ঢাকা ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার

  • আপডেট সময় : ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : এবারের রমজান সরকারের এই মেয়াদের শেষ রমজান। এ কারণে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে সরকার। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলেই রয়েছে শঙ্কা। এই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতা। এরপরও রমজানে মানুষকে একটু স্বস্তিতে রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে দুই মাস আগে থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক করেছে। এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করেছে সরকার। রমজান শুরু হওয়ার আগেই বাজারে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও খেজুরের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে তার ওপর নজর রাখা হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে। ১৫ পণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হবে। এবার এক মাস আগে থেকেই বাজারে আছে টিসিবি।
বাতিল হতে পারে বাজার কমিটি
যত পর্যায়ে পণ্য হাতবদল হয় তার কোনও পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুত না হয় তা নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নজরদারির কাজটি করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ হলো, যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়, তাই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দরকার হলে তাদের কমিটির অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে সেই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুত করা সম্ভব হবে না।
মূল্যস্ফীতির শঙ্কা
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি, একইসঙ্গে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতায় রমজানে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তারা বলছে, বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন সব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সঙ্গে এ বছরের দাম যদি এক হয়, এরপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি থাকা এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানিনির্ভর পণ্যের আমদানি কমে গেছে। যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম। এ কারণেও এ বছর রমজানে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকেই ধাবিত হবে। এরইমধ্যে বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। এই সময়ে এই পণ্যটি গতবারের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম আমদানি করা হয়েছে। তবে পণ্যের বাজারে কোনও ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তারা বলছে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায়। যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়।
সুলভ মূল্য
বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিপণন সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এ বছরই প্রথমবার দেশের এক কোটি পরিবারের কাছে কার্ডের মাধ্যমে রমজানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবে টিসিবি। এর মধ্য দিয়ে কমপক্ষে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরে চালের যৌক্তিক মূল্য ঠিক করতেও কাজ করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একটি যৌথ কমিটি। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিটিকে বাজারে পণ্যের দাম যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে পাঠানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
দাম বেঁধে দেবে সরকার
সরকার এ বছরও কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজপাতা। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেল, চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা জানিয়েছেন, নতুন আইনকানুন করে লাভ হবে না। এর পরিবর্তে পণ্যের সঠিক চাহিদা নির্ধারণ করে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। পাইপলাইনে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। ডলার জটিলতার কারণেই এ বছর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এরমধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে শুধু রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ফলে ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টন পাম অয়েল ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ সালে একই সময়ে এটির আমদানি বেড়েছে এবং প্রায় মোট ১২ লাখ মেট্রিক টন পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। এখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, কাস্টমসের এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয় বলে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে।
এদিকে রমজানের আগে যেহেতু অনেক সময় হাতে নেই, তাই যেসব পণ্য প্রতিবেশী দেশ বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সম্ভব, সেগুলোই আমদানি করা সম্ভব। আর যেগুলো দূরের দেশ থেকে আসবে সেগুলো আসতে আসতে রমজান মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে কোনও পণ্যের ঘাটতি নাই। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার দর নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজার দরের ওপর। সেক্ষেত্রে দেশীয় বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার

আপডেট সময় : ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

বিশেষ সংবাদদাতা : এবারের রমজান সরকারের এই মেয়াদের শেষ রমজান। এ কারণে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে সরকার। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলেই রয়েছে শঙ্কা। এই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতা। এরপরও রমজানে মানুষকে একটু স্বস্তিতে রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে দুই মাস আগে থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক করেছে। এলসি খোলা নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করেছে সরকার। রমজান শুরু হওয়ার আগেই বাজারে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল ও খেজুরের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে তার ওপর নজর রাখা হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে। ১৫ পণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হবে। এবার এক মাস আগে থেকেই বাজারে আছে টিসিবি।
বাতিল হতে পারে বাজার কমিটি
যত পর্যায়ে পণ্য হাতবদল হয় তার কোনও পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুত না হয় তা নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নজরদারির কাজটি করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ হলো, যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়, তাই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দরকার হলে তাদের কমিটির অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে সেই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুত করা সম্ভব হবে না।
মূল্যস্ফীতির শঙ্কা
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি, একইসঙ্গে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতায় রমজানে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তারা বলছে, বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন সব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সঙ্গে এ বছরের দাম যদি এক হয়, এরপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি থাকা এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানিনির্ভর পণ্যের আমদানি কমে গেছে। যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম। এ কারণেও এ বছর রমজানে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকেই ধাবিত হবে। এরইমধ্যে বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। এই সময়ে এই পণ্যটি গতবারের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম আমদানি করা হয়েছে। তবে পণ্যের বাজারে কোনও ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তারা বলছে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায়। যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়।
সুলভ মূল্য
বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিপণন সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এ বছরই প্রথমবার দেশের এক কোটি পরিবারের কাছে কার্ডের মাধ্যমে রমজানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবে টিসিবি। এর মধ্য দিয়ে কমপক্ষে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরে চালের যৌক্তিক মূল্য ঠিক করতেও কাজ করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একটি যৌথ কমিটি। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিটিকে বাজারে পণ্যের দাম যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সে প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ আকারে পাঠানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
দাম বেঁধে দেবে সরকার
সরকার এ বছরও কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজপাতা। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেল, চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা জানিয়েছেন, নতুন আইনকানুন করে লাভ হবে না। এর পরিবর্তে পণ্যের সঠিক চাহিদা নির্ধারণ করে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। পাইপলাইনে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। ডলার জটিলতার কারণেই এ বছর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এরমধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে শুধু রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ফলে ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টন পাম অয়েল ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ সালে একই সময়ে এটির আমদানি বেড়েছে এবং প্রায় মোট ১২ লাখ মেট্রিক টন পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। এখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, কাস্টমসের এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয় বলে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে।
এদিকে রমজানের আগে যেহেতু অনেক সময় হাতে নেই, তাই যেসব পণ্য প্রতিবেশী দেশ বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সম্ভব, সেগুলোই আমদানি করা সম্ভব। আর যেগুলো দূরের দেশ থেকে আসবে সেগুলো আসতে আসতে রমজান মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে কোনও পণ্যের ঘাটতি নাই। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার দর নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজার দরের ওপর। সেক্ষেত্রে দেশীয় বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে।