ঢাকা ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বালুমহাল টেন্ডার-বাণিজ্যের টাকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহাল ইজারার টেন্ডার-বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে মধুমতী নদীর বালুমহাল ইজারা দরপত্র বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দফায় দফায় ওই সংঘর্ষ হয়। জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ১৪৩২ বাংলা সালের জন্য মধুমতী নদীর লঙ্কারচর বালুমহাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। এতে ১৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও দরপত্রদাতাদের মাঝে সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয়।

সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও নিকো-বোর্ড দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাসকে পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে এক সালিশ বৈঠক বসে। এতে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা। সালিশ বৈঠকে শুনানির সময় দরপত্রদাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতের কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সাথে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মেসিতে হামলা করে।

এতে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা ও মা ফার্মেসির মালিক রিয়াজ মৃধা গুরুতর আহত হন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথায় আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। জুয়েল বিশ্বাস বলেন, ‘বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। ওই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানার আশ্রয় নেয় ও আমার ওপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিনকে পেয়ে তাকে মারধর করে।’

পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে । এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায়। জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে গেলেও আমার ছোট ভাই মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ঢুকে সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।’ মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সাথে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারলো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এসময় সে পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫-৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমার ফার্মাসিতে হামলা চালায়। এ সময় আমার বড় ভাই ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার উপর হামলা চালায় এতে মারাত্মক আহত দুজন।‘ বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বালুমহাল টেন্ডার-বাণিজ্যের টাকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহাল ইজারার টেন্ডার-বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে মধুমতী নদীর বালুমহাল ইজারা দরপত্র বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দফায় দফায় ওই সংঘর্ষ হয়। জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ১৪৩২ বাংলা সালের জন্য মধুমতী নদীর লঙ্কারচর বালুমহাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। এতে ১৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও দরপত্রদাতাদের মাঝে সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয়।

সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও নিকো-বোর্ড দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাসকে পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে এক সালিশ বৈঠক বসে। এতে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা। সালিশ বৈঠকে শুনানির সময় দরপত্রদাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতের কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সাথে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মেসিতে হামলা করে।

এতে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা ও মা ফার্মেসির মালিক রিয়াজ মৃধা গুরুতর আহত হন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এ সময় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথায় আঘাত করে আক্রমণকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। জুয়েল বিশ্বাস বলেন, ‘বালুমহালের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। ওই টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মেসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানার আশ্রয় নেয় ও আমার ওপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিনকে পেয়ে তাকে মারধর করে।’

পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার কাছে চাঁদা দাবি করে । এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায়। জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে গেলেও আমার ছোট ভাই মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ঢুকে সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।’ মিরাজ মৃধা বলেন, রাসেলের সাথে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারলো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এসময় সে পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫-৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমার ফার্মাসিতে হামলা চালায়। এ সময় আমার বড় ভাই ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার উপর হামলা চালায় এতে মারাত্মক আহত দুজন।‘ বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।