ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

বাণিজ্য সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন

  • আপডেট সময় : ০১:৩৮:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা চলমান রাখতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সংস্কার ও যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। করোনা মহামারি পরিস্থিতি ও এলডিসি-উত্তর সময়ের জন্য সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরি। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র প্রধান ড. নাজনীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ এমএস সিদ্দিকী, রাশেদ মাকসুদ খান, ডিসিসিআইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি খাত একযোগে নিরলসভাবে কাজ করছে। অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের জনগণের সার্বিক উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। কর-শুল্কসহ অন্যান্য নীতিতে সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণে দেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সরকার। জনগণকে মহামারি থেকে সুরক্ষা দিতে টিকাদান কার্যক্রম গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে বলেও জানান তিনি। সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত অনুকরণীয় ভূমিকা পালন করেছে। জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধি ও পণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ যথাক্রমে নেপাল ও ভিয়েতনাম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনে মতামত দেন তিনি। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের ফলেই আমাদের অর্থনীতি আজ এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তবে বিনিয়োগকারী ও উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনার পাশাপাশি ভোক্তাদের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়। তিনি বলেন, টেকসই ম্যাক্রো অর্থনীতি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনা মহামারি সত্ত্বেও আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েনি, যদিও কিছুটা স্থবিরতা দেখা গেছে। রফতানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ, আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোর দিতে হবে। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও তাদের মতো নীতিমালার পাশাপাশি প্রণোদনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতে আপডেটেড তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে নীতিমালা প্রণয়নে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে লকডাউন আরোপের ফলে সমাজের অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় চলে আসতে পারে, সেটা মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে ব্যাপারে আরও যতœবান হওয়া জরুরি বলে মতামত দেন তিনি। বিনায়েক সেন বলেন, কৃষিখাত, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিগত বছরের চেয়ে ভালো করেছে। তবে এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো ও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা প্রভৃতি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ আমাদের রফতানির জন্য একটি বড় হুমকি। তবে অতীতে অন্যান্য দেশ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, রফতানি বহুমুখীকরণ, এফটিএ এবং অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করেছে। এজন্য সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য তৈরি পোশাক পণ্য উৎপাদন করলেও নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশেষ করে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অগ্রগতি ও ইমেজ বৃদ্ধি করতে পারেনি। এক্ষেত্রে নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সম্প্রসারণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত দেন। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতি ও এলডিসি গ্রাজুয়েশন মোকাবিলায় আগামী দুই-চার বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমাদেরকে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের আরও বেশি করে ঋণ সহায়তার বিষয়ে নজর দিতে হবে। ড. নাজনীন বলেন, দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে অধিক মাত্রায় বৈষম্য রয়েছে এবং এ খাতে গ্রামীণ পর্যায়ের জনগণ ও উদ্যোক্তাদেরকে সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো আবশ্যক। তিনি উল্লেখ করেন, এলডিসি-উত্তর সময়ের জন্য নেগোসিয়েশন সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট ও গ্রিন ইনিশিয়েটিভের ওপর প্রাধান্য দিতে সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাণিজ্য সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন

আপডেট সময় : ০১:৩৮:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা চলমান রাখতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সংস্কার ও যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। করোনা মহামারি পরিস্থিতি ও এলডিসি-উত্তর সময়ের জন্য সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরি। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র প্রধান ড. নাজনীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ এমএস সিদ্দিকী, রাশেদ মাকসুদ খান, ডিসিসিআইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি খাত একযোগে নিরলসভাবে কাজ করছে। অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের জনগণের সার্বিক উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। কর-শুল্কসহ অন্যান্য নীতিতে সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণে দেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সরকার। জনগণকে মহামারি থেকে সুরক্ষা দিতে টিকাদান কার্যক্রম গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে বলেও জানান তিনি। সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত অনুকরণীয় ভূমিকা পালন করেছে। জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধি ও পণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ যথাক্রমে নেপাল ও ভিয়েতনাম থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনে মতামত দেন তিনি। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের ফলেই আমাদের অর্থনীতি আজ এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তবে বিনিয়োগকারী ও উৎপাদনকারীদের স্বার্থ বিবেচনার পাশাপাশি ভোক্তাদের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়। তিনি বলেন, টেকসই ম্যাক্রো অর্থনীতি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনা মহামারি সত্ত্বেও আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েনি, যদিও কিছুটা স্থবিরতা দেখা গেছে। রফতানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ, আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোর দিতে হবে। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও তাদের মতো নীতিমালার পাশাপাশি প্রণোদনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতে আপডেটেড তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে নীতিমালা প্রণয়নে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে লকডাউন আরোপের ফলে সমাজের অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় চলে আসতে পারে, সেটা মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে ব্যাপারে আরও যতœবান হওয়া জরুরি বলে মতামত দেন তিনি। বিনায়েক সেন বলেন, কৃষিখাত, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিগত বছরের চেয়ে ভালো করেছে। তবে এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো ও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা প্রভৃতি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ আমাদের রফতানির জন্য একটি বড় হুমকি। তবে অতীতে অন্যান্য দেশ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, রফতানি বহুমুখীকরণ, এফটিএ এবং অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করেছে। এজন্য সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য তৈরি পোশাক পণ্য উৎপাদন করলেও নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বিশেষ করে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অগ্রগতি ও ইমেজ বৃদ্ধি করতে পারেনি। এক্ষেত্রে নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সম্প্রসারণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত দেন। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতি ও এলডিসি গ্রাজুয়েশন মোকাবিলায় আগামী দুই-চার বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমাদেরকে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের আরও বেশি করে ঋণ সহায়তার বিষয়ে নজর দিতে হবে। ড. নাজনীন বলেন, দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে অধিক মাত্রায় বৈষম্য রয়েছে এবং এ খাতে গ্রামীণ পর্যায়ের জনগণ ও উদ্যোক্তাদেরকে সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো আবশ্যক। তিনি উল্লেখ করেন, এলডিসি-উত্তর সময়ের জন্য নেগোসিয়েশন সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট ও গ্রিন ইনিশিয়েটিভের ওপর প্রাধান্য দিতে সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।