লাইফস্টাইল ডেস্ক: অসম্মান যন্ত্রণাদায়ক। এটি মানুষকে ছোট মনে করায়, রাগিয়ে তোলে কিংবা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশোধ নিতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখানো যেতে পারে। হঠাৎ রেগে না গিয়ে বা কিছু বলে না ফেলে; বরং সচেতনভাবে, আত্মসম্মান বজায় রেখে, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তায় পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব। তারা জানে, মর্যাদা মানে নীরব সহ্য করা নয়; বরং নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা। তাই অসম্মানের মুখে যা করতে হবে, তা হলো-
প্রতিক্রিয়া প্রকাশের আগে একটু থামা (আবেগ নিয়ন্ত্রণ): কেউ অসম্মান করলে আমাদের ভেতরটা জ্বলে ওঠে; রাগ, লজ্জা, আত্মরক্ষার তাগিদ- সব একসঙ্গে। কিন্তু প্রথম প্রতিক্রিয়া কখনো সেরা প্রতিক্রিয়া নয়। তাই চর্চা করা যেতে পারে আবেগ নিয়ন্ত্রণের শিল্প। একই সঙ্গে কিছু বলে ফেলা উচিত নয়; বরং এক মুহূর্ত থেমে শ্বাস নিয়ে নিজের অনুভূতিগুলো বোঝা, তারপর ভাবতে শুরু করা- এ ঘটনাটি আদৌ কোনো প্রতিক্রিয়া দাবি করে কি না। এই বিরতি নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে; যা অসম্মান কেড়ে নিতে চায়।
উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করা (পার্সপেক্টিভ টেকিং): মনোবিজ্ঞানের এক সুন্দর শিক্ষা হলো অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা। তাই নিজেদের জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে’- এটা কি ইচ্ছাকৃত অপমান? নাকি কেবল চাপ, ভুল বোঝাবুঝি বা অজ্ঞতার ফল? ব্যক্তি কি বুঝতেই পারছে না, এ কেমনভাবে কথা বলছে?’ উদ্দেশ্য বুঝে নিলে অপ্রয়োজনীয় বিরোধ এড়ানো যায়। কেউ যদি কেবল ক্লান্তি বা দুশ্চিন্তার কারণে কঠিনভাবে কথা বলে, সেটি সহানুভূতির দাবি রাখে। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছা করেই ছোট করার চেষ্টা করে, তখন তারা বুঝে নেয়- এটা ওই ব্যক্তির চরিত্রের প্রতিফলন, নিজের মূল্যের নয়।
নিজের সীমারেখা স্পষ্ট রাখা (সেলফ রেসপেক্ট): সীমারেখা বা বাউন্ডারিস হলো মানসিক সীমানা; যা আমাদের আবেগকে রক্ষা করে। বারবার অপমান সহ্য করলে মানুষ ধরে নেয়, সেটা সহনীয়। তাই শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। বলা যেতে পারে, ‘আমার সঙ্গে এভাবে কথা বললে ভালো লাগে না। যখন শান্তভাবে আলোচনা করা যাবে, তখন বলুন।’ কাউকে নিয়ন্ত্রণ নয়, শুধু স্পষ্ট করে দেওয়া কীভাবে সম্পর্ক টিকবে।
অহংয়ের ফাঁদে না পড়া (ডিটাচমেন্ট ফ্রম ভ্যালিডেশন): আমরা অনেকেই ‘জেতার’ নেশায় পড়ি- অন্যকে ভুল প্রমাণ করেই যেন আত্মসম্মান ফিরে পাই। কিন্তু এটাই অহংয়ের ফাঁদ। নিজের মর্যাদা অন্যের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করে না। ছোটখাটো বিতর্কে না জড়িয়ে বরং নিজের শান্তি অক্ষুণ্ন রাখুন। কখনো কখনো চুপ থাকা যুদ্ধ জয়ের চেয়েও শক্তিশালী।
ঘটনাকে তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা (প্যাটার্ন রিকগনিশন)। মানব আচরণ সাধারণত পুনরাবৃত্তিমূলক। একবারের অসম্মান ভুল হতে পারে, কিন্তু বারবার হলে সেটি একটা প্যাটার্ন। আর এই প্যাটার্নগুলো নজরে রাখতে পারেন। অপমান নিয়ে ভাবনায় ডুবে না থেকে বরং মনে রাখা- এই ঘটনা এক ধরনের তথ্য। কেউ যদি বারবার অসম্মান করে, সেই অনুযায়ী সম্পর্কের ধরন বদলানো যেতে পারে। তা হলো যোগাযোগ কমানো, নির্ভরশীলতা হ্রাস বা সম্পূর্ণ দূরত্ব তৈরি করা। এটা প্রতিশোধ নয়, আত্মরক্ষা।
নিজের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা (সেলফ মাস্টারি): সবশেষে সবচেয়ে কঠিন কাজটি- নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। মানে আবেগ নয়, মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কেউ হয়তো আপনার রাগ দেখার অপেক্ষায়। অথচ আপনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন। কখনো আবার কিছু না বলাটাই সেরা উত্তর। মর্যাদা ধরে রাখা মানে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। কথাগুলো ভুলে যাওয়া যায়।, কিন্তু মানুষ মনে রাখে- আপনি কেমনভাবে নিজেকে ধারণ করেছিলেন।
সময় ও স্থান বুঝে প্রতিক্রিয়া দেওয়া (সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস): মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে পরিস্থিতি সচেতনতা। জনসমক্ষে অপমানের প্রতিক্রিয়া আর একান্ত আলাপের প্রতিক্রিয়া এক নয়। একান্তে হলে সরাসরি বিষয়টা তুলে ধরা যায়। কিন্তু অন্যদের সামনে হলে সংক্ষিপ্ত, ভদ্র ও কৌশলগত প্রতিক্রিয়া দেওয়া যেতে পারে—পরে ব্যক্তিগতভাবে বিস্তারিত কথা বলে নেওয়া। কিছু মানুষ কেবল নাটক চায়—তাদের সেই আনন্দটা না দেওয়াই সেরা প্রতিক্রিয়া।
সব মিলিয়ে অসম্মানের মুখে পড়লে নীরবে তা সহ্য না করা। আবার এর মানে প্রতিশোধ নেওয়া নয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের কাছ থেকেও শ্রদ্ধা আদায় করে নেয়। শেষ পর্যন্ত অসম্মান কখনো কখনো হয়ে ওঠে এক ধরনের ছদ্মবেশী উপহার। এটা দেখিয়ে দেয়, কে আসলে কেমন মানুষ। আপনাকে দেয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অনুশীলনের সুযোগ। আর মনে করিয়ে দেয়- আপনার মূল্য কখনোই অন্যের আচরণ দ্বারা নির্ধারিত হয় না।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

























