ঢাকা ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

বাঙালি না বাংলাদেশি তীব্র বিতর্কে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

  • আপডেট সময় : ০৭:০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য -ছবি ইন্টারনেট

প্রত্যাশা ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ফের তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘বাঙালি বনাম বাংলাদেশি’ ইস্যু। শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য, পথসভা ও মিছিলের জেরে রাজ্যের একাধিক জেলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে-বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের হিন্দি না-জানা, দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশকে ‘বাংলাদেশি’ বলে অপবাদ দেওয়া ও প্রমাণপত্র চাওয়ার একাধিক ঘটনার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বির্তক।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দি বলায় দুর্বল, পোশাক ও উচ্চারণে ভিন্ন-এমন অনেক পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজে যাওয়া শ্রমিককে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই তারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। অনেক শ্রমিক আধার, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড না নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজে যান। ফলে পরিচয় প্রমাণ দিতে না পারলে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক বলে যুক্তি দিচ্ছেন একাংশ।

পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলার শ্রমিকদের উচ্চারণ ও নাম অনেক সময় বাংলাদেশের মতো হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলাটা শুধু অপমান নয়, এটা জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। হিন্দিভাষী হলে ভারতীয়, আর বাংলাভাষী হলে বাংলাদেশি-এই মানসিকতা মেনে নেওয়া যায় না।’

বিজেপি সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাম্বিত পাত্রের দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ একটা বাস্তব সমস্যা। কেউ ভারতীয় হলে তার পক্ষে প্রমাণপত্র থাকা উচিত। রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্ব না নিয়ে বিরোধীদের দোষ দিচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নাগরিকত্বের ছত্রছায়ায় রেখে ভোটব্যাংক তৈরি করছে।

বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত বাঙালিদের হেনস্তা করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাতে সুবিধা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই রাজ্যে এখন দুই শ্রেণি- একদিকে দেশপ্রেমিক বাঙালি, আর একদিকে অবৈধ বাংলাদেশি।’

এই অভিযোগকে ‘জাতীয়তাবাদী বিভাজনের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যারা এদেশে কাজ করে, বাঁচে-তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের সন্তান। আপনি কে হবেন তা ধর্ম দিয়ে নয়, মনুষ্যত্ব দিয়ে বিচার করা উচিত। বিজেপি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে মুসলিম-বিরোধী রাজনীতি করছে।বাঙালি মানেই হিন্দু বা মুসলিম নয়। যারা মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নিয়ে ধর্ম বা জন্মভূমি নিয়ে রাজনীতি করছে, তারা প্রকৃত শত্রু।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলার প্রতিটি মানুষের পাশে আছি- তা সে মুর্শিদাবাদ হোক বা মেদিনীপুর।’ এনিয়ে আলিপুরদুয়ার, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও মালদা জেলার বিভিন্ন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই ইস্যুকে ঘিরে প্রশাসনের কিছু অংশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুপ্রবেশের একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। বিএসএফের অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা ‘বাঙালি মুসলমান’ পরিচয়ে রাজ্যের গভীরে ঢুকে পড়ছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

বাঙালি না বাংলাদেশি তীব্র বিতর্কে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

আপডেট সময় : ০৭:০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ফের তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘বাঙালি বনাম বাংলাদেশি’ ইস্যু। শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য, পথসভা ও মিছিলের জেরে রাজ্যের একাধিক জেলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে-বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের হিন্দি না-জানা, দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশকে ‘বাংলাদেশি’ বলে অপবাদ দেওয়া ও প্রমাণপত্র চাওয়ার একাধিক ঘটনার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বির্তক।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দি বলায় দুর্বল, পোশাক ও উচ্চারণে ভিন্ন-এমন অনেক পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজে যাওয়া শ্রমিককে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই তারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। অনেক শ্রমিক আধার, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড না নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজে যান। ফলে পরিচয় প্রমাণ দিতে না পারলে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক বলে যুক্তি দিচ্ছেন একাংশ।

পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলার শ্রমিকদের উচ্চারণ ও নাম অনেক সময় বাংলাদেশের মতো হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলাটা শুধু অপমান নয়, এটা জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। হিন্দিভাষী হলে ভারতীয়, আর বাংলাভাষী হলে বাংলাদেশি-এই মানসিকতা মেনে নেওয়া যায় না।’

বিজেপি সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাম্বিত পাত্রের দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ একটা বাস্তব সমস্যা। কেউ ভারতীয় হলে তার পক্ষে প্রমাণপত্র থাকা উচিত। রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্ব না নিয়ে বিরোধীদের দোষ দিচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নাগরিকত্বের ছত্রছায়ায় রেখে ভোটব্যাংক তৈরি করছে।

বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত বাঙালিদের হেনস্তা করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাতে সুবিধা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই রাজ্যে এখন দুই শ্রেণি- একদিকে দেশপ্রেমিক বাঙালি, আর একদিকে অবৈধ বাংলাদেশি।’

এই অভিযোগকে ‘জাতীয়তাবাদী বিভাজনের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যারা এদেশে কাজ করে, বাঁচে-তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের সন্তান। আপনি কে হবেন তা ধর্ম দিয়ে নয়, মনুষ্যত্ব দিয়ে বিচার করা উচিত। বিজেপি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে মুসলিম-বিরোধী রাজনীতি করছে।বাঙালি মানেই হিন্দু বা মুসলিম নয়। যারা মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নিয়ে ধর্ম বা জন্মভূমি নিয়ে রাজনীতি করছে, তারা প্রকৃত শত্রু।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলার প্রতিটি মানুষের পাশে আছি- তা সে মুর্শিদাবাদ হোক বা মেদিনীপুর।’ এনিয়ে আলিপুরদুয়ার, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও মালদা জেলার বিভিন্ন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই ইস্যুকে ঘিরে প্রশাসনের কিছু অংশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুপ্রবেশের একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। বিএসএফের অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা ‘বাঙালি মুসলমান’ পরিচয়ে রাজ্যের গভীরে ঢুকে পড়ছে।