নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী অর্থবছরের বাজেটে নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিতে নজর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থাটি বলেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষিতে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজেটে কীভাবে নি¤œ আয়ের মানুষকে স্বস্তিতে রাখা যায়, সে বিষয়টি সরকারকে নজরে রাখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিনলাখ টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি আগামী বাজেটে খাদ্যে, রফতানি শিল্পে প্রণোদনা দেওয়া এবং শ্রমিকদের হেলথ ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা, প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বাড়ানো এবং শিশুদের নিরাপত্তায় আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি শিক্ষণীয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। তাই আমাদের বাজার ভিত্তিতে ঋণ আনতে হবে। নতুন ঋণগুলো কখন পরিশোধ করতে হবে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোকে সাশ্রয়ী সময়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।’
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদী হবে না। দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সবুজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।’
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১ শতাংশ কমে গেছে। অথচ অন্য এলডিসির ৩০টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অনেক পণ্য আছে যেগুলোর ব্যবহার ক্ষতিকর। সেগুলোর কর বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সিগারেট। সিগারেটের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ সারচার্জসহ ৫০ শতাংশ ট্রাক্স বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি সফট ড্রিংক স্বাস্থ্যখাতের কোন উপকার আসে না বরং ক্ষতি করে। ফলে এই খাতে ট্যাক্স বাড়ানো এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন যেগুলো মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। এটার ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হিসাবটি সঠিকভাবে করতে হবে। সঠিক তথ্যগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বড়বড় মেগাপ্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার কারণে দুর্নীতি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যয় বাড়লে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো লাভজনক নাও হতে পারে।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের কর, জিডিপির রেশিও বাড়ার পরিবর্তে তা কমছে। এটা কোভিডের আগে কর জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও বর্তমানে তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপির আকার বাড়লেও কর আদায় কমছে। আমাদের রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি তার চেয়েও বেশি বাড়ছে। এতে করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। বাজেটের মূল দর্শন হতে হবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কীভাবে আয় বাড়ানো যায়।’
সিপিডি‘র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় না, তবে শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। নতুন ঋণগুলো আমরা কিন্তু বেশি সুদে কম সময়ের জন্য নিচ্ছি। শ্রীলঙ্কাও তাই করেছিল। কিন্তু এতে করে তারা ধরা খেয়েছে। বড় প্রকল্পগুলো আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এটার দিকে রজর দিতে হবে। আমাদের বাণিজ্যঘাটতি প্রথম ৮ মাসে ২২ বিলিয়ন ডলার। এটা বছর শেষে ৩০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা এটা নিয়ে আমরা গত কয়েকবছর ধরেই কথা বলছি। বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়েছে আমদানি রপ্তানির আড়ালে। এবারের বাজেটে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি সর্তক থাকতে হবে। পাশাপাশি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবাযনে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বড় প্রকল্প নেওয়া যাবে না।’
অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নির্বাচনের বছর এসে যেন সরকার কর ও ঋণ খেলাপিদের কোনো ধরনের সুবিধা না দেয়।’