মোঃ মাহবুবুর রহমান
সবার অনুরোধে আবার লিখব সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু পারছি না। কারণ, সহজ করে লেখা কঠিন। অথচ আমি চাই-সবাই যেনো আমার লেখা পড়ে বুঝতে পারেন। সহজ করে বলতে পারি; লিখতে গেলে কঠিন হয়ে যায়। তাই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি-সহজ করে লিখবোই। যুদ্ধ, শান্তি, ধর্ম-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। আজ আরাগাকি সুতোমু সম্পর্কে লিখতে চাই।
“আমি আমার বাবা এবং মাকে ঘৃণা করি, ঘৃণা করি, ঘৃণা করি। কেনো আমার দাদী মারা গেলো? আমিও মরতে চাই”-চৌদ্দ বছরের একটি ছেলে ওকিনাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল। নীল আকাশে সূর্য ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু ছেলেটি তা দেখতে পায়নি। দিন-রাত, আলো-আঁধার, সাদা-কালো এসবের পার্থক্য সে জানে না। কাক আর পায়রা কোনটা দেখতে সুন্দর-সে বোঝে না। কারণ সে ছিল জন্ম থেকে অন্ধ।
ছেলেটির জন্ম ১৯৫২ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া দ্বীপ আমেরিকার দখলে থাকা ওকিনাওয়ায়। তার বাবা ছিলেন মেক্সিকান-আমেরিকান এবং মা জাপানি। তার ছোটবেলায় বাবা-মা দুজনেই বাড়ি ছেড়েছিলেন। তাই দাদী তাকে দেখাশোনা করতেন। ছেলেটির নাম আরাগাকি সুতোমু। তিনি গান খুব পছন্দ করতেন। একদিন তিনি রেডিওতে কিছু স্তোত্র শুনলেন। সেই গানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি আরও কিছু স্তোত্র শুনতে চেয়েছিলেন; এবং সেই লক্ষ্যে তিনি একটি গির্জায় গেলেন।
গির্জায় তিনি পাস্তরের সাথে দেখা করেন। সুতোমু তাকে তার জীবনের কথা বললেন। পাস্তর নীরবে তার কথা শুনলেন। সুতোমু কথা বলা বন্ধ করলে নিজেই বুঝতে পারেন পাস্তর কাঁদছেন। “ওহ, তিনি আমাকে বোঝেন,”-সুতোমু ভাবলেন।
পাস্তর বললেন- “সুতোমু, তুমি কি আমাদের কাছে এসে থাকতে চাও? আমার স্ত্রী-সন্তান খুশি হবে।” সুতোমু বললেন, হ্যাঁ। সুতোমু পাস্তরের পরিবারের সদস্য হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। সুতোমুও পাস্তর হতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি কলেজে গিয়ে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেন। গানও শিখেছিলেন এবং তিনি গির্জায় গান পরিবেশন করতে থাকেন। পিতামাতার প্রতি তার ঘৃণা ম্লান হতে থাকে। তিনি অন্য অসহায় মানুষকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।
সুতোমুর ইতালীয় ভোকাল প্রশিক্ষক একবার তাকে বলেছিলেন, “আপনার কণ্ঠ ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটি উপহার; এবং আপনার বাবা-মা-এর কাছ থেকেও। পৃথিবীতে আপনিই একমাত্র এমন একটি কণ্ঠস্বর।”
সুতোমু এখন তার গানে গর্বিত। তার নীতিবাক্য হলো, “Try to be the only one, not just number one.” আপনি যদি তার Sugarcane Fields গানটি শুনতে পারেন, তবে তাঁর সুন্দর কণ্ঠের মাধ্যমে ওকিনাওয়ার উজ্জ্বলতা এবং দুঃখ অনুভব করতে পারবেন।
লেখক : জাপানে বসবাসরত আইনজীবী। সাবেক ম্যাগাজিন সম্পাদক, রাকসু।
বাবা-মাকে ঘৃণা নয়
                                 ট্যাগস :  
                                                            
							
                            
                                      জনপ্রিয় সংবাদ                                
                                 
																			 
										













