ঢাকা ১০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

বাড়ন্ত শিশুর দুরন্ত জীবন

  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা : শিশুর যে ভুবন ভুলানো হাসিতে আপনার হৃদয়ে শান্তির স্রোত বয়ে যায়,সত্যি কথা হলো, দেড়মাস বয়স পর্যন্ত কাউকে ঠিকঠাক না চিনেই সে এই মিষ্টি হাসিটা উপহার দেয় । অনেকটা স্বল্প পরিচিতজনদের দেখে আমরা যে সামাজিক হাসি (ংড়পরধষ ংসরষব) দেই সেরকম।
দেড় মাস থেকে সে পৃথিবীতে প্রথম চেনে মাকে। মা যদি এসময় তার সঙ্গে একটু একটু করে পরিবারের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে না দেন তাহলে সে মা ছাড়া আর কাউকে চিনবে না। তখন ‘আমার বাচ্চা আমি ছাড়া কারো কাছে যায় না’- এই লাইনটি হয় একি সঙ্গে তার ভালোলাগার এবং যন্ত্রণার বিষয়।
মাত্র ৬-৮মাসে সে কোনো জিনিস হাতের তালু দিয়ে ধরতে শেখে (ঢ়ধষসধৎ মৎধংঢ়)। জীবনে প্রথম এই সক্ষমতা অর্জনের উত্তেজনায় হাতের কাছে যা পায় সে তাই মুখে দিয়ে লালা ফেলে একাকার করে স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করে। আপনি জানেন, তার এই কর্মকা-ের শেষ ফলাফল রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। আপনি বোঝাবেন, বকবেন, নিষেধ করবেন- কিন্তু কাজ কিছুই হবে না। কারণ তখনও সে ‘না’ বিষয়টি বোঝেনি। একজন শিশু ‘না’ বললে সেটা অনুধাবন করতে পারে মাত্র ৯-১০মাস বয়সে। ভাবেন কত ছোটবেলায় আমরা ‘না’ বুঝে যাই। ‘না’ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে এই সময় শেখানো হলে সে টা-টা বলতে পারে। রাস্তাঘাটে যেসব শিশুকে আপনি টা-টা বলতে শুনবেন তারা সবাই নয় থেকে দশ মাস বয়সী (কম বেশি)। বারো মাস বা ১ বছরে সে সোজা হয়ে দাঁড়ায় এবং টলটল পায়ে হাঁটতে শুরু করে। এ সময় পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। বড়সড় দুর্ঘটনা না ঘটলে তাকে নিজে নিজে উঠতে দিন। এটা তার স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম ধাপ। এ সময় তার নাম ধরে ডাকলে সে সাড়া দেয়। তাই অবশ্যই এক বছরের মধ্যে নাম ঠিক করবেন এবং সেই সঙ্গে পরিবারের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা আদরের নামে না ডেকে মোটামুটি আলোচনা করে একটা দুইটা নামে রাখলে ভালো হয়। কনফিউজড কম হবে। ৯ থেকে ১০ মাসে হাতের মুঠোর মধ্যে রাখা খেলনা অন্যকে দেওয়ার যে ক্ষমতা অর্জন করে এক বছরে এসে সে খেলনা হাত থেকে ছোড়ার চেষ্টা করে। একদম যা পাবে তাই ছুড়বে। কোথায় পড়ল দেখবে। এটা তার খেলা! এজন্য জানালা থেকে দূরে!!
এক বছর থেকে একা একা কাপ ধরে পানি খেতে পারে। পানি পড়ে যেতে পারে তবুও তাকে উৎসাহিত করুন। ১৮-২০মাসের মধ্যে চামচ ধরে খাওয়ার চেষ্টা শুরু করতে পারে। তাই দুই বছর পরেও যদি আপনার বাচ্চা নিজের হাতে খেতে না পারে তাহলে সেই দোষটা (!) শুধুই তার নয়। আপনার ট্রেনিংয়েরও। ১৫-১৮ মাসে একা একা হেঁটে সে আপনার কাছে এসে বলতে পারে এটা দাও। না দিলে একটু জেদ দেখাতে পারে। তাকে দুষ্টু ভাবার কারণ নেই। এটি তার বয়সের স্বভাব। আবেগপ্রবণ এই সময় তার সৃজনশীলতার শুরু। এই সময়ে কলম ও কাগজ পেলে কিছুই আস্তো থাকে না! আয়নায়, দেয়ালে দেয়ালে আঁচড় সাক্ষী হয়ে থাকে তার সৃজনশীল সূচনার…
এগুলো সব যে সব সময়মতো হবে তা না। তবে ..
৩মাসে ংড়পরধষ ংসরষব না আসলে ৫ মাসে ঘাড় শক্ত না হলে ১ বছরের মধ্যে বসতে না পারলে, ২ বছরে একা একা হাঁটতে না পারলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশুর জন্য সময় রাখুন। ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে পরবর্তী বেড়ে ওঠায় কর্মজীবী মায়েদের আরও একটু সহযোগিতা করুন পরিবারের অন্যরা। হাসিখুশি আর যতেœ থাকুক আমাদের শিশু…
লেখক: ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা, মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন কার্যালয়, খুলনা।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাড়ন্ত শিশুর দুরন্ত জীবন

আপডেট সময় : ০৯:১৮:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা : শিশুর যে ভুবন ভুলানো হাসিতে আপনার হৃদয়ে শান্তির স্রোত বয়ে যায়,সত্যি কথা হলো, দেড়মাস বয়স পর্যন্ত কাউকে ঠিকঠাক না চিনেই সে এই মিষ্টি হাসিটা উপহার দেয় । অনেকটা স্বল্প পরিচিতজনদের দেখে আমরা যে সামাজিক হাসি (ংড়পরধষ ংসরষব) দেই সেরকম।
দেড় মাস থেকে সে পৃথিবীতে প্রথম চেনে মাকে। মা যদি এসময় তার সঙ্গে একটু একটু করে পরিবারের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে না দেন তাহলে সে মা ছাড়া আর কাউকে চিনবে না। তখন ‘আমার বাচ্চা আমি ছাড়া কারো কাছে যায় না’- এই লাইনটি হয় একি সঙ্গে তার ভালোলাগার এবং যন্ত্রণার বিষয়।
মাত্র ৬-৮মাসে সে কোনো জিনিস হাতের তালু দিয়ে ধরতে শেখে (ঢ়ধষসধৎ মৎধংঢ়)। জীবনে প্রথম এই সক্ষমতা অর্জনের উত্তেজনায় হাতের কাছে যা পায় সে তাই মুখে দিয়ে লালা ফেলে একাকার করে স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করে। আপনি জানেন, তার এই কর্মকা-ের শেষ ফলাফল রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। আপনি বোঝাবেন, বকবেন, নিষেধ করবেন- কিন্তু কাজ কিছুই হবে না। কারণ তখনও সে ‘না’ বিষয়টি বোঝেনি। একজন শিশু ‘না’ বললে সেটা অনুধাবন করতে পারে মাত্র ৯-১০মাস বয়সে। ভাবেন কত ছোটবেলায় আমরা ‘না’ বুঝে যাই। ‘না’ বোঝার সঙ্গে সঙ্গে এই সময় শেখানো হলে সে টা-টা বলতে পারে। রাস্তাঘাটে যেসব শিশুকে আপনি টা-টা বলতে শুনবেন তারা সবাই নয় থেকে দশ মাস বয়সী (কম বেশি)। বারো মাস বা ১ বছরে সে সোজা হয়ে দাঁড়ায় এবং টলটল পায়ে হাঁটতে শুরু করে। এ সময় পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। বড়সড় দুর্ঘটনা না ঘটলে তাকে নিজে নিজে উঠতে দিন। এটা তার স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম ধাপ। এ সময় তার নাম ধরে ডাকলে সে সাড়া দেয়। তাই অবশ্যই এক বছরের মধ্যে নাম ঠিক করবেন এবং সেই সঙ্গে পরিবারের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা আদরের নামে না ডেকে মোটামুটি আলোচনা করে একটা দুইটা নামে রাখলে ভালো হয়। কনফিউজড কম হবে। ৯ থেকে ১০ মাসে হাতের মুঠোর মধ্যে রাখা খেলনা অন্যকে দেওয়ার যে ক্ষমতা অর্জন করে এক বছরে এসে সে খেলনা হাত থেকে ছোড়ার চেষ্টা করে। একদম যা পাবে তাই ছুড়বে। কোথায় পড়ল দেখবে। এটা তার খেলা! এজন্য জানালা থেকে দূরে!!
এক বছর থেকে একা একা কাপ ধরে পানি খেতে পারে। পানি পড়ে যেতে পারে তবুও তাকে উৎসাহিত করুন। ১৮-২০মাসের মধ্যে চামচ ধরে খাওয়ার চেষ্টা শুরু করতে পারে। তাই দুই বছর পরেও যদি আপনার বাচ্চা নিজের হাতে খেতে না পারে তাহলে সেই দোষটা (!) শুধুই তার নয়। আপনার ট্রেনিংয়েরও। ১৫-১৮ মাসে একা একা হেঁটে সে আপনার কাছে এসে বলতে পারে এটা দাও। না দিলে একটু জেদ দেখাতে পারে। তাকে দুষ্টু ভাবার কারণ নেই। এটি তার বয়সের স্বভাব। আবেগপ্রবণ এই সময় তার সৃজনশীলতার শুরু। এই সময়ে কলম ও কাগজ পেলে কিছুই আস্তো থাকে না! আয়নায়, দেয়ালে দেয়ালে আঁচড় সাক্ষী হয়ে থাকে তার সৃজনশীল সূচনার…
এগুলো সব যে সব সময়মতো হবে তা না। তবে ..
৩মাসে ংড়পরধষ ংসরষব না আসলে ৫ মাসে ঘাড় শক্ত না হলে ১ বছরের মধ্যে বসতে না পারলে, ২ বছরে একা একা হাঁটতে না পারলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশুর জন্য সময় রাখুন। ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে পরবর্তী বেড়ে ওঠায় কর্মজীবী মায়েদের আরও একটু সহযোগিতা করুন পরিবারের অন্যরা। হাসিখুশি আর যতেœ থাকুক আমাদের শিশু…
লেখক: ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা, মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন কার্যালয়, খুলনা।