ঢাকা ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বাটা, কেএফসিতে হামলা: বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতাই কি উদ্দেশ্য?

  • আপডেট সময় : ০৪:২৯:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

মোস্তফা হোসেইন : বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দুর্নাম আগে থেকেই আছে। এখানে হরতাল ধর্মঘট চলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণও এটা। অতীতের সেই অবস্থাই ধরে থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে কী করে?
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও হতাহতের প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। বৈশ্বিক হরতালের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি রাস্তায় নেমে আসে অসংখ্য মানুষ। জোরালো প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ ও মানবতাবাদী নাগরিক সমাজ। এর আগে গাজায় ১৫ চিকিৎসক/সেবকের প্রাণহানির পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বোঝা যাচ্ছিল- পরদিন বাংলাদেশেও কিছু একটা হতে যাচ্ছে এর প্রতিক্রিয়ায়। কারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় ঐক্যসূত্র এবং মানবতার প্রতি মমত্ববোধ। ফিলিস্তিন ইস্যুতে এমন প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে আগেও হয়েছে। কিন্তু এবারের প্রতিক্রিয়াটা ছিল অস্বাভাবিক।

প্রতিবাদী সব মানুষের একটি অংশ বাটা ও কেএফসিসহ কিছু দোকানপাটে ভাংচুর চালায় বিভিন্ন স্থানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত সেসব চিত্র ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ছিল, একইভাবে লুটপাট ও ভাংচুরের বিপক্ষেও মতামত আসতে থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সিলেটে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে কিছু মানুষ।

দুটি প্রতিষ্ঠানেরই জন্ম বিদেশে। দুটিই বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়ও বটে। এর মধ্যে বাটা সু কোম্পানি স্বাধীনতারও প্রায় এক দশককাল আগে থেকে ব্যবসা করে আসছে বাংলাদেশে। আর এ প্রতিষ্ঠানটির নাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও স্থান করে নিয়েছে, ডব্লিউএএস ওডারল্যান্ড বীরপ্রতীকের বিশেষ অবদানের কারণে। আজকে টঙ্গী ও ধামরাইয়ে তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন। যেখানকার শ্রমিকরা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে বলেও তাদেরই মুখ থেকে শোনা। এ বাটার পণ্যের ৮৫% বাংলাদেশে তৈরি। শুধু তাই নয়, তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানায় নিজস্ব তদারকিতেও কাজ করিয়ে থাকে। কাঁচামালেরও প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের তৈরি। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রায় ৫-৬ হাজার শ্রমিক জড়িত আছে।

গ্রামে গ্রামে তাদের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ কাজ করে। এ বিশাল শ্রমিকশক্তির পরিবারগুলো এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতই শুধু নয়, তাদের রুটি-রুজিও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি ভালো পরিমাণের রাজস্বও প্রদান করে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের কিছু দোকানকে ইসরায়েলি কিংবা ইহুদি ধর্মাবলম্বী আখ্যা দিয়ে ভাংচুর করা হয়। শুধু তাই নয়, অনেক দোকানে বিক্ষোভকারীরা লুটপাটও চালায়। যতটা জানা যায়, বাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা টোমাস বাটার জন্মস্থান চেক প্রজাতন্ত্রে ২০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মীয়। ৭৭.৯০ শতাংশ মানুষ হয়তো ধর্মহীন না হয় কোনো সংগঠিত ধর্মের অনুসারীই নয়। সেখানে ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে এমন তথ্যই পাওয়া যায় না; এমনকি টোমাস বাটা যে কানাডায় পরবর্তীকালে বসতি স্থাপন করেন, সেখানেও তাকে ইহুদি ধর্ম পালন করতে দেখা যায় না।

কেএফসি বাংলাদেশে প্রথম আউটলেট চালু করে ২০০৬ সালে। এখন বাংলাদেশের ১২টি শহরে তাদের ৪৬টি আউটলেট চলছে। এর মধ্যে ৩৩টিই ঢাকায়। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অন্তত হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে কেএফসিতে। কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডাও ইহুদি নন। তার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জন ইয়াং ব্রাউন জুনিয়র কেএএফসির মালিক হয়েছেন। ইয়াং ব্রাউন জুনিয়র কিংবা তার বাবা জন ওয়াই ব্রাউন সিনিয়র ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী, ইহুদি নন। কিন্তু কেএফসি দোকানগুলো ভাংচুর হয়েছে এ অভিযোগ এনে যে, এর মালিক ইহুদি এবং এর লভ্যাংশ পায় ইসরায়েল।

ওই অস্বাভাবিক মবকাণ্ড ঘটার কারণ কী? যে সময় এ লুটপাট ও ভাংচুর চলে, তখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিদেশীরা অবস্থান করছিলেন। পরদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক বণিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে মতবিনিময় করার কথা। তাদের আগ্রহ সম্পর্কে জানানোর কথা। বাংলাদেশের এ আয়োজনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে বিদেশীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। সরকারের এমন একটি উদ্দেশ্যকে বানচাল করার জন্যই কি এ বাণিজ্য পরিবেশ বিঘ্নের উদাহরণ তৈরি হয়েছে? সংগত কারণে প্রশ্ন আসে এটা পরিকল্পিত বা স্যাবোটাজ কিনা।
ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের ৭০ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হয়তো তাদের বিচারও হবে। কিন্তু দোকানগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে তা কি সহজে পূরণ হবে? ধরা যাক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রতিকূল বাণিজ্য পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজমান, এ যে দুর্নাম তা ঘুচিয়ে ফেলা কি এত সহজ হবে? তাও এমন সময় হলো যখন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দুর্নাম আগে থেকেই আছে। এখানে হরতাল ধর্মঘট চলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণও এটা। অতীতের ওই অবস্থাই ধরে থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে কী করে?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে পিছু টেনে ধরার পরিকল্পনা করছে কি কেউ? বাইরের কোনো শক্তিও কি এর সঙ্গে যুক্ত আছে? এমন জল্পনা-কল্পনা চলাকালেই সংবাদ হয়েছে ভারত সরকার বাংলাদেশের পণ্য পবিরহনে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। (যদিও পরবর্তীকালে সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে)।

এ ধ্বংসাত্মক কাজের পেছনে ধর্মীয় সমর্থন থাকতে পারে না। নিজ দেশের সম্পদ নষ্ট করা এবং নিজ দেশের মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত হানার মতো কাজকে কখনো ইসলাম সমর্থন করে না। এটা স্পষ্ট, যারা ভাংচুর করেছে তারা ধর্মীয় অনুশাসনকেও অমান্য করেছে।

দুষ্কৃতকারীদের কাজের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন কাজ বন্ধ করতে এ ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। এর পেছনে অন্য কোনো অপশক্তি জড়িত আছে কিনা, থাকলে কারা সেই তথ্যও বের করতে হবে। একই সময় দেশের এতগুলো স্থানে ধ্বংসাত্মক কাজ চলল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল, দেখতে হবে সেটিও। ঘটনায় প্রমাণ হয়—হামলা, লুটপাট প্রতিরোধ করতে তারা ব্যর্থ। দেখতে হবে কোন কারণে তারা নিষ্ক্রীয় ছিল। বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না। লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাটা, কেএফসিতে হামলা: বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতাই কি উদ্দেশ্য?

আপডেট সময় : ০৪:২৯:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মোস্তফা হোসেইন : বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দুর্নাম আগে থেকেই আছে। এখানে হরতাল ধর্মঘট চলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণও এটা। অতীতের সেই অবস্থাই ধরে থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে কী করে?
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও হতাহতের প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। বৈশ্বিক হরতালের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি রাস্তায় নেমে আসে অসংখ্য মানুষ। জোরালো প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ ও মানবতাবাদী নাগরিক সমাজ। এর আগে গাজায় ১৫ চিকিৎসক/সেবকের প্রাণহানির পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বোঝা যাচ্ছিল- পরদিন বাংলাদেশেও কিছু একটা হতে যাচ্ছে এর প্রতিক্রিয়ায়। কারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় ঐক্যসূত্র এবং মানবতার প্রতি মমত্ববোধ। ফিলিস্তিন ইস্যুতে এমন প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে আগেও হয়েছে। কিন্তু এবারের প্রতিক্রিয়াটা ছিল অস্বাভাবিক।

প্রতিবাদী সব মানুষের একটি অংশ বাটা ও কেএফসিসহ কিছু দোকানপাটে ভাংচুর চালায় বিভিন্ন স্থানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত সেসব চিত্র ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ছিল, একইভাবে লুটপাট ও ভাংচুরের বিপক্ষেও মতামত আসতে থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সিলেটে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে কিছু মানুষ।

দুটি প্রতিষ্ঠানেরই জন্ম বিদেশে। দুটিই বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়ও বটে। এর মধ্যে বাটা সু কোম্পানি স্বাধীনতারও প্রায় এক দশককাল আগে থেকে ব্যবসা করে আসছে বাংলাদেশে। আর এ প্রতিষ্ঠানটির নাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও স্থান করে নিয়েছে, ডব্লিউএএস ওডারল্যান্ড বীরপ্রতীকের বিশেষ অবদানের কারণে। আজকে টঙ্গী ও ধামরাইয়ে তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন। যেখানকার শ্রমিকরা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে বলেও তাদেরই মুখ থেকে শোনা। এ বাটার পণ্যের ৮৫% বাংলাদেশে তৈরি। শুধু তাই নয়, তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানায় নিজস্ব তদারকিতেও কাজ করিয়ে থাকে। কাঁচামালেরও প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের তৈরি। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রায় ৫-৬ হাজার শ্রমিক জড়িত আছে।

গ্রামে গ্রামে তাদের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ কাজ করে। এ বিশাল শ্রমিকশক্তির পরিবারগুলো এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতই শুধু নয়, তাদের রুটি-রুজিও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি ভালো পরিমাণের রাজস্বও প্রদান করে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের কিছু দোকানকে ইসরায়েলি কিংবা ইহুদি ধর্মাবলম্বী আখ্যা দিয়ে ভাংচুর করা হয়। শুধু তাই নয়, অনেক দোকানে বিক্ষোভকারীরা লুটপাটও চালায়। যতটা জানা যায়, বাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা টোমাস বাটার জন্মস্থান চেক প্রজাতন্ত্রে ২০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মীয়। ৭৭.৯০ শতাংশ মানুষ হয়তো ধর্মহীন না হয় কোনো সংগঠিত ধর্মের অনুসারীই নয়। সেখানে ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে এমন তথ্যই পাওয়া যায় না; এমনকি টোমাস বাটা যে কানাডায় পরবর্তীকালে বসতি স্থাপন করেন, সেখানেও তাকে ইহুদি ধর্ম পালন করতে দেখা যায় না।

কেএফসি বাংলাদেশে প্রথম আউটলেট চালু করে ২০০৬ সালে। এখন বাংলাদেশের ১২টি শহরে তাদের ৪৬টি আউটলেট চলছে। এর মধ্যে ৩৩টিই ঢাকায়। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অন্তত হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে কেএফসিতে। কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডাও ইহুদি নন। তার হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জন ইয়াং ব্রাউন জুনিয়র কেএএফসির মালিক হয়েছেন। ইয়াং ব্রাউন জুনিয়র কিংবা তার বাবা জন ওয়াই ব্রাউন সিনিয়র ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী, ইহুদি নন। কিন্তু কেএফসি দোকানগুলো ভাংচুর হয়েছে এ অভিযোগ এনে যে, এর মালিক ইহুদি এবং এর লভ্যাংশ পায় ইসরায়েল।

ওই অস্বাভাবিক মবকাণ্ড ঘটার কারণ কী? যে সময় এ লুটপাট ও ভাংচুর চলে, তখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিদেশীরা অবস্থান করছিলেন। পরদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক বণিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে মতবিনিময় করার কথা। তাদের আগ্রহ সম্পর্কে জানানোর কথা। বাংলাদেশের এ আয়োজনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে বিদেশীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। সরকারের এমন একটি উদ্দেশ্যকে বানচাল করার জন্যই কি এ বাণিজ্য পরিবেশ বিঘ্নের উদাহরণ তৈরি হয়েছে? সংগত কারণে প্রশ্ন আসে এটা পরিকল্পিত বা স্যাবোটাজ কিনা।
ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের ৭০ জনের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হয়তো তাদের বিচারও হবে। কিন্তু দোকানগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে তা কি সহজে পূরণ হবে? ধরা যাক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রতিকূল বাণিজ্য পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজমান, এ যে দুর্নাম তা ঘুচিয়ে ফেলা কি এত সহজ হবে? তাও এমন সময় হলো যখন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দুর্নাম আগে থেকেই আছে। এখানে হরতাল ধর্মঘট চলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণও এটা। অতীতের ওই অবস্থাই ধরে থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে কী করে?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে পিছু টেনে ধরার পরিকল্পনা করছে কি কেউ? বাইরের কোনো শক্তিও কি এর সঙ্গে যুক্ত আছে? এমন জল্পনা-কল্পনা চলাকালেই সংবাদ হয়েছে ভারত সরকার বাংলাদেশের পণ্য পবিরহনে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। (যদিও পরবর্তীকালে সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছে)।

এ ধ্বংসাত্মক কাজের পেছনে ধর্মীয় সমর্থন থাকতে পারে না। নিজ দেশের সম্পদ নষ্ট করা এবং নিজ দেশের মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত হানার মতো কাজকে কখনো ইসলাম সমর্থন করে না। এটা স্পষ্ট, যারা ভাংচুর করেছে তারা ধর্মীয় অনুশাসনকেও অমান্য করেছে।

দুষ্কৃতকারীদের কাজের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন কাজ বন্ধ করতে এ ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। এর পেছনে অন্য কোনো অপশক্তি জড়িত আছে কিনা, থাকলে কারা সেই তথ্যও বের করতে হবে। একই সময় দেশের এতগুলো স্থানে ধ্বংসাত্মক কাজ চলল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল, দেখতে হবে সেটিও। ঘটনায় প্রমাণ হয়—হামলা, লুটপাট প্রতিরোধ করতে তারা ব্যর্থ। দেখতে হবে কোন কারণে তারা নিষ্ক্রীয় ছিল। বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না। লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক