমিক। পরদিন ১১ জানুয়ারি শহরের বাড়াদী এলাকায় একই ধরনের আরেক ট্রাকের চাপায় নিহত হন এক পথচারী। এর পরদিন ১২ জানুয়ারি মিরপুরের মশানে নিহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। একইদিন বিআরবি কেবলসের এক কর্মকর্তা নিহত হন ত্রিমোহনী এলাকায়। ১৪ জানুয়ারি শহরের হরিশংকরপুরে এক শিশু বালুবাহী ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারায়। পরদিন ১৫ জানুয়ারিও এক ভ্যানযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয় বালুর ট্রাক। দুর্ঘটনাটি ঘটে বিত্তিপাড়া এলাকায়। এসব পরিসংখ্যান বলছে, ৯ থেকে ১৫ জানুয়ারি এই এক সপ্তাহ সময়ে কুষ্টিয়ায় ড্রাম ট্রাক কেড়ে নিয়েছে বিভিন্ন বয়সী ১১ জনের প্রাণ। কেবল এই এক সপ্তাহই নয়, ড্রাম ট্রাক তথা বালুবাহী ট্রাক ধারাবাহিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুষ্টিয়ায়। জেলার সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগের সঙ্গেই জড়িত এই বাহনটি। এলাকাবাসী একে নাম দিয়েছে ‘ঘাতক বাহন’। স্থানীয়রা বলছেন, শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুবাহী ড্রাম ট্রাক। এর কারণে প্রতিদিনই কুষ্টিয়া শহর ও শহরতলীতে সড়কে ঝরছে প্রাণ। অথচ ঘাতক এই বাহনটি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। দুর্ঘটনাকবলিত কিছু গাড়ি জব্দ করা হলেও মামলা না দিয়েই সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বালু কিংবা মাটি ভর্তি দ্রুতগামী ড্রাম ট্রাকসহ অনুমোদনহীন নছিমন-করিমনের মতো যানবাহনই দখল করে রেখেছে কুষ্টিয়ার সড়ক-মহাসড়ক। আর এসব লাগামহীন যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে একেকটি তরতাজা প্রাণ। কুষ্টিয়ার সড়কের নিয়মিত পথচারীরা জামশেদ বলছেন, ড্রাম ট্রাকগুলো অনেক বেশি লোড করা হয়। তাদের পাশ দিয়ে অন্য গাড়ি গেলেও সাইড দিতে চায় না। এর জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব গাড়ির চালক সাধারণত অল্প বয়সী ও অদক্ষ। এসব যানবাহন যদি শুধুমাত্র রাতের বেলায় চালানোর অনুমতি থাকে, তাহলেও দুর্ঘটনা কমবে। এলাকার ফারুক বলেন, এমন কোনো দিন নেই যেদিন লোক মরছে না। রাস্তার এসব বড় বড় গাড়িগুলো ছোট গাড়িদের পাত্তাই দেয় না। যার ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। দিনের বেলায় ড্রাম ট্রাকে বালু বহন করাকে দুর্ঘটনা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন শহরের এক রিকশাচালক। তার দাবি, দিনের বেলায় শহরের ভেতর দিয়ে বালু বহন করে এসব ড্রাম ট্রাক। গাড়ি থেকে সেই বালু উড়ে এসে পড়ে তাদের চোখেমুখে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালকের বক্তব্য, দুর্ঘটনা সবই কপালের ওপর। কার মাধ্যমে দুর্ঘটনা হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের তথ্যেও সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র প্রকট হয়েছে। আড়াইশ শয্যা সদর হাসপাতালের তথ্য, গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৭৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭১ জন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও মো. আশরাফুল আলম বলেন, প্রতিটি দুর্ঘটনাই মর্মান্তিক। চিকিৎসক হিসেবে এসব দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরাও বিপর্যস্ত হই। প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল সবাই উদ্যোগ নিলে কিছুটা হলেও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ জানালেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য কারশেদ আলম। তিনি বলেন, সড়ক ব্যবস্থার যে ধারণক্ষমতা, তারচেয়েও বড় বড় ড্রাম ট্রাক চলছে। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য ড্রাম ট্রাক নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। বরং ড্রাম ট্রাকগুলো নির্ধারিত মাত্রার বেশি গতিতে চলছে এমন অভিযোগই স্বীকার করছে তারা। কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইদ্রিস আলী বলেন, ড্রাম ট্রাকগুলো কোথায় বেপরোয়া চলে, আমরা বলতে পারব না। কারণ আমরা বিভিন্ন চেকপোস্টে স্পিডগান ব্যবহার করে দেখেছি, তাদের গতি কখনোই ৬০ কিলোমিটারের বেশি থাকে না। তবে পুলিশ-প্রশাসনের এমন বক্তব্য মানতে নারাজ স্থানীয়রা।