ঢাকা ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০৩ কোটি ডলার বিক্রি

  • আপডেট সময় : ১০:০০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্থিতিশীল ডলারের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে ২০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি ব্যয় বাড়ছে। যদিও এ সময়ে অর্থনীতির অন্যতম সূচক প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। রফতানি আয়ে রেকর্ড হলেও আমদানির তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদার কারণে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ ঠিক রাখতে বেশি পরিমাণে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০৩ কোটি ২০ লাখ বা ২ হাজার ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর চলতি বছরের আগস্টের শুরু থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে ডলারের দাম। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে লেনদেনর জন্য প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা নভেম্বরের শুরুতে ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। অক্টোবরের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এক ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। আগস্টে ডলার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। চার মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার দর হারিয়েছে এক টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা স্থিতিশীল ছিল মার্কিন ডলার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মত ব্যাংকে জমা হয়েছে। এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কেনে। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো এখন নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। আন্তঃব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে ডলারের দাম আরো বেশি। খোলাবাজারে এখন নগদ ডলার ৯০ থেকে ৯২ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর সম্প্রতি খুলে দেওয়ায় এখন বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানিতে ২ হাজার ৭৩২ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮৬০ কোটি ৯২ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এই হিসাবে পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। কেননা, আমাদের দেশ আমদানি নির্ভর। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের দাম বাড়ে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে। সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০৩ কোটি ডলার বিক্রি

আপডেট সময় : ১০:০০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্থিতিশীল ডলারের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে ২০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি ব্যয় বাড়ছে। যদিও এ সময়ে অর্থনীতির অন্যতম সূচক প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। রফতানি আয়ে রেকর্ড হলেও আমদানির তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদার কারণে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ ঠিক রাখতে বেশি পরিমাণে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২০৩ কোটি ২০ লাখ বা ২ হাজার ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর চলতি বছরের আগস্টের শুরু থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে ডলারের দাম। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে লেনদেনর জন্য প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা নভেম্বরের শুরুতে ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। অক্টোবরের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এক ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। আগস্টে ডলার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। চার মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার দর হারিয়েছে এক টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা স্থিতিশীল ছিল মার্কিন ডলার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মত ব্যাংকে জমা হয়েছে। এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কেনে। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো এখন নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। আন্তঃব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে ডলারের দাম আরো বেশি। খোলাবাজারে এখন নগদ ডলার ৯০ থেকে ৯২ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর সম্প্রতি খুলে দেওয়ায় এখন বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানিতে ২ হাজার ৭৩২ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮৬০ কোটি ৯২ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এই হিসাবে পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। কেননা, আমাদের দেশ আমদানি নির্ভর। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের দাম বাড়ে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে। সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়।’