নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনবেন এস কে ফারুক। তিনি রবিবার ঢাকার মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে আসেন দরদাম কেমন দেখতে। ফারুকের ধারণা ছিল জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর কম্পিউটার বা এ সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে কয়েকটি দোকান ঘুরে তিনি দেখতে পান দাম আগের মতোই আছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার পর খুচরা বাজারে নানা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজেটের কোনো প্রভাব নেই কম্পিউটার বা এই সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক পণ্যের বাজারে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক বলেন, ‘বাজেটের পর অনেক কিছুরই দাম বেড়েছে। সেই হিসাব করেই কম্পিউটার কেনার বাজেট করেছিলাম। কিন্তু মার্কেটে এসে দেখলাম দাম বাড়েনি, আগের মতোই আছে ।’
একই রকম ভাষ্য শেকেরটেক শ্যামলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল হোসেনের। একটি ওয়াইফাই রাউটার কিনেছেন তিনি। বলেন, ‘আমার ইন্টারনেট ব্যবসা আছে। যে কারণে প্রায় সময় আমাকে রাউটার কিনতে হয়। আজকে (রবিবার) মার্কেটে এসে দেখলাম দাম আগের মতোই। অন্য আরও কিছু জিনিসপত্রের দাম যাচাই করে দেখলাম দাম বাড়েনি।’
রাজধানীর কম্পিউটার পণ্যের অন্যতম এই বিপণির বিক্রেতাদের ভাষ্য, বাজেট প্রস্তাবের সঙ্গে তাদের মার্কেটের কোনো পণ্যের দাম উঠানামা করেনি। আর বাজেটে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হলেও নতুন দামের পণ্য বাজারে আসতে সময় লাগবে অন্তত দেড় মাস।
সফটকেট নামের একটি কম্পিউটার ও সফটওয়্যার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসকল পণ্য বিক্রি করি, তা আমদানি করা। যদি দাম বাড়ে, সে ক্ষেত্রে বাড়তি দামে আমদানি করে, আমাদের পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে কমপক্ষে দেড় মাস। এখন পর্যন্ত বাজেটের কোনো প্রভাব আমাদের পণ্যে নেই।’
মাল্টিপ্লান সেন্টার, বিসিএস কম্পিউটার সিটি, মোতালেব প্লাজা ঘুরে দেখা যায়, কম্পিউটারের সিপিইউ, মনিটর, কিবোর্ড, মাউস, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, হেডফোন, ইন্টারনেট রাউটার, মোবাইলফোন ও ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রের দাম আগের মতোই আছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পের (এসি-ফ্রিজ) ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত থাকছে। ফলে দেশে উৎপাদিত এসব পণ্য কম দামে মিলতে পারে। অন্যদিকে বিদেশি এসি-ফ্রিজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে বাজেটে মুঠোফোন (ফিচারফোন) আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি মুঠোফোনের দাম আরও বাড়তে পারে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবে দেখা গেছে, দেশে সংযোজিত মোবাইলফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে আমদানিকৃত মোবাইলের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কম্পিউটারসহ কিছু পণ্যের দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশ থেকে আসা এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ/ইনকজেট কার্টিজ, কম্পিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নেটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড/কিউআর স্ক্যানার, র্যাম, পিসিবিএ/ মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, মডেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস/হাব, স্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, ইয়ারফোন, হেডফোন, এসএসডি/পোর্টেবল এসএসডি, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাশ মেমোরিকার্ড, সিসিটিভি, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর, প্রজেক্টর, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, ইরাইটিং প্যাড, ইউএসবি ক্যাবল, ডাটা ক্যাবল, ডিজিটাল ওয়াচ, বিভিন্ন ধরণের লোডেড পিসিবির স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব থাকায় এগুলোর দাম কমতে পারে।
মাল্টিপ্লান সেন্টারের আপডেট কালেশনের বিক্রয়কর্মী মো. ফয়সাল মাহমুদের কাছে বাজারে বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজেটের পর উৎসস্থল থেকে প্রযুক্তি পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ মিলছে না। পণ্য মিললেও খানিকটা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজেটের আগে থেকেই কিছুটা বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে। তবে সেটা খুব একটা বেশি তাও নয়।’
একই মার্কেটের ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার সালেহ আহমেদ মজুমদার বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার পর নতুন করে পণ্য কেনা হয়নি। আগে থেকে কেনা পণ্যগুলো আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। মজুমদার ইন্টারন্যাশনালের বিক্রয়কর্মী রেজাউল করিম সোহেল বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার এমনিতেই চড়া। প্রস্তাবিত বাজেটের পর নতুন করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়নি। আগে থেকে কেনা পণ্যগুলো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
র টেকের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, বাজেটকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়াটা সমীচীন নয়। এটা এক রকম প্রতারণাও বটে। আমরা আগে কেনা পণ্যগুলো আগের দামেই বিক্রি করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকে। এসব ডিভাইস ন্যায্য দামেই বিক্রি হচ্ছে।’ এই মার্কেটে মাল্টিমিডিয়া স্পিকার কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েকটা মাল্টিমিডিয়া স্পিকার কেনার জন্য দাম জানতে এসেছিলেন। এসে দেখলেন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
ফিচার ফোনের বাজার : মোতালেব প্লাজার রাজধানী টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. ফারহাদ হোসেন টিপু বলেন, শুনেছি বাজেটে বিদেশে ফিচার ফোনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো এসব ফোনের দাম বাড়াইনি। আগে যে দামে কেনা ছিল সেই হিসাবেই বিক্রি করছি। তবে দাম বাড়ার খবরে ফিচারফোনের ক্রেতা কিছুটা বেড়েছে।’ মোবারক ইলিয়াস এক ক্রেতা বলেন, ‘নকিয়ার একটি ফিচারফোন অনেকদিন আগে থেকেই কিনব বলে ভাবছিলাম। কিন্তু সময় সুযোগ হচ্ছিল না। বাজেটে দাম বাড়ার খবর শুনে কিনতে এলাম। আগের দামেই নির্ধারিত মডেলটি কিনতে পেরেছি।’ এই মার্কেটের হুমায়ুন ইলেকট্রনিক্সের কর্ণধার এ আর দ্বীন ইসলাম জানান, নতুন করে ফিচারফোন আমদানি করার আগ পর্যন্ত আগের দামেই পাওয়া যাবে। গ্রাহকদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে না।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য : ইলেকট্রিক ফ্যান, এয়ারকুলার এবং এসির চাহিদা যখন চরমে, তখন দামটাও রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। দেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স এবং রেফ্রিজারেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বাজেটের পর এসব পণ্যের দামের কোনও তারতম্য হয়নি। এসি, এয়ারকুলার, ফ্যান, আয়রন, ফ্রিজ, টিভি, ওভেন, ওয়াশিং মেশিনসহ প্রায় সকল পণ্যই আগের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।