ঢাকা ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
বিশ্ব বাবা দিবস আজ

বাবা শাশ্বত, চির আপন

  • আপডেট সময় : ০৫:১৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি - এস কে সানা

  • সুখদেব কুমার সানা

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। সন্তানের জীবনে বাবার অবদানকে সম্মান জানাতে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালন করা হয়। সকল সন্তানের কাছে নির্ভরতার অন্যতম প্রতীক হচ্ছেন বাবা। সন্তানের কাছে শ্রদ্ধেয় এক গভীর অনুভূতির শব্দ বাবা। নিখাদ ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘বাবা’ শব্দটি। বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। নিঃশর্ত ভালোবাসা, দায়িত্ব আর ত্যাগের প্রতীক সেই মানুষটির প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন আজ। যিনি পরিবারকে ছায়ার মতো আগলে রাখেন, কিন্তু থাকেন অনেকটা নীরব নেপথ্যে তিনিই বাবা।

সব বাবাই তাদের সন্তানের কাছে বটবৃক্ষসম। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের জীবনকে উন্নত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তারা। তাই কয়েকটি শব্দ-বাক্যে বাবাদের সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। বলা চলে-নিখাদ ভালবাসা এবং স্নেহের সঠিক সংজ্ঞা বাবা।

বিশ্ব বাবা দিবসের ইতিহাস: প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন। ১৯১০ সালে এই দিনটির সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক নারী তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমবারের মতো ‘ফাদার্স ডে’ উদযাপন করেন। তারই পথ ধরে এটি এখন বিশ্বের বহু দেশে পালিত একটি বিশেষ দিবসে রূপ নিয়েছে। বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এই নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনো বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডোড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে, কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে ভীষণ অবাক হন ডোড। এক পর্যায়ে তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি।
বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে শব্দ বদলায়; স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও।
তবে বদলায় না রক্তের টান।
বস্তুত, বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই।

জানা যায়, ডোড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডোড অনুভব করেন-মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার। তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে শুরু করেন ডোড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।

বাবা দিবস সম্পর্কে এর আগের আরো একটি ঘটনা জানা যায়, ১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহয় কয়লাখনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। এর ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।

১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতি বছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। এর আগে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন জুনের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। তবে ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে এই দিবস পালনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসের সম্মতি দেন।

বাবা শাশ্বত, চির আপন: অনেকে মনে করেন শুধু একদিন কেন, প্রতিদিন হয়ে উঠুক ফাদার্স ডে (বাবা দিবস)। তবে বর্তমান কর্মব্যস্ত সময়ে, বাবাদের জন্য প্রতিটি দিন বিশেষ করে তোলা অসম্ভব। তাই একটা দিন যদি তাঁরা একটু ‘বিশেষ অনুভব’ করেন, সেটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাবা দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে বাবাদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা এবং নানা আয়োজন করে থাকে।

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে শব্দ বদলায়; স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও। তবে বদলায় না রক্তের টান। বস্তুত, বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্ব বাবা দিবস আজ

বাবা শাশ্বত, চির আপন

আপডেট সময় : ০৫:১৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • সুখদেব কুমার সানা

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। সন্তানের জীবনে বাবার অবদানকে সম্মান জানাতে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালন করা হয়। সকল সন্তানের কাছে নির্ভরতার অন্যতম প্রতীক হচ্ছেন বাবা। সন্তানের কাছে শ্রদ্ধেয় এক গভীর অনুভূতির শব্দ বাবা। নিখাদ ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘বাবা’ শব্দটি। বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। নিঃশর্ত ভালোবাসা, দায়িত্ব আর ত্যাগের প্রতীক সেই মানুষটির প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন আজ। যিনি পরিবারকে ছায়ার মতো আগলে রাখেন, কিন্তু থাকেন অনেকটা নীরব নেপথ্যে তিনিই বাবা।

সব বাবাই তাদের সন্তানের কাছে বটবৃক্ষসম। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের জীবনকে উন্নত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তারা। তাই কয়েকটি শব্দ-বাক্যে বাবাদের সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। বলা চলে-নিখাদ ভালবাসা এবং স্নেহের সঠিক সংজ্ঞা বাবা।

বিশ্ব বাবা দিবসের ইতিহাস: প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন। ১৯১০ সালে এই দিনটির সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক নারী তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমবারের মতো ‘ফাদার্স ডে’ উদযাপন করেন। তারই পথ ধরে এটি এখন বিশ্বের বহু দেশে পালিত একটি বিশেষ দিবসে রূপ নিয়েছে। বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এই নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনো বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডোড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে, কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে ভীষণ অবাক হন ডোড। এক পর্যায়ে তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি।
বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে শব্দ বদলায়; স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও।
তবে বদলায় না রক্তের টান।
বস্তুত, বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই।

জানা যায়, ডোড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডোড অনুভব করেন-মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার। তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে শুরু করেন ডোড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।

বাবা দিবস সম্পর্কে এর আগের আরো একটি ঘটনা জানা যায়, ১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহয় কয়লাখনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। এর ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।

১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতি বছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। এর আগে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন জুনের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। তবে ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস। ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে এই দিবস পালনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসের সম্মতি দেন।

বাবা শাশ্বত, চির আপন: অনেকে মনে করেন শুধু একদিন কেন, প্রতিদিন হয়ে উঠুক ফাদার্স ডে (বাবা দিবস)। তবে বর্তমান কর্মব্যস্ত সময়ে, বাবাদের জন্য প্রতিটি দিন বিশেষ করে তোলা অসম্ভব। তাই একটা দিন যদি তাঁরা একটু ‘বিশেষ অনুভব’ করেন, সেটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাবা দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে বাবাদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা এবং নানা আয়োজন করে থাকে।

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে শব্দ বদলায়; স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও। তবে বদলায় না রক্তের টান। বস্তুত, বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই।