ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

বাড়তি চাপের আড়ালে মানুষ তুমি কেমন আছো?

  • আপডেট সময় : ১০:২১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

অজয় দাশগুপ্ত : গত কিছুদিন দেশের মিডিয়া ও জনমন দখল করে রেখেছিল বেশ কয়েকটা বিষয়। আপনার বা আপনাদের কি মনে হয় এই বিষয়গুলো রমজানের আগে বিতর্ক তোলার বা এভাবে চালু হবার কোনো দরকার ছিল? আমাদের সমাজের মূল সমস্যা বা চাওয়া এখন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। জানি না এটাও তারই একটা অংশ কিনা। ঘটনাগুলো কিংবা অঘটনের হোতারা হয়তো জেনে-বুঝে তা করেন না, কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে দেয়ার বা দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার মতো মানুষের তো অভাব নেই। অভাব নেই তেমন কর্তা বা প্রতিষ্ঠানেরও।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণই আছে চাপে। বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। উন্নত দেশগুলোর মানুষজনও ভয়াবহ চাপে আছে। যাদের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হয় না, বরং দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত, তাদের সমাজেও চলছে ভয়াবহ চাপ। সিডনিতে আমরা দেখছি সবকিছুর দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে বলে মানুষের নাভিশ্বাসও চরমে। আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন নিউ সাউথ ওয়েলস নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন হয়ে গেছে। বেরুচ্ছে ফলাফল। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত যে, দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা লিবারেল দল হারতে যাচ্ছে। সিডনির দায়িত্ব নেবে লেবার দল। কয়েক মাস আগে জাতীয় বা ফেডারেল নির্বাচনেও পালা বদল হয়েছে ক্ষমতার। লিবারেল গিয়ে লেবার জিতেছিল। এই যে আসা-যাওয়া এটাই গণতন্ত্র। এটাই নির্বাচন।

আমাদের দেশে নির্বাচন হয়, ভোট হয়, কিন্তু সবাই মানেন যে, গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। হয় না বলেই এখন আর ফলাফল নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সবাই জানেন কে জিতবে, কারা জিতবে। নিন্দুকদের মতে অগ্রহণযোগ্য ভোটের কারণে রাজনীতিবিমুখ হয়ে গেছে মানুষ। তারচেয়েও বড় কথা মানুষের কথা বলার মতো কেউ নেই কোথাও। খুব বেশিদিন আগের কথা না। আমাদের দেশের সংসদে এমন সব নেতা ছিলেন যাদের কথার বানে জর্জরিত হতো সরকারি দল। যাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেত সরকারি দলের নেতারা। তাদের মাথায় সবসময় জবাবদিহিতার চাপ থাকত। আজ ওই পরিবেশ নেই। কেউ প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন না। নির্বাচন বয়কট করা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্যরা মোটামুটি নিজেদের সরিয়েই নিয়েছে। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা, তাদের লজ্জা। কিন্তু তাদের কি আসলেই আর কোনো পথ আছে? অন্যদিকে সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য আর কিছু মিডিয়ার মিনমিনে সত্য বলার নামে আপসকামী বিরোধিতার চাপে মানুষ স্তব্ধ।

ঠিক যে কারণে সব দায়-দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। খেয়াল করবেন ফেইসবুকে না বলা পর্যন্ত কোনো সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে না। সমাধানের পথ খুঁজে পায় না। এখন এটাই যেন শেষ ভরসা। রংপুরের ডিসি ম্যাডামের স্যার ডাক শোনার খায়েশ বা বগুড়ায় স্কুলে ছাত্রীদের বস্তির মেয়ে বলার বিষয়ে মানুষ জানতই না, যদি না সোশ্যাল মিডিয়া তা জানান দিত। মুশকিল হচ্ছে এইসব উত্তেজক মুখরোচক খবরের চাপে বাজারদর, আগুনসম মূল্য সবকিছু ঢাকা পড়ে গিয়েছে। জানতে হবে ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া কোনো মিডিয়া নয়। অসম্পাদিত বিষয় নিয়ে কোনো মিডিয়াই মিডিয়া হতেই পারে না। যা খুশি লিখে, কাউকে দেবতা আর কাউকে আবার দানব বানিয়ে গালিগালাজ করার নাম মিডিয়া হতে পারে না। জনগণকে উসকে দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও নেতৃত্ব দেয়ার মুরোদ নেই।

এই কারণেই সুষ্ঠু রাজনীতির দরকার। সিডনির নির্বাচন, ভোট-ফলাফল সব উত্তেজনাহীন। কোথাও কোনো মিছিল, মিটিং বা সমাবেশ হয় না। মাইকিং বা ভাষণের প্রশ্নই ওঠে না। এসব দেখেশুনে আপনার মনে হতে পারে মৃত গণতন্ত্রের চর্চা হয় এদেশে। আসলে তা নয়। মূলত নীরবেই মানুষ তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয় ভোটের বাক্সে। তাদের মনোভাবের ফলাফলেই বদলে যায় সরকার। পরপর দুটি নির্বাচনে জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে লিবারেল দলের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে লেবারের ফিরে আসা তার বড় প্রমাণ।

নির্বাচনের ফলাফলে বলা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা আর দীর্ঘসময় শাসন করার অভিজ্ঞতায় লিবারেলের অতি আত্মবিশ্বাসই নাকি কাল হয়েছে। আমারও মত তাই। লিবারেলের মতো শ্বেতাঙ্গদের ভেতর জনপ্রিয় দলের হারার কারণ দ্রব্যমূল্য আর বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা। এটা সত্যি যে, এখানে অভাব আমাদের দেশের মতো নয়। রাষ্ট্র কল্যাণমূলক, সরকার আছে জনগণের পাশে। জনগণের জন্য আছে কোটি কোটি ডলারের সহায়তা। কাউকে না খেয়ে মরতে দেয় না রাষ্ট্র। অন্যায় অবিচার বা দুঃশাসনের প্রশ্নই ওঠে না। বহুজাতিক এই দেশে নানা দেশের মানুষ সবাই নিরাপদে বসবাস করে।

এটা আমাদের দেশে ভাবাও যায় না। ওই যে বলছিলাম আমরা বাড়তি সমস্যার উটকো চাপে আসল সমস্যা ভুলে থাকি। আমাদের সমাজে কারা আসলে নিরাপদ? স্যার ডাকা, না ডাকা নাকি, কাদিয়ানী-আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবনের বিষয় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ? এসব বাড়তি তর্কের আড়ালে আমাদের জনগণ জানতেই পারেনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। এক দেশ, এক জাতি, এক মাটি, এক চেহারার মানুষজনের ভেতর এত হিংসা, এত জঘন্য মারমুখি আচরণ কি আমরা আগে দেখেছি কোনোকালে? একদিকে সরকারি দলের উন্নয়ন প্রচার আর সন্তুষ্টির জোয়ার। অন্যদিকে কী ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।

বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষ ভয়ানক ভালো আছে। ভয়ানকই বটে। তারা যা খুশি কিনতে পারে। যে দেশে খুশি যেতে পারে। যেখানে ইচ্ছে পরিবারকে রাখতে পারে। বাচ্চাদের দেশের বাইরে পড়াতে পারে। তাদের পরিবারের কাউকে কোনো কাজ করে খেতে হয় না। কত পার্সেন্ট এরা? সে যতই হোক এদের দেখে কি বলা সম্ভব যে দেশের মানুষ ভালো আছে? উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল, প্রশস্ত রাজপথ এবং কিছু মানুষের জীবনযাপন অবশ্যই উন্নয়নের প্রতীক। কিন্তু আর সব দেশের মতো আমাদের জনগণের বাজারে যাওয়া এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তফাৎ একটাই, অন্য দেশগুলো তা স্বীকার করে, আমাদের সরকারি নেতারা অস্বীকার করেন। তাদের খোয়াবে যে দেশ তা নাকি সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা জানি রোজা-রমজানে কতটা ঝামেলায় আছে জনগণ। তাদের সবচেয়ে বড় দুঃখ ওই কথাটি বলতেও পারছে না তারা। বলার মতো কেউ নেই কোথাও।

দেশের আসল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আলোচনায় রাখলে আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে। সবাই মানেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দরকার। তিনি যেভাবে আগলে রেখেছেন সেভাবে কেউ পারবেন কিনা তা নিয়েই সন্দেহ আছে মানুষের মনে। ভয়ের পরিবর্তে, আগ্রাসী মনোভাবের বদলে মানুষের কথা শোনা এবং তাদের বলতে দেয়ার ভেতরেই অনেক সমাধান লুকিয়ে আছে। গণতন্ত্র তাই বলে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাড়তি চাপের আড়ালে মানুষ তুমি কেমন আছো?

আপডেট সময় : ১০:২১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

অজয় দাশগুপ্ত : গত কিছুদিন দেশের মিডিয়া ও জনমন দখল করে রেখেছিল বেশ কয়েকটা বিষয়। আপনার বা আপনাদের কি মনে হয় এই বিষয়গুলো রমজানের আগে বিতর্ক তোলার বা এভাবে চালু হবার কোনো দরকার ছিল? আমাদের সমাজের মূল সমস্যা বা চাওয়া এখন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। জানি না এটাও তারই একটা অংশ কিনা। ঘটনাগুলো কিংবা অঘটনের হোতারা হয়তো জেনে-বুঝে তা করেন না, কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে দেয়ার বা দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার মতো মানুষের তো অভাব নেই। অভাব নেই তেমন কর্তা বা প্রতিষ্ঠানেরও।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণই আছে চাপে। বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। উন্নত দেশগুলোর মানুষজনও ভয়াবহ চাপে আছে। যাদের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হয় না, বরং দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত, তাদের সমাজেও চলছে ভয়াবহ চাপ। সিডনিতে আমরা দেখছি সবকিছুর দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে বলে মানুষের নাভিশ্বাসও চরমে। আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন নিউ সাউথ ওয়েলস নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন হয়ে গেছে। বেরুচ্ছে ফলাফল। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত যে, দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা লিবারেল দল হারতে যাচ্ছে। সিডনির দায়িত্ব নেবে লেবার দল। কয়েক মাস আগে জাতীয় বা ফেডারেল নির্বাচনেও পালা বদল হয়েছে ক্ষমতার। লিবারেল গিয়ে লেবার জিতেছিল। এই যে আসা-যাওয়া এটাই গণতন্ত্র। এটাই নির্বাচন।

আমাদের দেশে নির্বাচন হয়, ভোট হয়, কিন্তু সবাই মানেন যে, গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। হয় না বলেই এখন আর ফলাফল নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সবাই জানেন কে জিতবে, কারা জিতবে। নিন্দুকদের মতে অগ্রহণযোগ্য ভোটের কারণে রাজনীতিবিমুখ হয়ে গেছে মানুষ। তারচেয়েও বড় কথা মানুষের কথা বলার মতো কেউ নেই কোথাও। খুব বেশিদিন আগের কথা না। আমাদের দেশের সংসদে এমন সব নেতা ছিলেন যাদের কথার বানে জর্জরিত হতো সরকারি দল। যাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেত সরকারি দলের নেতারা। তাদের মাথায় সবসময় জবাবদিহিতার চাপ থাকত। আজ ওই পরিবেশ নেই। কেউ প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন না। নির্বাচন বয়কট করা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্যরা মোটামুটি নিজেদের সরিয়েই নিয়েছে। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা, তাদের লজ্জা। কিন্তু তাদের কি আসলেই আর কোনো পথ আছে? অন্যদিকে সরকারি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য আর কিছু মিডিয়ার মিনমিনে সত্য বলার নামে আপসকামী বিরোধিতার চাপে মানুষ স্তব্ধ।

ঠিক যে কারণে সব দায়-দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। খেয়াল করবেন ফেইসবুকে না বলা পর্যন্ত কোনো সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে না। সমাধানের পথ খুঁজে পায় না। এখন এটাই যেন শেষ ভরসা। রংপুরের ডিসি ম্যাডামের স্যার ডাক শোনার খায়েশ বা বগুড়ায় স্কুলে ছাত্রীদের বস্তির মেয়ে বলার বিষয়ে মানুষ জানতই না, যদি না সোশ্যাল মিডিয়া তা জানান দিত। মুশকিল হচ্ছে এইসব উত্তেজক মুখরোচক খবরের চাপে বাজারদর, আগুনসম মূল্য সবকিছু ঢাকা পড়ে গিয়েছে। জানতে হবে ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া কোনো মিডিয়া নয়। অসম্পাদিত বিষয় নিয়ে কোনো মিডিয়াই মিডিয়া হতেই পারে না। যা খুশি লিখে, কাউকে দেবতা আর কাউকে আবার দানব বানিয়ে গালিগালাজ করার নাম মিডিয়া হতে পারে না। জনগণকে উসকে দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও নেতৃত্ব দেয়ার মুরোদ নেই।

এই কারণেই সুষ্ঠু রাজনীতির দরকার। সিডনির নির্বাচন, ভোট-ফলাফল সব উত্তেজনাহীন। কোথাও কোনো মিছিল, মিটিং বা সমাবেশ হয় না। মাইকিং বা ভাষণের প্রশ্নই ওঠে না। এসব দেখেশুনে আপনার মনে হতে পারে মৃত গণতন্ত্রের চর্চা হয় এদেশে। আসলে তা নয়। মূলত নীরবেই মানুষ তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয় ভোটের বাক্সে। তাদের মনোভাবের ফলাফলেই বদলে যায় সরকার। পরপর দুটি নির্বাচনে জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে লিবারেল দলের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে লেবারের ফিরে আসা তার বড় প্রমাণ।

নির্বাচনের ফলাফলে বলা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা আর দীর্ঘসময় শাসন করার অভিজ্ঞতায় লিবারেলের অতি আত্মবিশ্বাসই নাকি কাল হয়েছে। আমারও মত তাই। লিবারেলের মতো শ্বেতাঙ্গদের ভেতর জনপ্রিয় দলের হারার কারণ দ্রব্যমূল্য আর বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা। এটা সত্যি যে, এখানে অভাব আমাদের দেশের মতো নয়। রাষ্ট্র কল্যাণমূলক, সরকার আছে জনগণের পাশে। জনগণের জন্য আছে কোটি কোটি ডলারের সহায়তা। কাউকে না খেয়ে মরতে দেয় না রাষ্ট্র। অন্যায় অবিচার বা দুঃশাসনের প্রশ্নই ওঠে না। বহুজাতিক এই দেশে নানা দেশের মানুষ সবাই নিরাপদে বসবাস করে।

এটা আমাদের দেশে ভাবাও যায় না। ওই যে বলছিলাম আমরা বাড়তি সমস্যার উটকো চাপে আসল সমস্যা ভুলে থাকি। আমাদের সমাজে কারা আসলে নিরাপদ? স্যার ডাকা, না ডাকা নাকি, কাদিয়ানী-আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবনের বিষয় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ? এসব বাড়তি তর্কের আড়ালে আমাদের জনগণ জানতেই পারেনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। এক দেশ, এক জাতি, এক মাটি, এক চেহারার মানুষজনের ভেতর এত হিংসা, এত জঘন্য মারমুখি আচরণ কি আমরা আগে দেখেছি কোনোকালে? একদিকে সরকারি দলের উন্নয়ন প্রচার আর সন্তুষ্টির জোয়ার। অন্যদিকে কী ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।

বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষ ভয়ানক ভালো আছে। ভয়ানকই বটে। তারা যা খুশি কিনতে পারে। যে দেশে খুশি যেতে পারে। যেখানে ইচ্ছে পরিবারকে রাখতে পারে। বাচ্চাদের দেশের বাইরে পড়াতে পারে। তাদের পরিবারের কাউকে কোনো কাজ করে খেতে হয় না। কত পার্সেন্ট এরা? সে যতই হোক এদের দেখে কি বলা সম্ভব যে দেশের মানুষ ভালো আছে? উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল, প্রশস্ত রাজপথ এবং কিছু মানুষের জীবনযাপন অবশ্যই উন্নয়নের প্রতীক। কিন্তু আর সব দেশের মতো আমাদের জনগণের বাজারে যাওয়া এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তফাৎ একটাই, অন্য দেশগুলো তা স্বীকার করে, আমাদের সরকারি নেতারা অস্বীকার করেন। তাদের খোয়াবে যে দেশ তা নাকি সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা জানি রোজা-রমজানে কতটা ঝামেলায় আছে জনগণ। তাদের সবচেয়ে বড় দুঃখ ওই কথাটি বলতেও পারছে না তারা। বলার মতো কেউ নেই কোথাও।

দেশের আসল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আলোচনায় রাখলে আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে। সবাই মানেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দরকার। তিনি যেভাবে আগলে রেখেছেন সেভাবে কেউ পারবেন কিনা তা নিয়েই সন্দেহ আছে মানুষের মনে। ভয়ের পরিবর্তে, আগ্রাসী মনোভাবের বদলে মানুষের কথা শোনা এবং তাদের বলতে দেয়ার ভেতরেই অনেক সমাধান লুকিয়ে আছে। গণতন্ত্র তাই বলে।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট