ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বায়ুদূষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

  • আপডেট সময় : ১১:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

বাড়ির বাইরে পা রাখতেই দূষণের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শরীর বিভিন্ন জটিল রোগ এবং অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। অস্বাভাবিক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, লিভার-কিডনির রোগ, এমনকি ক্যানসারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে। বাতাসে কার্বন ও সালফারের দূষণে ক্ষতি হয় ত্বক ও চোখেরও। বায়ুদূষণের কারণে সাধারণ সর্দি, কাশি, হাঁচি আপনাকে গুরুতরভাবে অসুস্থ করতে পারে এবং হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেনে নিন বায়ুদূষণের ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়-
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ধূলার অ্যালার্জি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে। বাইরে গেলে মাস্ক পরুন। বাড়ি ফেরার পর সর্বদা মেডিকেটেড সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে আপনার হাত ধুয়ে নিন। এছাড়াও, ময়লা এবং দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি হট শাওয়ার নিন।
এয়ার ফিল্টার কিনুন : ইন্ডোর এয়ার ফিল্টার বায়ু দূষণের সঙ্গে মোকাবিলা করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি। এই পিউরিফায়ারগুলো কেবল ক্ষতিকারক দূষিত বায়ু এবং অ্যালার্জেনগুলো আটকায় না বরং সামগ্রিক বায়ুর গুণমানকে উন্নত করে। কিছু এয়ার ফিল্টার সুন্দর সুগন্ধযুক্ত হয় যা আপনাকে ফ্রেশ বাতাস নিতে সাহায্য করে। এইচইপিএ ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ারগুলো সবচেয়ে কার্যকর বলে পরিচিত।
জানালা বন্ধ রাখুন : যেহেতু জানালা দিয়েই মূলত ধুলো এবং দূষিত বাতাস ঘরে আসে, তাই জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। এই দূষিত বাতাস আপনার নাকে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট এবং ক্রমাগত হাঁচির সমস্যা হতে পারে। আপনার বাথরুমের একটি জানলা খোলা রাখুন যাতে ঘরে ভালভাবে বাতাস যাতায়াত করে। আদ্রতা রুখতে বাথরুমের ভেন্টিলেশন খোলা রাখুন।
বিছানার চাদর এবং বালিশ ধোয়া : ধূলা এবং ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই আপনার বিছানার চাদর এবং বালিশের সাথে লেগে থাকে, যা অদৃশ্য হলেও অ্যালার্জির আউটবার্স্ট হতে পারে। প্রতি সপ্তাহে একবার অন্তত বিছানার সরঞ্জাম ধোবেন এবং গদিটিও ভ্যাকুয়াম করুন। আরেকটি বিকল্প হল অ্যালার্জেন-প্রুফ বালিশের কভার, বিছানার চাদর এবং গদি কেনা।
অপরিহার্য তেল ব্যবহার করুন : আপনার ঘরকে মিষ্টি সুগন্ধে ভরে দেওয়ার পাশাপাশি, ল্যাভেন্ডার, গ্রীন টি, গোলাপজাতীয় তেলগুলি ঘরে রাখুন যাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং যেটা আপনাকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, চোখ লাল হওয়া এবং অন্যান্য বায়ু দূষণের প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়।
বায়ুদূষণে ত্বকের যতœ : বায়ুদূষণ থেকে ত্বক বাঁচাতে সান ব্লক ব্যবহার করুন। বেবি ওয়েল বা নারিকেল তেল তুলার বলে নিয়ে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন এবং পরে ঠা-া পানি ও ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লোমকূপ টানটান করতে এবং আর্দ্র রাখতে টোনার ব্যবহার করুন। হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে মুখে ফেইস মাস্ক ব্যবহার করুন। যেমন- ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেঁপের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। হলুদের মাস্ক ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে। আলুর তৈরি মাস্ক চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
শরীরের টক্সিন দূর করার জন্য যেসব পানীয় পান করবেন : একটি গ্লাসে পানির সঙ্গে আখের গুড় ও তেঁতুলের ক্বাথ মেশান। আখের গুড়ে দূষণ প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকে। তেঁতুলও প্রাকৃতির ভাবেই শরীরে অম্লের ভাগ বেশি রাখে। এই দুইয়ের মিশ্রণে যে পানীয় তৈরি হয় তা শরীরে টক্সিন সরায়। পানির মধ্যে কয়েকটা তুলসীপাতা, পিষে নেওয়া আদা ও দু’ চামচ আখের গুড় মেশান। এই মিশ্রণ খানিক ক্ষণ ফুটিয়ে দু’বেলা খালিপেটে গরম গরম খান। তুলসী প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক ক্ষমতার অধিকারী। গুড়ও দূষণ রুখতে ওস্তাদ। তাই এই পানীয় খুবই কার্যকর।
পানিতে একটা গোটা পাতিলেবু, এক চামচ মধু ও এক চিমটে লবণের মিশ্রণ শরীরের টক্সিন দূর করতে পারা পানীয়দের মধ্যে অন্যতম সেরা। সব ক’টি উপাদানের মধ্যেই অ্যান্টিটক্সিন থাকায় শরীরে প্রবেশ করা দূষণের সঙ্গে লড়তে সক্ষম। শ্বাসজনিত সমস্যা দূর করা তো বটেই সঙ্গে ব্রঙ্কাইটিসের কষ্টও অনেকটা লাঘব করে এই পানীয়। দুধের মধ্যে তুলসী পাতা ও হলুদ মিশিয়ে সেই পানীয় ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পান করুন। হলুদ প্রাকৃতিকগতভাবেই অ্যান্টিসেপ্টিক, তুলসী পাতার মধ্যেও জীবাণু রোধের ক্ষমতা আছে। শরীরের টক্সিন দূর করার পাশাপাশি এই পানীয় শ্বাসনালীর পথ পরিষ্কার করে শ্বাসপ্রশ্বাসের পথকে বাধাহীন করে তোলে। এছাড়া দূষণজনিত ফুসফুসের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খান। ভিটামিন সির কার্যকারিতা ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। প্রতিদিন একটু হলেও লেবু, আমলকী, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, কাঁচামরিচ, জলপাই, টমেটো, কমলালেবু ইত্যাদি খান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বায়ুদূষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

আপডেট সময় : ১১:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

বাড়ির বাইরে পা রাখতেই দূষণের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শরীর বিভিন্ন জটিল রোগ এবং অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। অস্বাভাবিক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, লিভার-কিডনির রোগ, এমনকি ক্যানসারের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে। বাতাসে কার্বন ও সালফারের দূষণে ক্ষতি হয় ত্বক ও চোখেরও। বায়ুদূষণের কারণে সাধারণ সর্দি, কাশি, হাঁচি আপনাকে গুরুতরভাবে অসুস্থ করতে পারে এবং হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসের কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেনে নিন বায়ুদূষণের ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়-
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ধূলার অ্যালার্জি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে। বাইরে গেলে মাস্ক পরুন। বাড়ি ফেরার পর সর্বদা মেডিকেটেড সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে আপনার হাত ধুয়ে নিন। এছাড়াও, ময়লা এবং দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি হট শাওয়ার নিন।
এয়ার ফিল্টার কিনুন : ইন্ডোর এয়ার ফিল্টার বায়ু দূষণের সঙ্গে মোকাবিলা করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি। এই পিউরিফায়ারগুলো কেবল ক্ষতিকারক দূষিত বায়ু এবং অ্যালার্জেনগুলো আটকায় না বরং সামগ্রিক বায়ুর গুণমানকে উন্নত করে। কিছু এয়ার ফিল্টার সুন্দর সুগন্ধযুক্ত হয় যা আপনাকে ফ্রেশ বাতাস নিতে সাহায্য করে। এইচইপিএ ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ারগুলো সবচেয়ে কার্যকর বলে পরিচিত।
জানালা বন্ধ রাখুন : যেহেতু জানালা দিয়েই মূলত ধুলো এবং দূষিত বাতাস ঘরে আসে, তাই জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। এই দূষিত বাতাস আপনার নাকে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট এবং ক্রমাগত হাঁচির সমস্যা হতে পারে। আপনার বাথরুমের একটি জানলা খোলা রাখুন যাতে ঘরে ভালভাবে বাতাস যাতায়াত করে। আদ্রতা রুখতে বাথরুমের ভেন্টিলেশন খোলা রাখুন।
বিছানার চাদর এবং বালিশ ধোয়া : ধূলা এবং ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই আপনার বিছানার চাদর এবং বালিশের সাথে লেগে থাকে, যা অদৃশ্য হলেও অ্যালার্জির আউটবার্স্ট হতে পারে। প্রতি সপ্তাহে একবার অন্তত বিছানার সরঞ্জাম ধোবেন এবং গদিটিও ভ্যাকুয়াম করুন। আরেকটি বিকল্প হল অ্যালার্জেন-প্রুফ বালিশের কভার, বিছানার চাদর এবং গদি কেনা।
অপরিহার্য তেল ব্যবহার করুন : আপনার ঘরকে মিষ্টি সুগন্ধে ভরে দেওয়ার পাশাপাশি, ল্যাভেন্ডার, গ্রীন টি, গোলাপজাতীয় তেলগুলি ঘরে রাখুন যাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং যেটা আপনাকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, চোখ লাল হওয়া এবং অন্যান্য বায়ু দূষণের প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়।
বায়ুদূষণে ত্বকের যতœ : বায়ুদূষণ থেকে ত্বক বাঁচাতে সান ব্লক ব্যবহার করুন। বেবি ওয়েল বা নারিকেল তেল তুলার বলে নিয়ে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন এবং পরে ঠা-া পানি ও ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লোমকূপ টানটান করতে এবং আর্দ্র রাখতে টোনার ব্যবহার করুন। হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে মুখে ফেইস মাস্ক ব্যবহার করুন। যেমন- ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেঁপের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। হলুদের মাস্ক ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে। আলুর তৈরি মাস্ক চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
শরীরের টক্সিন দূর করার জন্য যেসব পানীয় পান করবেন : একটি গ্লাসে পানির সঙ্গে আখের গুড় ও তেঁতুলের ক্বাথ মেশান। আখের গুড়ে দূষণ প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকে। তেঁতুলও প্রাকৃতির ভাবেই শরীরে অম্লের ভাগ বেশি রাখে। এই দুইয়ের মিশ্রণে যে পানীয় তৈরি হয় তা শরীরে টক্সিন সরায়। পানির মধ্যে কয়েকটা তুলসীপাতা, পিষে নেওয়া আদা ও দু’ চামচ আখের গুড় মেশান। এই মিশ্রণ খানিক ক্ষণ ফুটিয়ে দু’বেলা খালিপেটে গরম গরম খান। তুলসী প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক ক্ষমতার অধিকারী। গুড়ও দূষণ রুখতে ওস্তাদ। তাই এই পানীয় খুবই কার্যকর।
পানিতে একটা গোটা পাতিলেবু, এক চামচ মধু ও এক চিমটে লবণের মিশ্রণ শরীরের টক্সিন দূর করতে পারা পানীয়দের মধ্যে অন্যতম সেরা। সব ক’টি উপাদানের মধ্যেই অ্যান্টিটক্সিন থাকায় শরীরে প্রবেশ করা দূষণের সঙ্গে লড়তে সক্ষম। শ্বাসজনিত সমস্যা দূর করা তো বটেই সঙ্গে ব্রঙ্কাইটিসের কষ্টও অনেকটা লাঘব করে এই পানীয়। দুধের মধ্যে তুলসী পাতা ও হলুদ মিশিয়ে সেই পানীয় ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পান করুন। হলুদ প্রাকৃতিকগতভাবেই অ্যান্টিসেপ্টিক, তুলসী পাতার মধ্যেও জীবাণু রোধের ক্ষমতা আছে। শরীরের টক্সিন দূর করার পাশাপাশি এই পানীয় শ্বাসনালীর পথ পরিষ্কার করে শ্বাসপ্রশ্বাসের পথকে বাধাহীন করে তোলে। এছাড়া দূষণজনিত ফুসফুসের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খান। ভিটামিন সির কার্যকারিতা ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। প্রতিদিন একটু হলেও লেবু, আমলকী, আনারস, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, কাঁচামরিচ, জলপাই, টমেটো, কমলালেবু ইত্যাদি খান।