ঢাকা ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

বাবার কবরে চিরশয়ানে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

  • আপডেট সময় : ০১:০২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষার দ্বীপ জ্বেলে যাওয়ার পাশাপাশি সংগ্রামের পথেও নামতেও যিনি কুণ্ঠিত থাকেননি, সেই অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেষ শয্যা নিলেন আজিমপুর কবরস্থানে। শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে গতকাল বুধবার বিকালে আজিমপুরে নতুন কবরস্থানে বাবার কবরে শায়িত করা হল তাকে। তার বাবা রেলওয়ের চিকিৎসক জুলফিকার আলি ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যাওয়ার পর তাকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষণ ইসলাম তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, শুক্রবার উত্তরা ১০ সেক্টর ৫ রোডের ৪৪ নম্বর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত বাংলাদেশের পথ পরিক্রমার অগ্নিসাক্ষী রফিকুল ইসলাম ৮৭ বছর বয়সে মঙ্গলবার মারা যান। প্রথমেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পক্ষে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। শহীদ মিনারে এক ঘণ্টা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রফিকুল ইসলামের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে জানাজায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সংসদ সদস্যআসাদুজ্জামান নূরও উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক।
১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে রফিকুল ইসলামের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে উচ্চশিক্ষা নেন।
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়া রফিকুল ইসলাম সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্র ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হাতে হয়েছেন নির্যাতিত। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেইসব ইতিহাস গ্রন্থিত করে গেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তার হাত দিয়েই পেয়েছে বাংলাদেশ। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসেরও উপাচার্য ছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করে নেয়। এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা রফিকুল ইসলামকে গত ১৮ মে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় এ বছর তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত করা হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

বাবার কবরে চিরশয়ানে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

আপডেট সময় : ০১:০২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষার দ্বীপ জ্বেলে যাওয়ার পাশাপাশি সংগ্রামের পথেও নামতেও যিনি কুণ্ঠিত থাকেননি, সেই অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেষ শয্যা নিলেন আজিমপুর কবরস্থানে। শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে গতকাল বুধবার বিকালে আজিমপুরে নতুন কবরস্থানে বাবার কবরে শায়িত করা হল তাকে। তার বাবা রেলওয়ের চিকিৎসক জুলফিকার আলি ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যাওয়ার পর তাকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষণ ইসলাম তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, শুক্রবার উত্তরা ১০ সেক্টর ৫ রোডের ৪৪ নম্বর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত বাংলাদেশের পথ পরিক্রমার অগ্নিসাক্ষী রফিকুল ইসলাম ৮৭ বছর বয়সে মঙ্গলবার মারা যান। প্রথমেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পক্ষে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম। শহীদ মিনারে এক ঘণ্টা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রফিকুল ইসলামের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে জানাজায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সংসদ সদস্যআসাদুজ্জামান নূরও উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক।
১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে রফিকুল ইসলামের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্বে উচ্চশিক্ষা নেন।
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়া রফিকুল ইসলাম সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্র ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হাতে হয়েছেন নির্যাতিত। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেইসব ইতিহাস গ্রন্থিত করে গেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তার হাত দিয়েই পেয়েছে বাংলাদেশ। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসেরও উপাচার্য ছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করে নেয়। এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা রফিকুল ইসলামকে গত ১৮ মে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় এ বছর তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকে ভূষিত করা হয়।